ওপরের ছবিটি হল কুচকাওয়াজ যে রাস্তার ওপর দিয়ে হয় তার। এই রাস্তাটিকে রাজপথ বলে ডাকা হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়া গেট, অন্যপ্রান্তে আছে রাষ্ট্রপতির বাসস্থান রাইসিনা হিলস। এর দুপাশে আছে ভারতের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লক এবং ভারতের সংসদ ভবন।
এটি হল অমর জওয়ান জ্যোতি; মুক্তিযুদ্ধ তথা ১৯৭১ ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৬২ চীন ভারত যুদ্ধ ও কারগিল যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে দেশের হয়ে প্রাণ দেওয়া বীর সৈনিকদের স্মরণে ২৪ ঘন্টা এখানকার আগুনের শিখা জ্বলে। মূল প্যারেডের আগে, এমনকি জাতীয় সংগীতেরও আগে এখানে শহীদ জওয়ানদের স্যালুট করেন প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা। এরপর ২ মিনিট নীরবতা পালন হয়। বাকী অনুষ্ঠানের আড়ম্বরের আগে এ এক অদ্ভুত solemn পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরপর জাতীয় পতাকা তোলা হয় ও ২১ তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।
এইবার মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমেই চলতি বছরে ভারতীয় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী কিছু সমরাস্ত্র দেখানো হয়। এবছর দেখানো হল ভারতের আই সি বি এম অগ্নি ৫ ক্ষেপণাস্ত্র।
এছাড়া পিনাকা রকেট লঞ্চার, অর্জুন ট্যাংক ইত্যাদিও দেখানো হয়।
এইবার মার্চপাস্ট শুরু হয়। ট্র্যাডিশন মেনে শুরুতেই থাকে মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রি, এরপর অন্যান্য বাহিনী আসে। ছবিতে লাদাখ ইনফ্যান্ট্রির সেনাদের দেখতে পাচ্ছেন।
এবার আসেন নৌবাহিনী ও বায়ুসেনাদের সদস্যরা।
এইবার শুরু হয় প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল আকর্ষণ (আমি একবার বাস্তিল দিবসের সময় প্যারিসে ছিলাম, মস্কোতে ভিক্ট্রি প্যারেডের ভিডিও-ও এক বন্ধুর সুবাদে দেখেছি; তাই আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে ২৬ জানুয়ারির প্যারেড সামরিক দিক থেকে ইউনিক নয় কিন্তু এর সাংস্কৃতিক দিকগুলি সত্যিই দুনিয়াতে ইউনিক।)- বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাবলো।
আপনারা জানেন ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ছড়ানো ছিটানো দেশ। বাংলাদেশের জনগণ (অবশ্যই চাকমা প্রভৃতি জনজাতি বাদে) এথনিকালি ও কালচারালি অনেক হোমোজিনিয়াস। কিন্তু ভারতের মূল বৈশিষ্ট্যই হল আপাত-আলাদা জাতিগুলিকে একত্রিত করা। এই জিনিসটিই ট্যাবলোতে প্রাধান্য পায়। প্রতিটি ট্যাবলো পাঠায় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার।
এরপর আসে বাইকের কসরতে বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন সেনা জওয়ানরা ও অনুষ্ঠান শেষ হয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার, জাগুয়ার মিগ ২৯ ও সুখোই ৩০ ফাইটারের ফ্লাইপাস্ট দিয়ে।
এবার মুখ্য অতিথি ছিলেন ভুটানের রাজা। এর আগে ইয়াসের আরাফত, হো চি মিন, গামাল আবদেল নাসের সহ বহু বরেণ্য দেশনেতা এই প্যারেডে স্যালুট নিয়েছেন। ইন্টারেস্টিং হল যে ১৯৬৫ যুদ্ধ শুরুর মাত্র ৭ মাস আগে ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানি অতিথিরা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮