মুখবন্ধঃ আসলে নিজের কবিতাগুলো একসাথে গোছানোর মত সলস আমি কখনই ছিলাম না। বলা যায় বৃষ্টি কন্যা-র অতি উৎসাহের মান অভিমানে রূপান্তরই এই পোস্টের মূল উপস্থাপক। একতরফা ভাবে তার ঘাড়ে দায় চাপানো ঠিক না। সানন্দে স্বীকার করছি; পোস্ট লিখার সময় আমি যে আনন্দ পেয়েছি, তার জন্ম এই ভুবনে না, অন্য কোথাও। সুতরাং সেই আনন্দের কৃতিত্বও তার প্রাপ্য। ব্লগে কিংবা অব্লগে লিখা অনেক কবিতাই দিয়েছি এখানে। অনেক কবিতা হারিয়ে গেছে সংগ্রহের ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম বলে। যাই হোক কি আর করা! কবিতায় কথা হোক!
১. মেঘপুরাণঃ
এই কবিতাটি কোন এক ঝড়ের রাতে লিখা। তুমুল বাতাসের ভেতর বারান্দায় বসেছিলাম, হঠাৎ মনে এলো লাইনটা 'মাঙ্গলিক জল তাড়া করে ঘরে ফেরে সে মেঘপুরাণ'। এই কবিতাটা আমার কাছে অন্যরকম, কারণ এটা লিখার সময় আমাকে এক মুহূর্তও থামতে হয়নি। আমি জানিনা কিভাবে শব্দগুলো আমার কাছে এলো! শুধু মনে আছে-ঘাড় গুঁজে লিখছি...লিখছি...লিখছি...
মেঘপুরাণ
মাঙ্গলিক জল তাড়া করে ঘরে ফেরে
সে মেঘপুরাণ।
অর্ফিয়াসের বাঁশির শব্দে
ঘুম ভাঙ্গা তাণ্ডব; ইতিহাসের সময় লেহন
অথবা অশরীরী দেবতা
(পোসাইডেন)
সগৌরবে পাড়ি দেয় অতলান্তিক।
সুন্দরীরা ভীড় করেছে বুনোজলে
আর
মর্ত্যলোকে প্রমিথিউস
বড় বাড় বেড়েছো! মানুষেরে আগুন শেখাও!
সভ্যতা বুকে নিয়ে
অলিম্পাসও হারিয়ে যায়;
পড়ে থাকে মেঘপুরাণ।
(ঝড়ের রাতে বজ্র হয়ে ঝরে সে)।
২. অতন্দ্রাণুঃ
আমি মিথ পাগলা মানুষ। তার মধ্যে গ্রীক মিথের উপর দূর্বলতা ছোটবেলা থেকেই। পুরাণ নিয়ে কবিতা লিখা সহজ কিছু না। বিনম্র ভাবে বলছি, আমার এটাও হয়তো তাই কবিতা হয়নি! এলোমেলো লিখা হিসেবেই পাঠককে পড়ার অনুরোধ করছি।
অতন্দ্রাণু
একটি ফুল নার্সিসাস!
নরোম পাপড়ি মেলে ঝুঁকে
বয়ে চলা পাহাড়ি নদী
আর বনঝাউ এর ছায়ার ফাঁকে উঁকি দেয় সফেদ ফুল
নার্সিসাস।
দেবীর ক্রোধের কৃপা
কিংবা আরাধনায় ছেদ
মিশেল গন্ধ বুকে নিয়ে দোলে শীতের হাওয়ায়
সে-ও তো মানুষ ছিল
দূরের মানুষ।
ফুল হয়ে কাছে ফোটে
হাওয়াই শকটে চলে পুনর্জন্মের পরাগায়ণ
আহা! ফুল নার্সিসাস!
দেবীরও হলো না, মানুষেরও হলোনা
তথৈবচ দিন। (হতে পারে)
পুন্নাগের নিঃশ্বাসের মত হিমরাত্রি
শতাব্দীর চিহ্ন বুকে
জেগে থাকে অতন্দ্র;
ত্রিজোড় পাপড়ি মেলে নার্সিসাস!
৩. বর্ষামঙ্গলঃ
আমার বর্ষামঙ্গল সিরিজটা খুব প্রিয়। বলা যায় এর প্রতিটি লাইনই আমি বৃষ্টির ফোঁটার মত অনুভব করেছি। বর্ষা আসা থেকে শুরু করে চলে যাওয়া পর্যন্ত মোট দুমাসে লিখেছিলাম চারটি খণ্ড। এই পর্বগুলোতে সেই আমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। জানিনা পেরেছি কিনা!
বর্ষামঙ্গল-কথক পর্ব
আচানক নেচে ওঠে মন।
ঘুম পোকাদের দৌড়াত্ম্য ঘোচে; মাঝরাতে আকাশ হাতড়ায়।
মেঘপিয়ন বুঝিবা পথ ভুল করেছে!
পলকে চোখ ছুটে যায় এপার-ওপার আকাশে
ঠিক যেন দৃষ্টির উল্কায় চিরে দিতে চায় মেঘদূতের মৌনতাকে।
গৃহী মন
হঠাৎ বান ডাকে নৈঃশব্দের-
ইচ্ছের মেঘমল্লা চুরি করে নিয়ে আসে সব তারাদের;
স্বাতী, বিশাখা, শতভিষা, অরুন্ধতি, চিত্রলেখা, নচিকেতা
তারপর ওদের নিয়ে যত্ন করে ফোঁটা বানায় বৃষ্টির।
শব্দের এক একটি ফোঁটা মিশে যায় ছন্দে-
তারপর বর্ষা শুরু হয় নক্ষত্রের রাতকে স্নান পোশাক পড়িয়ে।
কবিতা লেখা হয়,
বৃষ্টি শেখা হয়,
পূর্ণিমাও।
কথক চোখের ভাষায় খুঁজতে থাকে আরো মেঘ
এই বর্ষন শেষ হবার আগেই বানাতে হবে ধারাপাত।
কথক তারাদের খোঁজে আবার হাত বাড়ায় নিঃসীম অন্ধকারে...
বর্ষার নক্ষত্র...বৃষ্টিতে ভিজে ছাই।
বর্ষামঙ্গল-মেঘ পর্ব
শেষ বিকেলের ক্লান্ত আলোটা চুরি যেতে আর একটু বাকি।
চোখ ছড়িয়ে খোঁজা
আর
কনে দেখা আলোর ফাঁকতালে
পুরনো দিনের গানের ছুতোয় হয়তো বৃষ্টির কিছু স্মৃতি-
ছন্দে নেচে ওঠা সময়।
শালপাতা ভিজছে জলে
ভিজছে মিশকালো রাস্তা, আর
তার উপর উবু হয়ে থাকা গাছের সারি;
বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ
এপার-ওপার দুলতে থাকা নগর
সেই মেঘতলায় এসে জড়োসড়ো।
গায়ে পড়ে ঝগড়া করার মতো বাতাস আর খড়কুটোর দল
ঠিকানা বদলে যাযাবর যেন শেষচিহ্ন আঁকা কোন ঝড়ের গায়ে-
এমনি।
সব মেঘের জন্ম বৃষ্টির শিকড়ে
তার প্রতিক্ষায় প্রাচীন-
পারিতোষিক ভাবে; কিসের মাধুকরী?
জলের ঋণ কি আর শুকোয়!
বোকা মেঘ,
কত ঝরবে আর অঝোরের জেদ ধরে?
বর্ষা আসবেই।
তুমি ভাসবেই।
বর্ষামঙ্গল-বৃষ্টি পর্ব
বিন্দু বারি-বৃষ্টি বারি মেঘ
আকাশতলায় লেখা, ঘাসের ডুবে দেখা
জলের অনুচ্ছেদ।
আমার জলজোছনার জেদ-
অঝোর জলে গা পোড়াব;
কার্নিশে বসে ভেজা শালিকটা, ঠিক যেন বৃষ্টির ভাস্কর্য।
হিংসে হয়।
মাটির তলায় কীট-পতঙ্গের আহাজারি
আর
শিশুদের বৃষ্টি ভেজার উচ্ছ্বাস-
জলপতনের শব্দ ছুঁয়ে পাড়ি জমায়।
জলদ জল পাড়ি জমায় আরো ঝরবার প্রত্যাশায়।
বেতফলের মত গাঢ় ঘোলাটে আকাশ-
বৃষ্টির ফোঁটায় ভর করে নেমে আসে মাটির বুকে।
তখন বৃষ্টি হয়।
তখন বর্ষা বলে।
নদী, ছোটো তুমি ঘুর্ণির মন্থনে;
জল চলে যাও সমুদ্রসঙ্গমে!
বর্ষামঙ্গল-তিরোধান পর্ব
প্রতিপাদ মেঘ না ডাকতেই সে
ঘুরে ঘুরে নামতে থাকে।
ঠিক যতটা নামে, তার চেয়ে বেশি টেনে নামায় পৃথিবী
সমুদ্রাশ্রয়ী গড়িয়ে চলে ফের সমুদ্রে
ফিরে চলে আবার জমাট বাঁধতে।
আকাশে উড়বার খুব শখ তার
জানে সে; শেষটা খুব আনন্দের-
ভাসতে ভাসতে গড়িয়ে পড়া,
জলদ বলে, 'বসুমতি সিক্ত হবেন,
তাতে তোর কি?'
মেঘ বলে, 'আমি যাই হইনা কেন-
শেষ পর্যন্ত আমি আমি'ই থাকি।'
আর তৃষিত মানুষ; তার এই
'তিনি' হয়ে থাকার বিপরীতে-আমরা জানি বর্ষা।
মেঘ তুমি আসছি বলে শুন্যে উধাও
শুন্য থেকে ঝরে পড়ে, শুন্য করে যাও।
বর্ষা চলে গেছেন।
তবু বলে রাখি, আগাম জানিয়ে গেছেন-
বছর বাদে তিনি আবার আসবেন। গোপনে বলে গেছেন,
'কিছু বৃষ্টি রেখে গেলাম
মাপা ধানের দোহাই দিয়ে নামিয়ে নিও।'
আমার হাতে মেঘের প্রসাদ
বর্ণমালা তৈরী হয়ে আছে
বর্ষার সঞ্চয়ে শুরু হবে আমার কবিতা লেখার উৎসব।
তার ফাঁকে মেঘবিলাস!
৪. আবছায়াটাই লাগছে ভালোঃ
আমার এক বন্ধু, মাত্র তিন মাস যার সাথে পরিচয়, হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলো প্রবাসে। যাবার আগে আমাকে লিখে গেলো দীর্ঘ একটি চিঠি। বললো, তোর কবিতার খাতা নিয়ে যাচ্ছি। ওগুলো আমার কাছেই বেশি যত্নে থাকবে। সেই বন্ধুর সাথে প্রায় নয় বছর পর দেখা নেটে। আমাকে আমার কবিতাই পাঠাচ্ছে লিখে। সেদিন অনেকক্ষন কথা বললাম তার সাথে। এই কবিতাটি তার সাথে সেই কথোপকথনের কিছু অংশ নিয়ে লিখা।
আবছায়াটাই লাগছে ভালো
আমার কোন অনির্বাণ নেই-
আছিস তুই।
খুঁজে পাওয়ার আনন্দটা যখন চোখের সামনে দুলতে থাকে,
তোর হারিয়ে যাবার ঘটনাটা, দুঃখ কিংবা দুঃখতরো থেকে-
দুঃখ বিলাস হয়ে যায়
তোকে বললামঃ কেমন আছিস?
তুই বললিঃ যত্নে আছি-যতোটা
যত্নে থাকলে দুঃখ পাওয়া যায়।
আমি বললামঃ তারপর?
তুই বললিঃ দুঃখই তো মানুষের স্থায়ী সুখ!
জানি খুব ছড়ানো সময় তোকে পাইনি।
দূর পাল্লার ট্রেনের মত তুই
কিংবা,
কোন ধূমকেতুর মতো;
স্থবির দৃষ্টিটা বোধের গায়ে হেলান দেবার আগেই যেন উধাও!
বুঝলাম, আগের মতই আছিস।
নিজেকে গোপন রেখে প্রকাশ করিস আবছায়ার মতো-
দেখা যায়, তবু দেখিনি বললে মিথ্যে বলা হয়না।
ধূলো পড়া সময় গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে আমাকে।
তার ফাঁকে কিছু পুরনো সময়;
বন্ধু,
তুই বললিঃ লিখছিস এখনো?
আমি বললামঃ হ্যাঁ।
তুই বললিঃ ...
নাহ। তুই কিছুই বলিসনি।
চুপ করে ছিলি।
কি জানি! হয়তো ভাবছিলি, এই পাগলটা এখনো পাগলামী শেখেনি!
আর আমি ভাবছিলাম-
তোর শেষ কথাটা;
"যত্নে থাকিস।
যতোটা যত্নে থাকলে দুঃখ পাওয়া যায়।"
৫. রাত পোহালো ঘাটেঃ
এটি পুরোটাই একটি মিস্টিক কবিতা। বলা যায় নিজের দ্বিত সত্ত্বাকে নিয়ে লিখা। হতে পারে তা কোন মানবীর প্রচ্ছায়া; কিংবা অন্তঃস্বারশূণ্যতা। কি জানি!
রাত পোহালো ঘাটে
শালুক ডোবা জলে,
হাত রেখেছি শ্যাওলায়।
পানিফলের গন্ধ যেমন ঢেউয়ের তালে নাচে;
নাচে আমার হাতের রেখা
তার তফাৎ এ তুমি
আমি তোমার আঁচলে।
পদ্মবিলের পাড় ঘেঁসে তার গহীন বসবাস
বসনে তার বাওকুড়ুনি বাতাস।
ঘুরতে ঘুরতে নামলো পাতায় ভেসে
আমায় আপন করো, আপন করো
এই না বলে জলের ভিতর ডুব!
ডুব দিল সে শালুক ডোবা জলে
তথৈবচ ইচ্ছে আমার চুপ।
আদর এ চৌকাঠে,
আমার রাত পোহালো ঘাটে।
৬. স্নানঃ
সিলেটের আম্বরখানার আল-হাবিব রেস্টুরেন্টে এক বন্ধুকে পাকড়াও করলাম, খাওয়াতে হবে। অনেক জোড়াজুড়ির পর সে রাজি হলো, তবে এক শর্তে; কবিতা লিখে দিতে হবে। সামনে রাখা ন্যাপকিন আর ওয়েইটারের কাছে চেয়ে নেয়া কলম- এদুটো দিয়ে লিখা হলো কবিতা। এক অর্থে কবিতা লিখে এটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ উপার্জন।
স্নান
ক্রন্দসী!
আজ তুমি বরষা আমার।
তোমার চোখের কোলে অবারিত বারিধারা
(জেগে যাওয়া বৃষ্টিতে)
নীপবন ভেসে যাক জলে;
যেন তুমি থেমনা।
এই দেখ আমার কাছেও আছে-
এক বিন্দু মেঘ
একচিলতে রোদ
সামান্য আকাশ...
এসোনা,
দুজনে মিলে রংধনু বানাই!
৭. তুই পাখি ভাল থাক-ক্রন্দনেঃ
আমার বন্ধুর মন খারাপ। সে কে একজনকে চেয়েছিলো, কিন্তু পায়নি। একদিন খুব কাঁদলো সে। আমার সামনে বসে সে যখন তার না পাওয়ার কথা বলছিলো, আমি ওকে কান্না থামানোর বদলে বলেছিলাম; তুই কাঁদ, কাঁদতে থাক। যতক্ষণ তোর নদীটা না ফুরোয়, কেঁদে যা। তাকে একা রেখে আমি চলে এসেছিলাম। সব কান্না থামাতে নেই। কিছু বিশুদ্ধ কান্না থাকনা বেহিসেবী জীবন জুড়ে!
তুই পাখি ভাল থাক-ক্রন্দনে
পাখি ভাল থাক তুই,
ভাল থাক।
মাথার দোহাই পাখি, তুই ভাল থাক
নরোম পালক জুড়ে বেহিসেবী ওম,
বড় হয়ে উড়ে গেছে শেষ ছানাটাও;
এই অবসরে,
গোবরে ঠেঁসে থাকা জোনাকী পোকার মত
কালো ঘর আলো করে ভাল থাক।
তুই পাখি ভাল থাক নিজের মতন
কালবোশেখীর দিনে
প্রাণ হাতে থতমত চুপচাপে,
বৃষ্টির ঝাপটায় খুলে গেছে একটি কুটো
ভেজা ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে-
নদীর স্রোতের মত ভেজা ঘরে ভাল থাক।
অথবা অসাবধানে, ভেঙ্গে যাওয়া ডানাটাতে
ঠোঁট গুঁজে ডুকরে;
ভাঙ্গা নীড়ে সেলাই ঠোকর
ভাল থাক চোখ বুজে এই প্রাসাদেই
ভাল তুই থাক তবু, এই ভাল থাক।
তামাদি হিসেব ভুলে
ভাল থাকা লিখে রাখ ছেঁড়া তমসুকে।
হারিয়ে যাবার নেই
তবু জ্বেলে রাখ ঘরে ব্যস্ত উনুন,
অনাবাদী দু'টি পায়ে মাকড় পোকা
ছমছমে উঁচু ডালে ভাল থাক ভূতের মতন।
প্রাণের শব্দ বেচে, কিনে রাখ গোঙ্গানী
ভাল থাক তবু-একা ভাল
ভাল একা তবু থাক, তুই ভাল থাক।
তাও যদি না পারিস-ভুলে থাক
বাতাসের স্পর্শ নিয়ে; রোদের গন্ধ,
লায়েক ছানার শোকে উপবাসে রাত্রি
ওই নিচে দুষ্ট শিশু,
তার হাতে গুলতির ভুল নিশানায়
ফিরে আসে-স্বস্তিতে;
শ্বাস ফেলে পাশ ফিরে ভাল থাক।
শিশিরের শব্দ ঢাক আজন্ম ক্রন্দনে
পশলা বৃষ্টির পরে
হাহাকার জুড়ে দিয়ে ভাল থাক।
ভাল থাক পাখি তুই, ভাল থাক
এমনি নিরব তবু মুক্ত আলিঙ্গনে
বেঁচে বেঁচে মৃত দেহে-
ভাল থাক তবু পাখি ভাল থাক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪