somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইসলাম ঈভান
আমি আমাকে বুজে শুনে এই ফ্ল্যাট ফর্মে এসেছি। এখানে সবাই আসতে পারে না। সবাই ব্যবহারও করতে জানে না। আমি বুজেছি, আমি জেনেছি তারা আমার বাড়িয়ে যাওয়া হাতকে থামাতেই কটুক্তির কথা বলে শুধুমাত্র ব্লগ বলে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নীতির পরিবর্তন।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে, জি স্কুল/ ইংলিশ ভার্সনে পড়ার সুবোধ্য আমার হয় নাই। তাই পাড়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোট প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে হেলে দুলে চলে যেতাম। গিয়ে দেখতাম পোলাপাইনে ক্লাসের মধ্যে চুলটানাটানি আর নায়ক জসিম/ রুবেলের ডায়লগ রির্য়াসেল করতো। মনে করতাম গত ক্লাসে কি এই ধরনের কোনো কিছু পড়াইছিলো আমাদের বাসার স্যার। কিন্তু কি করে মনে করবো ক্লাস ছুটি হওয়ার অনেক আগেই তো প্রাকৃতিক বাগানে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির কিছু ফল মূল আহরন করতে হয়। সেই সুবাধে গত ক্লাসের শেষে কি হতো সেটা আর মনে করার কোনো প্রয়োজন হতো না।

দেখতাম মেয়েরা এ ওর চুলের উকুন মারতেছে, উকুন মারামারির পাশাপাশি গপ্প গুজব বলাবলি করতেছে। রাবেয়া আজকে আলমারির ভিতর থেকে গত ঈদের সাদা জামাটা বের করে পরে আসলো। জমিলা তার মাথার উকুন মারতে গিয়ে তার সাদা জামার মধ্যে মেরে রাবেয়াকে দেখিয়ে বলল দেখ দেখ তোর সব রক্ত খেয়ে পেলছে। আর এ দিকে রাবেয়া ছড়া বড়া হয়ে জমিলার দিকে তাকিয়ে বলল তুই আমার নতুন জামায় উকুন মারছচ, খাড়া আজ তোর একদিন কি আমার .. এই বলে দুইটা চুলটানা টানি প্রতিযোগিতায় নেমে গেলো। আর আমরা বাচ্ছারা গোল হয়ে দাড়ীয়ে দাড়ীয়ে তাদের খেলা দেখতেছি। তবে দুই জনেরই আত্মবিশ্বাস এতটাই উর্বর যে কেউ হারতে রাজি নয়। তাই তাদের চুল ছোলাচুলি চলছেই।

আর এ দিকে দেলোয়ার নায়ক জসিমের প্রবাদে বলতেছে ;- না না রাবেয়া তুই ওরে চারবি না। তোর সাদা জামা পুরা রক্তাক্ত বানাই পালাইছে তুই এর প্রতিশোধ নে।
কবির হুমায়ুন ফরিদীর স্বরে বিলেনি কায়দায় বলে উঠলো :- জমিলা তুই ওরে মার আরো মার মাইরা লাল বানাই পেল, চুল উঠাই পেল। পোলাপাইনের সরোগলে পুরো ক্লাস রুমটা যেনো যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে গেলো। পাশেই ছিলো স্যারদের অফিস রুম। একজনই স্যার আসছিলেন তাও আবার তিনি ম্যাম, মরিয়ম ম্যাম। তিনি এসেই মহিলা পুলিশের ন্যায় সবাইকে বেদম পিটান পিটাইলো। রাবেয়া আর জমিলার অবস্থা দেখে তিনি আরো রেগে জিজ্ঞেস করলেন কে কাকে মারছিলো? কিন্তু এখানেও তর্ক এ বলে ও আগে ও বলে এ আগে মারছে, তাই আবারো দুইটারে ইচ্ছা মতন পিটাইলো।
রাবেয়া আর জমিলার অবস্থা দেখে ক্লাসের সবাই চুপ। এমনিতেই চুপ না সবাই আমার মতন পিটে হাতে উপরে নিচে ডলতেছে। ম্যামের মাইরের ছোটে রাবেয়া আর জমিলা পুরো লালচে কালো হয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলো। মেয়ে দুইটাই ফর্সা ছিলো। ম্যামের বেতের আঘাতে তাদের হাতটা কালচে হয়ে গেছে.. এলোপাতাড়ি মারার কারনে হয়তো, না অবশ্যই তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এই রকমই হইছিলো।
আমাদের ক্লাস শুধুমাত্র একজন স্যারই নিতেন তিনি হলেন বাসার স্যার.. আল্লাহ তাকে আজও বাচিয়ে রেখেছেন। এমন একজন স্যার ছিলেন যিনি সব বিষয়েই পারদর্শি। বাংলা, ইংরেজি, গনিত, ইসলাম শিক্ষা কোনো বিষয়ই বাদ নাই উনি আমাদের ঐ ক্লাসের সব বিষয়ই পড়াতেন। যে দিন যতক্ষন পারতেন ততক্ষনই পড়াতেন, মানে উনার একটাই কাজ শুধু ঘুম আর ঘুম। উনি একজন ঘুম প্রিয় মানুষ। তো ম্যাম বললেন আমাদের স্যারকে বাসা থেকে ডেকে আনতে.. চলে গেলাম আমরা কয়জন স্কুরের পাশেই বাসার স্যারের বাড়ী। গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে আসলাম। এসেই উনি প্রতিদিনের মতন বলতে লাগলো :- সবাই পড় অ তে অজগর।
পোলাপাইনও বলতে লাগলো অ তে অজগর।
আবার বলতেন অজগরটি ঐ আসছে তেড়ে।
আমরাও বলতাম অজগরটি ঐ আসছে তেড়।
আজগর পাটওয়ারি দরজার পাশে দাড়িয়ে ভাবতেছে এই মুহূর্তে কি ভিতরে যাবে কি যাবে না। অন্য দিন কিন্তু একটা লুঙ্গি গোচা মেরেই ভিতরে চলে আসতো। আজকে আসচেনা তার কারন নিশ্চই আপনারা বুজতে পারচেন। তো আমাদের বাসার স্যার কিন্তু আবার কথা সূলভ মানুষ। যার তার সাথেই কথা বলতে পছন্দ করতেন, তার উপর আজগরের মেয়ে আমাদের সাথেই পড়ে। তাকে নতুন করে পরিচয় করার প্রয়োজন নাই। ঐ যে চুল টানাটানি প্রতিযোগীতার সেই জমিলাই আজগর সাহেবের মেয়ে। আজগর সাহেবকে দেখেই আমাদের বাসার স্যার দরজায় গিয়ে সেই দাত কেলিয়ে হাসি দিয়ে কতোপকতন শুরু হলো এক পর্যায়ে জমিলার শুস্ক মুখটা দেখে তার বাবা ভিতরে এগিয়ে আসলো কিছু বলার আগেই আমাদের বাসার স্যার বলে উঠলো, মেধাবী ছাত্রী মেধাবী.. ও পারবে পড়ালেখায়ও ভালো।
বাসার স্যার- দেখি মা বলতো অ তে কি হয়।
জমিলা কেদো কেদো স্বরে অ.অ..অজ.হু হু ..গর। অজগররররটি ও ও ঐ আসসছেছে তেড়ে হু হু হু। বাসার স্যার বলল দেখলেন মেধাবী ছাত্রী। আর তার বাবা আজগর পাটওয়ারি বলল পড়ালেখা না পারলে দিবেন কসাইয়া ফিডা। এই বরে আজগর সাহেব পস্তাগমন করলেন আর বাসার স্যার চেয়ারে হেলান দিয়ে আমাদের পড়তে বলে গুমিয়ে গেলেন। আর আগের মতন পারবেজ স্যারের চুর বিহীন টাক মাথা মাসাজ করতে লাগলো। স্যারের ঘুম ভেঙ্গে গেলে স্যার বলতো এটাই বাড়ি থেকে পড়ে আসবি। আর তাসলিমা বলতো স্যার ইংরেজি, অংক উনি বলতেন আগের গুলো। উনি চলে যেতেন আবার বাড়ী। গিয়ে হয়তো আবারো ঘুমিয়ে পড়তেন। এই ভাবেই কাটিয়ে দিয়েছিলাম আমার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা। তবে বাসার স্যার ক্লাস থ্রীর উসলাম শিক্ষা পেতেন আর ক্লাস ফোর এবং ফাইবের রুমের সামনেও যেতেন না।

আজ আমাদের দেশের সেই শিক্ষা ব্যাবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে এখন আর ছোট ছোট কচি সোনামনিদের উপর বেত্রাঘাত চলে না। এখন প্রত্যেকটা সরকারি স্কুলের পাঠদানে শিক্ষকদের উচ্চতর ট্রেনিং নিতে হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের চুলটানাটানির প্রতিযোগিতা নয় এখন তাদের বিনোদনের জন্য সাংসৃতি বিষয়ক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য এখন নির্দিষ্ট সময় ব্যতিরেকে বাসায় গিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। তারা মানে শিক্ষক মহোদয়গন এখন চাইলেও সময় অপারগ হতে পারবেন না, কারন গতকাল সংসদ অধিবেশনে পাশ হয়েছে সরকারি শিক্ষক এবং ডাক্তাররা নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে স্কুলে আসা এবং যাওয়ার খেলাপ হলে তাকে চাকরি চ্যুত করা হবে এবং নতুন চাকরিজীবি নিয়োগ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবেন।
আমি আশা রাখি আমি যা পাই নাই আমার ছোট ভাই বোনেরা যেনো তা থেকে বঞ্চিত না হয়, তারা যেনো সঠিক শিক্ষা পেয়েই আগামি দিনের জন্য গড়ে উঠে। তারা যেনো বাসার স্যারের ঘুমের মধ্যে নিজেদের প্রাপ্য শিক্ষাটাও হারিয়ে না পেলে। তাই এই রকম একটা সিদ্ধান্তে একটা সমাজ, একটা গোষ্ঠী তথা একটা জাতি সনির্ভর সুস্থ মানসিকতায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে এটাই আশা রাখি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×