somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মা হিসেবে, যখন আমি নিজেই লজ্জিত!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুপ্রীতি ধর: না, কোনো ক্ষোভ হচ্ছে না, রাগও হচ্ছে না, অন্য সময়ের মতোন বিক্ষোভে ফেটে পড়তেও ইচ্ছে করছে না, কেবলই কষ্ট হচ্ছে। ছবিটা দেখুন, আমি নিশ্চিত, আপনাদেরও কষ্ট হবে। বুকের ভেতরে দলা পাকিয়ে উঠবে সেই কষ্ট। নাড়ির টানে টান পড়বে ছবিটা দেখে।
একটা বাচ্চা ছেলে আর তার বন্ধুরা এখানে যা করছে, তা নিয়ে কিছুই বলার নেই। নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি দেখার পর থেকেই। ছেলেটার প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম, সে যা লিখেছে ছবিটা শেয়ার করে, তা বলার মতোন ভাষা বা পড়ার মতোন কান আমার নেই। বন্ধু আতিকা রোমা ছবিটি শেয়ার করার পর থেকে কী এক বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে পুরো মন। ভয়ে ভয়ে ছেলের বন্ধুদের চেহারাগুলো দেখলাম, আমার পরিচিত কেউ নেই তো এখানে? কী হতো পরিচিত থাকলেই? আর এই যে ছেলেটা, ও কী আমার পরিচিত না? ও কী আমার ছেলে না? ও তো কোনো মা-বাবারই সন্তান। ও এই সময়ের, এই সমাজেরই সন্তান, এই রাষ্ট্রের সন্তান। তাহলে এই প্রজন্মকে আমরা কীভাবে বড় করছি?
প্রোফাইল থেকেই জানলাম, সে জাগো ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত, তার মানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সমাজের কাজ করছে সে। তাহলে এই ছবিটা? এই বাচ্চাটার নৈতিক জায়গাটা কোথায় তৈরি হচ্ছে? সে পড়ে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। স্কুল-কলেজগুলোতে এখন আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আসলে সমাজের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যখন অবক্ষয় ঘটে, তখন তার থেকে রেহাই পায় না কোনোকিছুই। এর মধ্য দিয়েই কাঁটা বেছে বেছে পথ চলতে হচ্ছে আমাদের। সন্তান মানুষ করা এক্ষেত্রে আরও কঠিন। বড় করা যায়, মানবিক ক্ষুধাগুলো তো আমরা মেটাতে পারছি না, তাই তাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই।
এ নিয়ে জাগো ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া গেছে। এটা আশা জাগায়। কিন্তু ছেলেটিকে ডেকে তাকে অপমান করে ফাউন্ডেশন থেকে বের করে দিলে এর সুরাহা হবে না। আমরা তো তা চাইও না। বরং এতে হিতে-বিপরীত হবে।
ও তো একা না, ওর মতো এক বিশাল প্রজন্ম আজ এভাবেই বেড়ে উঠছে। এরাই হয়তো বাসায় লক্ষ্মী ছেলেটি হয়ে থাকে, হয়তো জুম্মার দিনে জায়নামাজ নিয়ে নামাজেও যায়। মা-বাবা ভাবেন, আহা, আমাদের ছেলেটা সহি পথেই আছে। তারা হয়তো জানেও না, তাদের ছেলে বা ছেলেরা কী করছে!
আমাদেরই এক বন্ধু ছেলেটির প্রোফাইলে গিয়ে ‘নোংরা’ কভার পিকটা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সে উত্তর দিয়েছে, ‘নোংরামি আর ফান এর মধ্যে পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করুন, যদি পারেন’। আমি ওর ঔদ্ধত্য দেখেও থ হয়ে গেছি। আমি জানি, এই বয়সটা কোনকিছু না মানারই বয়স। তাই বলে সে ‘ফান’ হিসেবে নারীর শরীরকে বেছে নেবে, তা মাটিরই হোক বা প্লাস্টিকেরই হোক। তাহলে তো রক্তমাংসের নারীর শরীর ছুঁতেও সে পিছপা হবে না।
তবে কী এভাবেই জন্ম নেয় গণধর্ষক? গণধর্ষণের খবর পড়ে আমার তো বার বারই মনে হয়, এ কী করে সম্ভব? একজনের না হয় মাথা খারাপ হয়েছে, একজন হয়তো খারাপ, তাই বলে সবাই মিলে একই সময়ে খারাপ হয় কী করে? ‘ফান’ করে? নারীকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায় ফান হিসেবে? এই বয়সেই ও শিখে গেছে তা? তাহলে বাকি জীবনটা কীভাবে যাবে ওর?
একজন এই লেখার নিচে কমেন্ট করেছেন এই বলে যে, এই সেক্সুয়ালিটি আগেও ছিল, এখনও আছে। আমার লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই বলেও ঊনি মন্তব্য করেছেন। হয়তো বা। আমি ভাবছি ঊনার মন্তব্যটা নিয়ে। হ্যাঁ ছিল। আমাদের সময়েও এরকম ছিল, তার আগেও ছিল, হয়তো পৃথিবী সৃষ্টির সময়ও ছিল, যুগে যুগেই ছিল। হয়তো তার প্রকাশটা এরকম ছিল না বা প্রকাশ হলেও আমরা রিঅ্যাক্ট করতে জানতাম না। জানি না।
যৌনতা আমাদের জীবনেরই অংশ। একে অস্বীকার করে তো আর জীবন এগোবে না। বরং একে সঠিক চর্চার মাধ্যমেই সমাজ বিকশিত হবে। এখন কথা হচ্ছে, এই যে ছেলেরা ‘ফান’ হিসেবে একটা স্ট্যাচুর নারী শরীর বেছে নিল এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করলো, আর বন্ধুত্বকে নারীর স্তন আর স্তনের বোঁটার সাথে তুলনা করলো, এটা কেমন হলো? এটা কী ও শুধুমাত্র বিনোদনের অভাব থেকেই করেছে? বন্ধুত্বের তুলনা দিতে হলো নারীর শরীর দিয়ে? এ কেমন শিক্ষা ওর? কেউ কী বলবেন আমাকে? একজন সাংবাদিক হিসেবে না, স্রেফ একজন ‘মা’ হিসেবে আমি জানতে চাইছি।
আসলে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতাই এর মূল কারণ। দেশে কোনো সুস্থ শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা নেই।আমাদের সময়ে কত ধরনের সংগঠন ছিল, আজ এর একটিও বেঁচে নেই, মধ্যবিত্ত সমাজ, যারা এসব সংগঠন আগলে রেখেছিল নিজেদের চর্চা দিয়ে, তারা এখন এসবের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। তারাও এখন করপোরেট কালচারে প্রবেশ করেছে শ্রেণী বিন্যাসটা ঠিক রাখতে। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা, মানে আমাদের সুস্থধারাটি। আর এর অন্যতম শিকার হচ্ছে এসব প্রজন্ম। তাই ওরা এসব ছবি তুলেই ক্ষান্ত হয় না, তা আবার পাবলিকের কাছেও তুলে ধরে। যেমন গণধর্ষণের ভিডিও চিত্র ওরা ইউটিউবে দিয়ে দেয়, তেমনি। কোথায় পার্থক্য?
তারপরও বলছি, আমরা চাই এই ছেলেটি এবং তার বন্ধুদের কাউন্সেলিং হোক। এদেরকে মানবিক শিক্ষা দেয়া হোক, সম্মান করতে শেখানো হোক, নারীকে শ্রদ্ধা করতে শেখানো হোক। কিন্তু কে করবে? কে দেবে? কে নেবে সেই উদ্যোগ?
তথ্যসূত্র: এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×