বিগত কয়েকদিনে আমাদের এদিকে চিটফান্ড সংস্থা সারদা কে নিয়ে যা হয়েছে তা হয়্ত এই ব্লগে অনেকেই জানেন। বাংলাদেশে ডেসটিনি গ্রুপের প্রতারণায় যেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমানো টাকা হারিয়েছিলেন,সেই একই জিনিস এবার পশ্চিমবাংলায়। যদিও সংস্থার মালিক ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু ক্ষতি যা হয়েছে তা পুরোপুরি মেটাতে সরকারের দম বেরিয়ে যাবে।
কিন্তু দোষটা কি শুধুই সুদীপ্ত সেনের ? কেন মানুষ ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে টাকা জমা না রেখে এসব ভুঁইফোড় জায়গায় রাখে ?
পণ্ডিত মানুষজনের মতে মূলত তিনটে কারণে -
১) এরা প্রচুর টাকা সুদ দেবার লোভ দেখায়। সরকারি ব্যাঙ্কে যেখানে খুব বেশি হলে ৮% মত সুদ দেয়, সেখানে এরা বছরে ৪০-৫০% সুদের কথা বলে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
২) এরা সরকারি দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে এমন ভাব দেখায়, যেন সরকারের নেতামন্ত্রীরাই তাদের আমানতকারীদের গ্যারান্টার। ( বাস্তবে কোম্পানি লাটে উঠলে নেতারা মামুলি অজুহাত দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেন, যেরকম সারদার ব্যাপারে হচ্ছে)
৩) এটা অনেকেই আমল দেন না, কিন্তু ব্যাঙ্কে পেপারওয়ার্ক এত বেশি যে স্বল্পশিক্ষিত কোন মানুষের পক্ষে স্বাধীনভাবে তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্ক থেকে যেকোন কাজ আদায় করা খুব অসুবিধের। আমাদের এদিকে ব্যাঙ্কে মেয়াদী আমানত করতে প্রায় ২০ পাতা ফর্ম ইংরেজিতে ভর্তি করতে হয়, যা একজন অপেক্ষাকৃত কম ইংরেজি জানা মানুষের পক্ষে খুবই ঝামেলার। অন্যদিকে চিটফান্ডে এরকম ঝামেলা অনেক কম। এজেন্টের হাতে সরাসরি টাকাটা জমা করলেই হয়।
আমার দু একটি অনুরোধ-
১) লোভী হবেন না, বেশি টাকার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হলে আপনারই ক্ষতি। আপনি যদি মুসলমান হন, তাহলে মনে রাখবেন, সুদ আদায়ের মত সুদের টাকা নেওয়াও পাপ। আপনি যদি হিন্দু হন, তাহলে বিবেকানন্দের বাণী ভাবুন "চালাকির দ্বারা মহৎ কার্য হয় না"।
২) ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ যদি এই বিরক্তিকর পেপারওয়ার্ক বন্ধ করতে পারেন, তাহলে ভাল হয়।শুধু সিটিজেনশিপ নাম্বার দেখালেই অ্যাকাউন্ট খোলা বা বন্ধের সুবিধে থাকা উচিত। চিন্তা করবেন না, ক্রিমিনালরা এমনিতেও আসল পরিচয় দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলে না।
৩)একান্তই যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে কোম্পানি চালুর পর খুব কুইক টাকা ঢালুন।যত আকর্ষণীয়ই হোক, এক বছরের বেশি মেয়াদে টাকা ঢালবেন না। কেন বললাম কথাটা ? কারণ, এগুলো প্রথম দু এক বছর সাধারণত নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবার জন্য কাস্টমারদের সব দাবিদাওয়া সময়ে মিটিয়ে দের। কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে পাঁচ কিংবা দশ বছরের মেয়াদে টাকা ঢাললেই বিপদ।