স্কুলে জীবনটা অনেক বেশি সহজসরল ছিল। মজার ঘটনাই ঘটেছে স্কুলেই বেশি। কয়েকটি ঘটনা শেয়ার করি-
১)
আমি তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের সেকশনে একজন মাস্টারমশাই অংক পড়াতেন; তাঁর মাথাজোড়া টাক আর তোতলা কণ্ঠস্বরের জন্যই তিনি বিখ্যাত।
একদিন আমরা সাত আটজন মিলে ওনার বাড়িতে গেছি পড়া বুঝতে। গিয়ে শুনি যে উনি ঘরে নেই। কাজেই ফিরতে ফিরতে আমরা ওনার ম্যানারিজম ও তোতলামি গুলো নিয়ে চরম মজা করলাম।
জানি না কেমন করে সেগুলো স্যারের কানে পৌঁছে গিয়েছিল।
পরের দিন স্যার ক্লাসে এসেই খাপ্পা হয়ে আমাদের গ্রুপের একজনকে চেপে ধরলেন "তো-তো-তো-তোমাদের এতবড় আস্পর্ধা, আমার তো-তো-তোত (ঢোক গিলে) মানে কথা বলার অসুবিধে নিয়ে মজা করো! দাঁ-দাঁ-দাঁ-দাঁড়াও, তোমার বা-বা-বা-বাবার নাম আর ফোন নম্বরটা বলো।"
মুশকিলটা কি, স্যার যাকে ধরেছেন সে নিজেও এমনিতে জেনুইন তোতলা । এবার টেনশনে পড়ে গিয়ে সে বলতে আরম্ভ করল "না-না-না মানে স্যা-স্যা-স্যার,....."- এরপর বুঝতেই পারছেন কী হতে পারে।
স্যার খেপে আগুন, হেডস্যার আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠালেন, বিশেষ আপ্যায়নেরও (পড়ুন বেত) ত্রুটি হল না, ভাবলাম গল্প ওখানেই শেষ।
কিন্তু ছ মাস বাদে মাধ্যমিক দিতে যাবার সময় দেখি স্যার ঐ বন্ধুটিকে বাড়িতে ডেকে বিশেষ ভাবে অংক বুঝিয়ে দিয়েছেন। ব্যাটা তার জোরে ১০০য় ১০০ পেয়ে গেল যেখানে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত স্যার ওকে না পড়ালে ও ৮০% র বেশি কিছুতেই পেত না।
২)
তখন ক্লাস এইটে পড়ি, একজন স্টপগ্যাপ হেডমাস্টার হলেন। তাঁর কাছে যে কোন অপরাধের শাস্তি ছিল গার্জেন কল। এক মাসের মধ্যে ক্লাসের ৪৫ জন ছেলের মধ্যে বেশির ভাগেরই অন্তত এক- দু বার গার্জেন কল হয়ে গিয়েছিল। বেশির ভাগই ক্লাসে কথা বলা, হোমটাস্ক না করে আসা, মারামারি, শিক্ষাপঞ্জীতে অ্যাবসেন্সের কারণ বাবা মাকে দিয়ে সই না করানো এরকম জাতীয়। তবে একটা কেস সত্যিই অদ্ভুত ছিল।
সেদিন খুব মেঘলা ছিল। টিফিনে আমাদের একটা করে পেয়ারা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের খেলার ক্যাম্বিস বলটা হারিয়ে গিয়েছিল বলে টিফিনের খেলাটা শুরু করতে পারছিলাম না ( বাই দ্য ওয়ে, স্কুলে গিয়ে টিফিনে খেলা হবে না- এটা সত্যিই অকল্পনীয় ছিল)।
একজনের উর্বর মাথা থেকে প্রস্তাব এল যে ইটের মত শক্ত একটা পেয়ারাকে বল বানিয়ে খেলা হোক। প্রস্তাব কার্যকর হতে সময় লাগল না। কিন্তু কিছু্ক্ষণ খেলার পরই হেডস্যারের ঘর থেকে স্যার বেরিয়ে কড়া নির্দেশ দিলেন যেন আমরা পেয়ারা দিয়ে খেলা বন্ধ করি (খাবারের অপচয় টপচয় নিয়ে কিছুক্ষণ জ্ঞানগর্ভ ভাষণের পর)।
উনি তারপর গেম স্যারকে বললেন যাতে আমাদের একটা স্টাম্পার বল ( ক্রিকেট বলের মতই, খালি শক্ত রবারের) দেওয়া হয়। আমরা খুশিমনে ওটা দিয়ে ক্যাচ লোফালুফি খেলতে শুরু করলাম। (দুটো দল মাঠের দুদিকে দাঁড়ায়, একদল অপর দলকে হাই ক্যাচ দেয়, পয়েন্টে খেলা, ক্যাচ লুফলে +১ পয়েন্ট, মিস হলে -১ পয়েন্ট)
টিফিনের ঘণ্টা কখন পড়ে গেছে, আমরা খেলার উত্তেজনায় বুঝতে পারিনি, কিন্তু একটা সময় দেখি, গোটা মাঠ ফাঁকা এবং হেডস্যার আমাদের অপোনেন্ট গ্রুপের দিকে যাচ্ছেন। আমাদের থ্রোয়ার ব্যাপারটা ঠিক খেয়াল না করে ওদের দিকে একটা খুব হাই ক্যাচ দিল। বলটা পড়বি তো পড় পুরো স্যারের মাথায়, স্যার ওখানেই প্রায় ফ্ল্যাট।
আর বাকিটা বলছি না, অনুমান করে নিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৫