আমি মেয়েটির দিকে আকুল ভাবে কখনো তাকায়নি। কখনো কঠোর ভাবেও না। সাধারণ ভাবে একে অন্যের দিকে যেভাবে তাকায় ঠিক আমার দৃষ্টিপাত ঠিক তেমনই ছিল। কিন্তু কি কারণে জানি মেয়েটা আমার দৃষ্টিতে আকুলতা দেখেছিলো। পরবর্তীতে সে কারণেই কি চরম ব্যাকুল হয়েছিল আমার প্রতি ?
আমি জানিনা ঠিক কি কারণে নিজেকে রাধা ভেবে বসেছিল। কোন ভ্রমর গুনগুন করে তাকে কি মন্ত্রণা দিয়েছিলো ঠিক জানি না। নাকি শুধুই কি বাচ্চা একটা মেয়ের মায়াবী মনের খেলা তাকে তোলপাড় করেছিল। জাগ্রত রেখেছিলো রাতের পর রাত।
মেয়েটিকে আমি বাচ্চাই বলবো। মাত্র ১৫ বছরের মেয়ে। যদিও গ্রামে এই বয়সী মেয়েরা বিবাহযোগ্য। তবে সে কেবল মাত্র শখ করে মায়ের শাড়ি জড়াতে শিখেছে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত দেহ বল্লরীতে। স্কুলে যায় আসে। না , আমি তার দিকে সেভাবে তাকাই কখনো। চোখের সামনে বড় হচ্ছে , এদিকে ওদিকে যায়। পুকুরের ধার ,মেঠো পথ , মাঠের ধানক্ষেতে আচমকা চোখ পড়তো তার দিকে। মাঠ থেকে ছাগল নিয়ে ফিরত যখন , আমি যে একেবারেই তাকায়নি তার দিকে এমন টা নয়। আমি তাকিয়েছি। কিন্তু সে দৃষ্টিতে কোন আকুলতা ছিলোনা , প্রেমের আবেদন ছিল না।
মেয়েটা কি বুঝলো জানি না। আমার ঘর থেকে বের হবার সময় গুলো লিখে রাখতো মনে হয়। এমনকি বিকেলে যখন ফুটবল নিয়ে বের হই তখনো খেয়াল করেছি ওদের জানালার ওপাশে এক কিশোরীর ছায়া। পর্দার ওপাশে নিজেকে আড়াল করে রাখত। আমার দৃষ্টি ছিল ওই পর্যন্তই। কখনো গভীরে যায়নি , গভীর ভাবে ভাবিনি।
আমার ভাবা কি উচিত ছিল? মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় ১৭ বছর বয়েসে। মানে শরীরে মায়ের শাড়ি জড়ানোর ২ বছর পরে। অদ্ভুত তো ! এতো নিখুঁত হিসাব মনে রাখলাম কিভাবে ? মেয়েটা দৃষ্টিতে ছিল না সেভাবে কিন্তু মনে ছিল কি ?
বিয়ের আগে কোন এক ঈদের রাতে আমাকে একখানা চিঠিসহ উপহার পাঠিয়ে ছিল লোক মারফত। চিঠিতে কি লেখা ছিল আমার এই গল্পে লিখবো না। চিঠির সাথে ছিল একটা রুমাল। নিজের হাতের সুই সুতোর কারুকাজ । তাতে লেখা--
মাথার কেশ দুই ভাগ কইরা
রাখিতাম বান্ধিয়া ....
আমি রুমালটা এখনো রেখে দিয়েছি। না , কোন আকুলতায় নয়। মোহে নয়। আমার চোখে কখনোই তো আকুলতা ছিল না। তবে মেয়েটা মাথার কেশ দিয়ে আমাকে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলো। সেই কারণেই হয়তো।
ছবিঃ আফরোজা সোমা এর ব্লগ আমার মায়ের রুমালগুলো
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৩ রাত ২:২৪