somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মজা-গুন্ডালুল ৩৮

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বান্ধবী একবার আমাকে জানালো সে খুব বিপদে আছে। বান্ধবী খুব ন্যাকা এবং প্যানপ্যানানি টাইপের মেয়ে। কোন এক ছেলে তাকে ফোন দিয়ে বলেছে তার সাথে ফ্যাকাল্টির সামনে দেখা করতে। সেই ছেলেকে দেখে সে অনেক ভয় পেয়েছে। ওই ছেলে নাকি গলায় শিকল পরা, হাতে চুড়ি পরা এবং চেহারা নাকি গুন্ডা গুন্ডা এবং পুরাই গাঞ্জুটি মার্কা। ওর বর্ণনা শুনে আমি অস্থির হয়ে গেলাম তাকে দেখার জন্য। কিন্তু বান্ধবী ম্যানম্যান করে বলল তার পক্ষে সম্ভবই না। তাই আমরা ক্লাস করেই খেতে চলে গেলাম। খাওয়ার মাঝেই গুন্ডাটা কয়েকবার ফোন দিল, কিন্তু রিসিভ করলাম না। খাওয়া শেষে আমি ফোন উঠিয়ে আমি বললাম, কি ব্যাপার আপনি না বললেন ফ্যাকাল্টির সামনে দেখা করবেন?? আপনাকে তো খুঁজেই পেলাম না!

গুন্ডাটা বলল, হায় খোদা তোমাদের কখন ক্লাস শেষ হইছে!! আর তোমরা এখন কোথায়?? :((

আমি রাগে চোটপাট করে বললাম, হয়েছে তো কখন। খেতে আসছি বটে X(

গুন্ডা জোর গলায় বলল, ও আচ্ছা আচ্ছা তোমরা বটে খেতে আসছো, ও ও কাদের ভাইয়ের দোকানে, বিল দিও না, আমি আসতেছি, আমি কাছাকাছিই ...
(আমি একবারও বলিনি কোথায় খেতে আসছি, কিন্তু সে কাদের ভাইয়ের দোকানে আসছি এটা কেন ভাবল কে জানে! /:) )

এর পরপরই ভো শব্দ করে হোন্ডা নিয়ে গুন্ডাটা সামনে দিয়ে চলে গেল নিচু বটের দিকে। আমরা ছিলাম উঁচু বটে। আমরা হাসতে হাসতে শেষ। বান্ধবী বলল তার ওষুধ কিনতে হবে, ডেইরিতে যেতে হবে। এরপর আমরা একটা রিকশা নিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করলাম।

এদিকে গুন্ডা বটে আমাদের তন্ন তন্ন করে খু্ঁজে না পেয়ে আবার ফোন দিল। এবারও আমি ফোন রিসিভ করলাম। গুন্ডা বলল, তোমরা বটের কই আছো?

আমি বললাম, আপনার জন্য কতক্ষণ ওয়েট করলাম! উঁচু বটে ছিলাম! এখন আমরা প্রান্তিকে আছি...
গুন্ডা এজ ইউজুয়াল বলে উঠল, আচ্ছা আচ্ছা আমি আসতেছি!!
আমরা গুন্ডাকে প্রান্তিকে আসতে বলে ডেইরি ত্যাগ করলাম। প্রান্তিকে গিয়ে গুন্ডা আমাদের খুঁজে না পেয়ে আবার ফোন দিল। আমি আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বললাম, সেকি!! আপনি প্রান্তিকে গিয়ে বসে আছেন কেন!! আমরা তো ডেইরিতে ছিলাম!! আপনার জন্য ওয়েট করে না পেয়ে এখন হলে চলে আসছি। এখন ঘুমাবো।

আর গুন্ডাটা এতই গর্দভ যে আমি যে এতক্ষণ কথা বলেছি, বান্ধবী বলেনি, সেটাও বুঝেনি। ব্যাটা কণ্ঠস্বর-ও চেনেনা এমন গাধা!

গুণ্ডা রাতে বান্ধবীকে ফোন দিল। প্রোপোজ করবে এটা তো বুঝতেই পারছিলাম। তাই আগেভাগে কি কি বলতে হবে সেভাবে চিন্তাভাবনা করে রাখা ছিল। গুণ্ডাকে রাতের বেলায় বান্ধবী জানিয়ে দিল তার এফেয়ার আছে। গুণ্ডা গভীর দুঃখে হেসে হেসে বলেছিল, জানোই তো ভালবাসা আর ভাললাগা এক কথা নয়!! তোমাকে আমার ভাল লাগত, ভালবাসিনি :)
এর অনেকদিন পরের ঘটনা। গুন্ডার চেহারাও ভুলে গেছি তখন। আমি ক্লাস শেষে প্রান্তিকে গিয়ে প্রিন্ট দিয়ে হলে ফিরছিলাম। তখন গুন্ডা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। গুন্ডাও চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পর থেমে থেমে বলল, কথা বলতে পারি?

আমি বললাম, হ্যাঁ বলেন। গুন্ডা বলল, বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে আপনাকে দেখি। আপনি একাউন্টিং এ??
আমি বললাম, জ্বি।
জিজ্ঞেস করল,আপনি কোন ব্যাচ? ৪০?
আমি বললাম, জ্বি।
তারপর শাকিব খান টাইপ ভাব নিয়ে বলল, ও আচ্ছা। আপনি হয়ত অবাক হয়েছেন হঠাৎ এভাবে কথা বলতে আসায়। আসলে আমিও স্টুডেন্ট। ইকো ৩৮ ব্যাচ। :) আসলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল...

ইকো-৩৮ শুনে আমার মনে পড়ল, আরে এটা তো সেই গুন্ডাটা। আমি বললাম, ভাইয়া আমি যাই, আমার কাল পরীক্ষা।
বলেই আমি দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। সেও হাটতে হাটতে বলতে লাগল, কি পরীক্ষা??
আমি বললাম, ফিন্যান্স প্রেজেন্টেশন।
তাও বলে, টপিক কি??
আমি বললাম, ২২টা টপিক।
গুন্ডা বলল, ২২ টা টপিকের প্রেজেন্টেশন হয় নাকি!

আমি ততোক্ষণে রিক্সায় উঠে এলাকা ত্যাগ করলাম। পরে মনে হল বলে আসা উচিত ছিল "আপনাকে তো আমি চিনি, আপনি তো আমার বান্ধবীর পেছনে ঘুরতেন" কিন্তু বলা হল না :( অনেকদিন ধরে গুন্ডাকে আর দেখিনি। দেখলে অবশ্যই জানিয়ে দিতাম। আর কেন যে তখন ওই উপস্থিত বুদ্ধি হল না এটা বলার যে আপনাকে তো আমি চিনি, আপনি আমার বান্ধবীর পিছে ঘুরতেন। এইটা না বলতে পারার আফসোস অনেকদিন ছিল :(

মেয়েরা লুল বিষয়ক ব্যাপারগুলোতে ফরফর করে লুলদের লুলামি বিষয়ে আলোচনা করে বিনোদন নিতে ভালবাসে। এবং এটা এক দিক দিয়ে ভাল এবং খুবই স্বাস্থ্যকর বিষয় বলেই মনে করি। এতে লুল বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি অনেক বেড়ে যায়। তাও আবার যদি এইরকম লুল হয়! মেয়েদের কাছ থেকে জানলাম এই গুন্ডা লুল একাউন্টিং এর আরো কয়েকটা মেয়ের পেছনেও ঘুরেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে আরো আছে :|

প্রান্তিকে গিয়ে আজ দেখি সেই গুন্ডা। আমি প্রথমে দেখেও না দেখার ভান করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি যেখানে যাই, সেখানেই যায়। তারপর "তুমি" করে বলেই বসল, এই কেমন আছো?
আমিও খুব সুইট করে বললাম, খুব ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া? :) উনি বললেন, হ্যা ভাল আছি। শোনো... তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল...
আমি বললাম, আমার সাথে আবার কোন বিষয়ে কথা বলবেন? মাহফুজার ব্যাপারে না মুক্তার ব্যাপারে? ওরা তো কেউই আপনাকে পছন্দ করেনা ভাইয়া। আপনি একাউন্টিং এর পিছনেই কি এখনো পড়ে আছেন? অন্যান্য ডিপার্টমেন্টেও চেষ্টা করেন!
উনি হতবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলেন তারপর হেহ্যাহেহ্যা করে হেসে বললেন, আমার সম্পর্কে ভুল জানো!
আমি বললাম, ঠিক আছে ভাইয়া আসি। আমার আবার পরীক্ষা, আপনাদের ডেপ্টের স্যারের কোর্স!
খুবই শান্তি লেগেছে। :)

তবে এই লুলটার তাও লজ্জা শরম আছে। কিছু লুল তো আছে মেয়েটার বান্ধবী জানার পরেও লুলামি করে, দেখা করতে চায়! সেই লুলগুলোকে কোনভাবেই ধরা যায় না :(
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×