somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ত্রী যখন অবাধ্য হয়

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দরজা খুলেই যখন নীলা দেখতে পেলো আমি আরেকটা বিয়ে করে বউ নিয়ে ঘরে ঢুকছি। আমার সাথে আমার বাবা-মাও আছে। নীলা যেন ভূত দেখার মত করে চমকে উঠলো। নীলা হলো আমার প্রথম স্ত্রী। যাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না আমাদের মধ্যে। এখনও কমতি নেই। এতো ভালোবাসার পরও আজ নীলার জন্যই আমাকে আরেকটা বিয়ে করতে হলো। নীলাকে বিয়ে করার তিন মাসের মাথায় এসে নীলা আমাকে বললো আমার বাবা-মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে। নীলার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম সেদিন। যে নীলা আমাকে কথা দিয়েছিলো আমার বাবা-মা কে নিজের বাবা-মার মতোই সব সময় দেখবে। নিজ বাবা-মার মত করে তাদের সেবা যত্ন করবে। সেই নীলা বিয়ের মাত্র তিন মাস না যেতেই বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলবে এটা কখনই ভাবিনি।


আমি তাকে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এমনটা করতে বলছো? আমি সন্তান হয়ে কিভাবে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারি? যে বাবা-মা এতো কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন। আমাকে কখনই কোনো অভাবে রাখেননি। আজ যখন তাদেরকে দেখাশোনার দায়িত্ব আমার কাঁধে। আর তখন তুমি বলছো তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে? নীলা জবাবে বলেছিলো যে ওনাদের ভালোর জন্যই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে হবে। নীলা বলেছিলো- "তুমি তো সারাদিন অফিসের কাজে বিজি থাকো। বাড়িতে তো তুমি তাদের সাথে থাকতে পারো না। তাদের সবকিছু তো আমাকেই করতে হয়। তোমার তো করতে হয় না। আর সংসারের কাজের জন্য আমিও তাদের সেবা করতে পারিনা ঠিকমতো। সেইজন্যই তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলছি। সেখানেই তারা ভালো থাকবে।" সেদিন নীলার এসব কথা শুনে তার উপর খুবই রাগ হয়েছিলো।


আমি বলেছিলাম আমি এটা কখনই করতে পারবো না। দুনিয়ায় আমার জান্নাত সমতুল্য বাবা-মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে পারবো না। সারাজীবন যারা আমার জন্য কষ্ট করেছেন। নিজেরা না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। আজ যখন তাদের জন্য আমার সব করার কথা। তাদেরকে আগলে রাখার কথা। তখন কিভাবে আমি তাদের নিজ থেকে আলাদা করতে পারি? কখনই আমি এটা পারবো না।নীলা সেদিন থেকে আমার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। কথায় কথায় রাগারাগি করে। একটু কিছু হলেই বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। তার এমন আচরণে খুব রাগ হলেও আমি নিজেকে শান্ত রাখি। কারণ দুজনই যখন রাগারাগি করবো। তখন শয়তান তৃতীয় পক্ষ হিসেবে হাজির হয়ে দুজনকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।


নীলাকে অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টাও করি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয় না। আমি নাকি তাকে ভালোবাসি না। তার জন্য আমি এতটুকুও নাকি করতে পারিনা। একপর্যায়ে নীলা বাবা-মার সাথেও খারাপ আচরণ শুরু করে। তাদের সেবা তো দূরের কথা ঠিকমত খেতে পর্যন্ত দেয় না। আমি সারাদিন অফিসে থাকায় বাবা-মার খোঁজও নিতে পারিনা ঠিকমত। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমি নীলার কথায় রাজি হয়ে যাই। বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নেই। বাবা-মা সব কিছু জেনে বুঝে চুপ করে থাকেন। এরপর একদিন বাবা-মাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হই বৃদ্ধাশ্রমের উদ্দেশ্যে। নীলা অনেক খুশি সেদিন। যেন তার উপর থেকে বিশাল এক আপদ দূর হচ্ছে আজ।

সেদিন বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নেয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে আমি আমার খালার বাসায় রেখে আসি কয়েকদিনের জন্য। সেটা নীলা জানতে পারেনা। সে জানে আমি তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছি। আর বাবা-মাকে বলি আমার জন্য আরেকটা মেয়ে দেখতে। আরেকটা বিয়ে করতে চাই আমি। নীলাকে ডিভোর্স দিতে চাই। যে মেয়ে আমার বাবা-মাকে সহ্য করতে পারেনা। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে বাধ্য করে। আর যাই হোক তাকে স্ত্রী হিসেবে আমি আর রাখতে চাইনা। তার কিছু দিন কেটে যাওয়ার পর......


তো এরপর কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর আজ এভাবে হুট করে বাসায় আরেকটা বউ আর বাবা-মা কে নিয়ে ঢুকলাম। নীলা সব দেখে চমকে উঠলো। আমি কিভাবে আরেকটা বিয়ে করতে পারলাম। আর বাবা-মার তো বৃদ্ধাশ্রমে থাকার কথা। উনারাই বা বৃদ্ধাশ্রমে না থেকে আমার সাথে বাসায় কেন? নীলার যেন দম আটকে গেছে। সে যেন বোবা হয়ে গেছে। পাথরের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সব দেখে আমিই নীলাকে বলতে শুরু করি। যে স্ত্রী স্বামীর বাবা-মাকে সহ্য করতে পারেনা। শশুর শাশুড়ি কে নিজের বাবা-মার মত দেখতে পারেনা। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে বাধ্য করে। তাকে আমি স্ত্রী হিসেবে আর রাখতে চাইনা। আমি তোমার ভালোবাসার জন্য আমার আসল ভালোবাসা হারাতে চাইনা। একটা বউ হারালে আরেকটা পাবো। কিন্তু আমার বাবা-মাকে হারালে তাদের আমি কখনই ফিরে পাবো না। আমি আরেকটা বিয়ে করেছি। এখন আর তোমার ভালোবাসার দরকার নেই আমার। আমি যদি তোমার ভালোবাসার জন্য নিজের বাবা-মাকে ছাড়তে পারি। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারি। তাহলে আমি অন্য একটা মেয়ের জন্য তোমাকেও ছাড়তে পারবো। তুমি চলে যাও তোমার বাবার বাড়ি। কয়েকদিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব।


নীলা সব কিছু শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আমার পা ধরে তার সকল ভুল স্বীকার করে। তাকে ক্ষমা করে দিতে বলে। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। কিছুই বলিনা তাকে। এরপর সে বাবা-মার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। বাবা-মা তাকে উঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে শক্ত করে তাদের পা ধরে কাঁদতে থাকে। তাদের সাথে অন্যায় করেছে এটার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে নীলা এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি নীলাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেই। তার মাথায় পানি ঢেলে তাকে সুস্থ করে তুলি। জ্ঞান ফিরেই নীলা আমাকে ঝাপটে ধরে আবারো কাঁদতে থাকে। আমি নীলাকে শান্ত করি। তাকে বলি যে আমি আরেকটা বিয়ে করিনি। তোমাকে শুধু বুঝানোর জন্য এই মেয়েকে বউ সাজিয়ে নিয়ে এসেছি। আর বাবা-মাকেও আমি বৃদ্ধাশ্রমে রাখিনি। এতদিন খালাদের বাসায় রেখেছিলাম। আর তোমাকে বুঝানোর জন্য এরকম একটা নাটক করতে হলো।


আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসি। এর থেকেও হাজারগুণ বেশি ভালোবাসি আমার বাবা-মাকে। আমি কিভাবে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারি বলো? অন্য একটা বিয়ে করে তোমাকে ছাড়ার জন্য যদি তুমি এতোটা কষ্ট পাও। তাহলে একবার ভাবো তোমার ভালোবাসার জন্য যদি বাবা-মাকে ছাড়ি আমি। তাহলে উনারা কতটা কষ্ট পাবেন? তুমি আমাকে ভালোবাসো অল্পকিছুদিন হলো। আর উনারা পঁচিশ বছর ধরে আমাকে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করেছেন। নিজেরা না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। আমার মা কতটা যন্ত্রনা সহ্য করে আমাকে দুনিয়ায় এনেছেন। আমি কিভাবে তাদের কষ্ট দিতে পারি বলো? আর একদিন তো আমরাও বাবা-মা হবো। যদি আমাদের সন্তানেরাও সেদিন আমাদের সাথে এমনটা করে। তখন আমরা কী করবো বলো? স্ত্রীর ভালোবাসার জন্য যে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে পারে। সে কখনই পুরুষ হতে পারেনা। সে কাপুরুষ।

মনে রাখবে, যে ব্যক্তি স্ত্রীর ভালোবাসার জন্য নিজের বাবা-মাকে ছাড়তে পারে। সে অন্য একজনকে পেলে সেই স্ত্রীকেও ছাড়তে পারবে।
সব শুনে নীলা তার সমস্ত ভুল বুঝতে পেরে বাবা-মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। এরপর থেকে আমাদের আর কোনো সমস্যা হয়নি। নীলা নিজের বাবা-মার মত করেই আমার বাবা-মার দেখাশোনা করে। একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবে নীলা নিজেকে গড়ে তোলে। খুব সুখের সাথে আমরা সংসার করতে থাকি।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিরাতাম মুসতাকিমের হিদায়াত হলো ফিকাহ, কোরআন ও হাদিস হলো এর সহায়ক

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×