somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখা-অদেখা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেললাইনের পাশ ধরে খানিকটা এগিয়ে যেতেই সেই নদীটা। নদী বললে এখন অবশ্য ভুল হবে, দুর্গন্ধময় নোংরা পানির খাল। তার উপরে গড়ে উঠেছে ঝুলন্ত বস্তিটা, খলিলের বস্তি। বস্তির বাসিন্দা একদল কিশোর বয়সী টোকাই আছে। যাদের শরীরে ময়লা, চুল রুক্ষ, চেহারা করুণাহীন। টোকাই দলা আজ খুব উত্তেজিত, বেশি উত্তেজিত দলনেতা কিসলু। আজ রাতে তাদের বিনোদন উৎসব। কিসলু সবাইকে বলছে, "আজকে সিরাজ কাকার ঘরে রাইতে "লাল ছবি" চালাইবো। রাইতে থাকিস, বহুত মজা হইবো। বহুতদিন পর সিরাজ হালায় আবার চালানো শুরু করছে। আগে এক পোটলা গাঁজা খাইয়া ঢুকুম, খাইয়া দেখতে সেইরকম মজা লাগবো। খালি ফিলিমস আর ফিলিমস"। এই কথা ভেবেই ফিলিমসে কিসলুর সাথে বাকী সবাই ও ভেসে যায়।

বাবুল এই দলের মধ্যে খানিকটা বোকাসোকা, সবার মজার পাত্র। ঠোঁট বাঁকিয়ে বাবুল বলে, "নারে দোস, লাল ছবি দেখতে ইচ্ছা করতেছে না। এর চেয়ে চল একটা প্রশেনজিতের ছবি আনি, কঠিন প্রেমের কাহিনী, ফাটাফাটি অ্যাকশন।..."
-"ধুর হালা মগা চোদা, এইসব শুকনা কাহিনী দেইখা মজা আছে! মাংশ চামড়া না দেখলে মজা লাগে না।"
-"দোস, আমার এইগুলার চেয়ে সিনেমা দেখতে ভালো লাগে।"
কিসলু এবার খেপে ওঠে, "তোর তো হালা খাঁড়ায় ই না, তোর ভালো লাগবো কেমনে?"
দলের সবাই হো হো করে হেসে উঠে।
বাবুল বিরক্ত স্বরে বলে, "দেখ দোস, মজা লইস না। তোরা দেখলে দেখিস, আমি দেখমু না"।
আবার হো হো করে হাসতে শুরু করে সবাই। তারা হঠাৎ ই একটা নোংরা তামাশার সুর ধরে ফেললো। ক্রমশ সেই তামাশায় মেতে উঠে একজন বলে, "দেখিতো হালার আসলে আছে না নাই।" বলে বাবুলের লুঙ্গির গিট্টুর নিচে ফস করে হাত দিয়ে দেয়। দলের বাকী সবাই উল্লাসে আরও বেপরোয়া হয়ে যায়, আদিম ঝোঁকে তারা সবাই ঝাপিয়ে পড়ে বাবুলের উপর। বাবুলের লুঙ্গি খুলে নিয়ে নোংরা দাঁত বের করে ফেক ফেক করে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে সবাই। বাবুল সদ্যজাত শিশুর মতো বিহবল হয়ে পড়ে, বিস্ফোরিত চোখের করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ওর সাথীদের দিকেই। ওরা বাবুলের লুঙ্গি হাতে নিয়ে উড়াচ্ছে, কেউ কেউ বাবুলের লুঙ্গির নিচে ঢেকে থাকা জায়গাগুলোতেও হাত দিচ্ছে। এক ছেলে হাতের লাঠি দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে বাবুলের পাছায়। যে যেভাবে পারছে মজা নিয়ে নিচ্ছে। এমন কিছুক্ষন উল্লাস করে লুঙ্গিটা সাথে নিয়েই চলে যায় কিসলু আর বাকী দলটাও। বোকারা সহজে দল থেকে একা হয়ে পড়ে, আর হেরে যায়। বোকাসোকা বাবুল শুধু পড়েই রইলো নিথর, ওর আত্মা এখন লুঙ্গির সাথে বেঁধে চলে গেছে।

বাবুল বহুক্ষন বাদে নগ্ন অবস্থাতেই উঠে দাঁড়ায়, রেললাইনটার পাশ ধরে ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করে, ঘর বলতে একটা ড্রেনের পাইপ যার তলে রাতে মাথা গোঁজা যায়। একটা ছেলেমানুষ টোকাই রাস্তায় নগ্ন হাঁটছে এটা ভদ্রসমাজের কারো কাছে খুব একটা গুরুত্ববহ না। সভ্য চোখের অনেকটা আড়ালেই হেঁটে চলে যায় একটা ল্যাংটা টোকাই, বাবুল।

তারপর সময় গড়িয়ে সেই রাতটা নামে, গভীর হয়। কিসলু আর অন্য টোকাইরা খলিলের ঘরে "লাল ছবি" দেখছে মৃতের মতো হাঁ করে। আর বাবুল নোংরা বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, "কিসলুদের সাথে আর কোনদিন কথা বলবো না। আমি নিজের টাকা জমিয়ে একটা টিভি আর ভিসিডি কিনবো, তারপর রাতভর প্রশেনজিতের প্রেমের ছবি দেখবো। আহা।" ভাবতে ভাবতে বাবুল ওর টাকা জমানোর পুঁটলি ব্যাগটা ধরে টাকার ওজনটা আরেকবার মেপে নেয়। আরও অনেক টাকা লাগবে কিন্তু সমস্যা নেই, মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে একদিন হয়ে যাবে। তারপর ব্যাগটাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে বাবুল।

পরদিন সকালটা খলিলের বস্তিতে চিরায়ত আর দশটা কোলাহলমুখর দিনের মতই শুরু হয়। বাবুল ওর বস্তাটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, অনেক টাকা রোজগার করতে হবে, অনেক টাকা ব্যাগটায় জমাতে হবে। ভাবতে ভাবতে বাবুল রেললাইনের পাশ ধরে হেঁটে চলে বস্তাটা দুলিয়ে দুলিয়ে। স্টেশনের আশেপাশে কতো মানুষ, কতো ঘটনা বয়ে যাচ্ছে অবিরাম ব্যস্ততায়! কত গল্প বয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে!

গতকালকে বাবুল ল্যাংটা হয়ে এই রেললাইনের পাশ দিয়েই হেঁটে গেছে, তখনো সবাই ছিল কিন্তু কেউ খেয়াল করে দেখে নি। আজ বাবুল একটা টিভি আর ভিসিডির রঙ্গিন স্বপ্ন গায়ে চড়িয়ে হেঁটে চলছে, আজও সবাই আছে কিন্তু কেউ খেয়াল করে দেখছে না। সবাই শুধু ক্ষণিকের একটা পলকে দেখতে পায়, -- "হেঁটে চলছে একটা বাতিল মাল, টোকাই বাবুল।"
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×