somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ওড়নার আত্মকাহিনী ........ :|

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্ম পুরান ঢাকার একটি কাপড়ের কারখানায় । জন্মের পর থেকে মা-বাবা কি জিনিস তা বুঝি না । তবে ভাই-বোন ব্যাপারটা বুঝি । আমার সাথে আমার মত দেখতে আরও অনেক রঙ-বেরঙের কাপড় তৈরি করেছিল ওরা । এরাই আমার বন্ধু-বান্ধব । এরাই আমার ভাই-বোন । তবে প্রথম দিনের কথা মনে পড়লে আমার এখনও হাসি পায় খুব । ঐ কারখানার লোকেরা একজন আরেকজনের হাতে আমাদের দিতে গিয়ে বলে, এই ওড়নাগুলোর ডেলিভারি কবে ? "ওড়না" । কি নাম দিলো ওরা আমাদের সবার ? শুনেই আমরা সকলেই হেসেছিলাম । কেমন জানি, উড়তে অনুরোধ করছে যেন ওরা । আচ্ছা, এভাবে আমাদের বেঁধে রেখে আমাদের উড়তে অনুরোধ করে লি লাভ ?

প্রথম যখন আমাকে আরেকজনের হাতে দেয়া হয়, মানে ওদের ভাষায় যেটি ডেলিভারি সেটা করলো বিক্রমপুরের ব্যবসায়ী জব্বার আলীর কাছে । সবাই তাকে সেট বলে ডাকতো । তাই তাদের দেখাদেখি আমিও সেট বলে ডাকা শুরু করি তাকে ।
আমার সেই সেট অনেক দয়ালু ছিল । সব ওড়না থেকে আমাকে প্রাধান্য দিয়ে আমাকে একেবারে দোকানের সামনে এনে সাজিয়ে রাখে । আমার গায়ের রঙ ছিল লাল আর সবুজের মিশ্রণ । লাল রঙ-টাকে কেমন জানি আমার অনেক ভালো লেগে গিয়েছিল, কারণ আমার প্রিয় বান্ধবীর পুরো গায়ের রঙটাই লাল । তবে দুঃখ এটাই ও আমার সাথে এখানে আসিনি । না জানি, কোথায় গিয়েছে । আর জীবনেও আমাদের দেখা হবে কিনা ।

আমাকে সেট যার কাছে বিক্রি করে, সেই লোকটি আমাকে দেখেই এক ঝলকে পছন্দ করে ফেলে । এমনকি আমাকে দেখার পর আর একটাও ওড়না দেখেও না সে । আমার দাম নাকি ৮৫০ টাকা । কে জানে, এই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি নাকি কম । আমার কোন ধারণা নেই । লোকটির মুখে আমি এত খুশি দেখেছিলাম যে আমার জীবনে আর কারও মুখে আমাকে দেখে এত খুশি দেখি নাই । লোকটি আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেল আমাকে । এতক্ষণে বুঝলাম, আজ লোকটির মেয়ের জন্মদিন । মেয়েটির নাম রিনি । মেয়েটি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । বাড়িভর্তি লোকজনের সামনেই লোকটি তার মেয়েকে গিফট করলো আমাকে । আমাকে পেয়ে মেয়েটির খুশি যেন উপচে পড়ছিল । সবার সামনেই নিজের গায়ের আগের ওড়নাটি সরিয়ে আমাকে গলায় পেচায় মেয়েটি । মেয়েটি পরীর মত সুন্দর । আর আমাকে যখন গলায় পেচাল, দেখলাম সবাই ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে । আমার মনে হল, ঐটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন ।

মেয়েটি পরেরদিনই আমাকে পরে ক্যাম্পাসে গেল । ক্যাম্পাসের সকলেই আমার প্রশংসা করলো । এত সুন্দর মেয়ে অথচ কোন বয়ফ্রেন্ড নেই মেয়েটির । তাই তো আমার জন্য মেয়েটির বাড়তি সময় ছিল । একটু একটু পর আমাকে ধরে মেয়েটি যেন আমাকেও ধন্য করছিল । কিন্তু সমস্যা ছিল অন্যখানে, মেয়েটি দেখতে না পেলেও, পিছন থেকে আমি দেখছিলাম ঐ ক্যাম্পাসেরই কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে শিস দিচ্ছে । তাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে, মেয়েটিকে পেলে যেন গোগ্রাসে খেয়ে ফেলবে তারা ।

আজ প্রায় এক মাসের কাছাকাছি রিনি নামক মেয়েটির কাছে আছি আমি । মেয়েটি আমাকে খুবই যত্ন করে । আমাকেই সব ওড়নার থেকে বেশি প্রাধান্য দেয় । কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে আমাকে পরে যায় । একদিন বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণে গেল মেয়েটি সন্ধ্যার দিকে । জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও সবাই আমার প্রশংসা করলো । জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল । এখন মেয়েটি বাড়ি ফেরার জন্য অটোরিকশার অপেক্ষা করতে লাগলো রাস্তায় দাড়িয়ে । কিন্তু রাস্তাটি কেন জানি জনশূন্য । হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, কোথা থেকে একটি মাইক্রোবাস এসে মেয়েটিকে উঠিয়ে নিলো । মেয়েটির চিৎকার শুনার মতও কেউ রাস্তায় নেই । মেয়েটিকে উঠিয়েই মাইক্রো টি ছেড়ে দিল । এরা ঐ ছেলেগুলো, যাদের আমি সেদিন মেয়েটির ক্যাম্পাসে দেখেছিলাম ।

এরপর ওরা আমাকে মেয়েটির গলা থেকে খুলে মাইক্রোর শেষ কোণায় চেলে মারে । এরপর যা হল, আমি আর দেখতে পাইনি । শুধু মেয়েটির চিৎকার শুনেছি । সূক্ষ্ম চিৎকার আর আর্তনাদ । আর কতগুলো পশুর পাশবিক হাসির শব্দ । এরপর অনেক অনেকক্ষণ পর আমাকে সহ মেয়েটিকে রাস্তায় ফেলে রেখে হায়নাগুলো চলে যায় । রাস্তায় পরে থাকা মেয়েটিকে দেখে রাস্তার কোন লোকজনই এগিয়ে আসিনি আর । মেয়েটি অনেক কষ্ট করে আমাকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছায় । এতক্ষণ চিন্তাগ্রস্থ বাড়ির লোকগুলোকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আহত মেয়েটি আমাকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় । ওদিকে বাড়ির লোকজন সকলেই যে দরজার কাছে এসে জড় হয়েছে, তা স্পষ্ট ।

এখন আমি ঝুলে আছি ঘরের এই সিলিং ফ্যানটির সাথে । আর আমার আরেক কোণায় ঝুলছে রিনির শরীর । হ্যাঁ, এই সেই রিনি । পরীর মতও দেখতে মেয়েটি আর সহ্য করতে পারেনি কিছুই । এই দুনিয়া তাকে সহ্য করার ক্ষমতা দেয়নি আর । তাই তো আজ সে প্রাণহীন । আমি আর কারও গলায় ঝুলতে চাই না । যদি পারতাম, আজ আমিও নিজেকে শেষ করে দিতাম রিনির মত করে । কিন্তু এই জগতে অনেকেই বেঁচে থাকে শুধু কষ্টগুলোকে দেখার জন্য । তারা না পারে মরতে আর না পারে বাঁচতে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×