somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ যা দেখছেন ধর্মটা আসলে এইরকম নয়।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানবতার মুক্তির দূত আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন অবিশ্বাসীদের হাতে অত্যাচারিত হয়েছেন তখনও তাদের হেদায়েত বা সত্যের পথে আসার জন্য সত্য উপলব্ধি করার শক্তিদানের জন্য এবং তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে দো’আ করেছেন। বিশ্বনবী মানবতার নবী ও পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য।

আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ রহমত বা দয়া হিসেবে তাই তিনি মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি আহ্বান করেছেন প্রেম ও ভালোবাসার মাধ্যমে, শক্তির মাধ্যমে নয়। প্রশ্ন হতে পারে, প্রেম-ভালোবাসার মাধ্যমেই ইসলাম প্রচারিত হয়ে থাকে, তাহেল মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হায়াতে জাহেরীতে এত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল কেন? এ বিষয়ে সরাসরি বলতে গেলে বলতে হবে, হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কোন আক্রমণাত্মক যুুদ্ধ পরিচালিত হয়নি। ইসলামের ইতিহাসে সব যুদ্ধই পরিচালিত হয়েছিল আত্মরক্ষামূলক, আর যুদ্ধের মাধ্যমে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি।

ইসলাম গ্রহণের পেছনে রয়েছে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মানব প্রেম, মানবতাবোধ ও সুকোমল আচরণ, আর পরবর্তী সময়ে তাঁর সঠিক অনুসারীদের মাধ্যমে মানবজাতি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

মানবতার মুক্তির দিশারী, দয়াল নবী [ﷺ] সৃষ্টি জগতের প্রতি দয়া বা রহমত প্রদর্শনের দিকে উদ্বুদ্ধ করে এরশাদ করেন-

الرَّاحِمُونَ يَرْحَمْهُمْ الرَّحْمٰنُ اِرْحَمُوْا مَنْ فِىْ الْاَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ-

অর্থাৎ সৃষ্টি জগতের প্রতি দয়াবানগণ বা রহমতকারীগণের প্রতি রাহমানুর রাহিম দয়া করেন। অতএব, তোমরা জমীনে অধিবাসীদের প্রতি দয়া কর, আসমানের অধিপ্রতি তথা স্রষ্টা তোমাদের প্রতি দয়া বা রহমত করবেন। [মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৪২৩]

মানব প্রেমের মাধ্যমে শান্তির এই প্রক্রিয়া তিনি শুধু আঞ্চলিক বা জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য ষষ্ঠ হিজরীতে (৬২৮ খ্রিস্টাব্দ), তিনি স্বাক্ষর করেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বপ্রথম লিখিত শান্তি চুক্তি যা হুদায়বিয়ার সন্ধিনামে আখ্যায়িত। এই চুক্তির প্রতিটি ধারা মুসলমানের বিপক্ষে হওয়া সত্ত্বেও ও মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে রাসূলুল্লাহ্ লেখার পরিবর্তে আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) লেখা সত্ত্বেও মানবপ্রেম ও মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার কারণে তিনি নির্দ্বিধায় তাতে স্বাক্ষর করলেন। শুধু তাই নয় তাঁর মাতৃভূমি মক্কা শরীফ থেকে যে তাঁকে হিজরত করতে বাধ্য করা হয়েছিল, অষ্টম হিজরীতে সেই মক্কা বিজয়ের পর প্রতিশোধের পরিবর্তে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। মক্কা শরীফ তথা আরবের সব মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করে শান্তি পূর্ণ জীবন যাপনের নিশ্চয়তা বিধান করেন। এভাবে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মানবপ্রেম তথা সৃষ্টিপ্রেমের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করেছেন। আকৃষ্ট করেছেন মানব জাতিকে সত্যের প্রতি, ন্যায়ের প্রতি, ইসলামের প্রতি। উত্তম চরিত্র বা আদর্শ গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তিনি এরশাদ করেন-
اِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ اَحْسَنْكُمْ اَخْلَاقًا-

অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে অতি ভাল-মানুষ সেই যে চরিত্রের দিক থেকে উত্তম বা চরিত্রবান।
[মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৪৩১]

অন্য হাদীসে পাকে রয়েছে-

اِنَّ مِنْ اَحَبِّكُمْ اِلَىَّ اَحْسَنْكُمْ اَخْلَاقًا-

অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অতি মাহবুব যেই চরিত্রবান। [মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৪৩১]

এভাবে তিনি মানবতার কয়েকটি ধারা গ্রহণের প্রতি উৎসাহ বা উদ্দীপনা প্রদান করেছেন। যেমন মিশকাত শরীফের ৪১৫ পৃষ্ঠায় باب حفظ اللسان والفينة و الشتم রয়েছে-

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رضى الله عنه اَنَّ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اَضْمِنُوْا لِىْ سِتًّا مِنْ اَنْفُسِكُمْ اَضْمَنُ لَكُمْ الجَنَّةَ اَصْدُقُوْا اِذَا حَدَّثْتُمْ وَاُوْفُوْا اِذَا وَعَدْتُمْ وَاَدُّوْا اِذَا اُئْتُمِنْتُمْ وَاحْفِظُوْا فُرُوْجَكُمْ وَغُضُّوْا اَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوْا اَيْدِيَكُمْ-

অর্থাৎ- হযরত উবাদা ইবনে ছামেত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত নিশ্চয়ই নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ‘তোমরা ছয়টি দায়িত্ব বা জিম্মাদারী আদায় কর বা পালন কর, তাহলে আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করব- যখন কথা বলবে সত্য বলবে, ওয়াদা করলে পূর্ণ কর, আমানত রাখলে যথাযথভাবে হেফাজত করত: হস্তান্তর কর এবং তোমাদের গুপ্ত অঙ্গ তথা চরিত্র হেফাজত কর। আর তোমাদের দৃষ্টিশক্তি হেফাজত কর ও তোমাদের হাত তথা শক্তি অপব্যবহার থেকে রক্ষা কর।
এইভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মানবপ্রেম আদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করলে সমাজে সহনশীলতা-ভ্রাতৃত্ববোধ-সম্প্রীতি-ভালবাসা ও সৃষ্টিপ্রেম প্রতিষ্ঠিত হবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ গ্রহণে ও অনৈতিক, জুলুম, অত্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার পরিত্যাগ করার প্রতি উদাত্ত আহ্বান করে বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক আল্লামা ড. ইকবাল রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন-

مصطفے بر سان خويش راكه دين همه اويست
اگر باو نرسيدى تمام ابولهبى است-

অর্থাৎ নিজেকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শে পরিচালিত কর। কারণ এটিই দ্বীন। যদি তাঁর আদর্শে পরিচালিত না হও, তাহলে পুরোটাই আবুল লাহাবী।

মহান আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের সবাইকে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মানবপ্রেমের শিক্ষা, আদর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি তথা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ ও শান্তি লাভ করার শক্তি দান করুন। #আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৬
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×