প্রিয় পাঠক, আজকাল তো চারদিকে শুধু তৌহিদি জনতার ঢল ! একদল তৌহিদি জনতা আরেকদল তৌহিদি জনতাকে কুফরি ফতোয়ায় ব্যাস্ত। অথচ আজকাল তৌহিদি জনতার অভিনয়ে যারা ব্যস্ত তাদের পূর্ব পুরুষরাই তৌহিদি জনতার নাম ভাঙিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল ইসলামের তৃতীয় খলিফা এবং পবিত্র কোরআন সংকলক, স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই মেয়ের জামাই হজরত উসমান (রাঃ)-কে। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল, তিনি কোরআনের আইন অনুযায়ী খিলাফত চালাতে পারছেন না !! অথচ আজকে যে কোরআন পড়ি;- তার সংকলক তিনি রাঃ। হত্যার ৪০ দিন আগ অবধি তাকে অবরুদ্ধ রাখা হয় স্বপরিবারে। তাকে জুম্মার নামাজ পড়ার অনুমতিও দেয়া হয় নি। অথচ এই যে নামাজের ঘর মসজিদে নববী যেটি তার সমস্ত সম্পত্তি দানের উপর কেনা হয়েছিল প্রিয় নবীজির সময়ে। একটা অন্ধকার কক্ষে বন্দি থাকতে হয়েছিল এমন এক সাহাবীকে যাকে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপাধি দিয়েছিলেন- জুন্নুরাইন বা দুই আলোর মালিক। তাকে পাহাড়া দিচ্ছিলেন রাসূলের দুই নাতি ইমাম হাসান (রাঃ) আর ইমাম হোসেন (রাঃ)। গোপনে পানি এনে দিতেন রাসূল(সা) এর আরেক মেয়ের জামাই হজরত আলী (রাঃ)। অথচ এই উত্তেজিত জনতার দাবী ছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান থেকে বিচ্যুতি আর আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলতে না পারার ব্যর্থতাই খলিফাকে পিটিয়ে মারার ঔচিত্য দেয়! উনাকে বাচাতে গিয়ে হাতের আংগুল কেটে ফেলেন খলিফার স্ত্রী নায়েলা। আর কোরআন পাঠরত খলিফা ওসমান(রাঃ) কে মেরে ফেলা হয় কোরআনের অবমাননার অপরাধে। কারা মারে? এই তৌহিদি জনতাই! এই উত্তেজিত জনতা কোরআন সংকলকের চেয়েও বড় কোরআন রক্ষাকারী, নবীর মেয়ের জামাই দৌহিত্রদের চাইতেও বড় নবীপ্রেমিক, আশা মুবাশশরা বা আল্লাহর কাছে বেহেশতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবী উসমানের চেয়েও আল্লাহর দ্বীন বেশী বুঝা। যারা খলিফাকে মেরেছিল তারাও নামাজ পড়েই এসেছিল। তারাও কোরআনের হাফেজ ছিল। বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছিল। কিন্তু তাদের সামনে ধর্ম থাকে না, ক্ষোভ, ক্রুধ আর পৈশাচিকতা ভর করে। এজন্যই কোরআন পাঠরত খলিফা উসমান(রাঃ) কে পিটিয়ে মারতেও দ্বিধা বোধ করে নাই। আমর বিন হামক উত্তেজিত তৌহিদি জনতার একজন খলীফা উসমান(রাঃ)-এর নিস্তেজ মৃত বুকে নয়বার তরবারি দিয়ে আঘাত করছিল। আর বলেছিল, এই তিনটি আঘাত আল্লাহর জন্য। আর শেষের ছয়টি আমার মনের ক্ষোভ।
সুতরাং উত্তেজিত তৌহিদি জনতার ক্ষোভের সমীকরণ এটাই। ধর্মের চাইতে পলিটিক্স বেশী থাকে। আর এসবের চেয়ে বেশী থাকে খুনে রক্তগরম কারণ। যে কারণ মানুষকে মব বানিয়ে দেয়, খুনে বানিয়ে দেয়! হয় মরবো, নাহয় মারবো- এই লিনিয়ার ব্রেইনওয়াশের জগতে নিয়ে যায়। ধর্ম অশান্তি রোধ করতে চাইলেও- পলিটিক্স এসে খুনী বানায়।
যে পলিটিক্সের কাছে খুন হয়ে যান নামাজরত হজরত ওমর (রাঃ), কোরআন পাঠরত হজরত উসমান( রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য নারকীয় তাণ্ডব ঘটিয়েছে এই তথাকথিত তৌহিদি জনতা। যার বিষাক্ত ছোবল থেকে আজো মুক্ত হতে পারেনি ইসলাম ও ঈমানদার মুসলমানগণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:২১