somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি!! আমায় তুমি খাও

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃতীয়বারের মত পিতা হচ্ছে ফিরোজ । বরাবরের মত তার আকাশপাতাল জ্বর ।আগের দুবারও তার একই অবস্থা । অসুস্থ স্ত্রীকে হার মানিয়ে যায় তার অসুস্থতা ।পুরুষ মানুষের অসুস্থতা মানে ভয়াবহ অসুস্থতা । মেয়েদের ঘরের কোনায় অসুখ হয় , ঘরের কোনায় সেরে যায় । পুরুষ মানুষ অসুস্থ হলে দশ গ্রামের মানুষও জানে ।

ফিরোজ এখন বমি করছে । দেহের সবকিছু উগড়ে দেওয়া দেওয়া ভাব । কিন্তু কিছু উচ্চগ্রামের শব্দ ছাড়া কিছুই বের হল না ।

ছোট মেয়ে , মানে যে কিছুক্ষনের মাঝে মেজ হয়ে যাবে ,তার নাম রাফিয়া । বয়স সামনে জুলাইয়ে চার হবে । সে বাবার এই অবস্থার সাথে পরিচিত না । সে ফুপিয়ে কাঁদছে , আর তার সংকীর্ন হাত দিয়ে বাবার বিস্তৃত কপালে বিপুল ভালবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছে ।

এসব দেখছে বড় মেয়ে রাজিয়া । দশ বছর ! এবারে সে বৃত্তি পরীক্ষা দেবে । রাজিয়ার চোখে এখনই চশমা । সে চশমার উপর দিয়ে রাফিয়া আর তার বাবার কর্মকান্ড দেখছে । গত দুদিন ধরে তার পড়াশোনায় মন্দা ভাব চলছে ! তাই আজ নিজ উদ্যোগে সে অংক করা শুরু করেছে । সে বড় মেয়ে বলে মায়ের অবর্তমানে রাফিয়ার দেখভাল করার ভার পড়েছে । রাফিয়া কে ,সে থামাতে পারছে না । রাফিয়া আছে বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত ।

ফাতেমা , ফিরোজের বৌ । তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে । এসময় এত উত্তেজনা ভাল না । চেপেও রাখতে পারছেন না । ফিরোজের বমির শব্দ শুনে তার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল ।
যে , দাই আছে । সে বারবার বলছে মেয়ে হবে । সে নাকি মায়ের মুখ দেখে বলতে পারে ছেলে হবে না মেয়ে হবে । কিন্তু তার গত দুবারের অনুমান ভুল হয়েছে । সে বারবার বলছিল ছেলে হবেই । রাফিয়াকে , তো দেড় বছর ছেলের জামা পরে থাকতে হয়েছে । কারণ এই দাই ।
সে এবারও ছেলে ছেলে করছেন । এর জন্য পশ্চিমপাড়ার এক কামেল পীরের সরীষার তেল পড়িয়ে নিয়ে আসছেন । এই তেল ফাতেমার শরীরে মালিশ করা হয়েছে । এই তেলের বোতল দেখলেই ফাতেমার রাগ হয় ।

দিশেহারা হয়ে গেছে জোহরা বেগম । জোহরা বেগম ফিরোজের শ্বাশুড়ি । ফাতেমার ব্যাথা বাড়ছে আর ওদিকে জামাই এর আকাশ পাতাল জ্বর । জামাই তার লাখে একটা । শ্বাশুড়ির সে খুব যত্ন নেয় । ফাতেমা শুয়ে শুয়ে এক নাগাড়ে ফিরোজ কে বকাবকি করছে । কিন্তু , জোহরা বুঝতে পারছে . জামাইকে টেনশনে পেয়েছে ।


রাত দুইটা ।ফাতেমার ব্যাথা চরমে । নানি অনেক কষ্টে রাফিয়া কে ঘুম পাড়িয়েছেন । রাজিয়া কে ঘুম পাড়াতে পারেননি । সেবার মায়ের আগে রাফিয়াকে সে নিজেই কোলে নিয়েছিল । অবশ্য এ হিসেবে সে দাড়িয়ে নেই । তার চোখেও টেনশন । তার সাথে এতক্ষন বাসার কাজের ছেলে ছিল । সে মসজিদের ইমাম ডাকতে গেছে । রোদঘরে , তার মা আর নানি আছে । আরো আছে দাই আর আর তার দুই সহযোগী । তারা মাঝে মাঝে দুদ্দাড় করে ঘর থেকে বের বের হচ্ছে , আবার দুদ্দাড় করে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে । রাজিয়া ভেতরে যুদ্ধ দেখতে পারছে না ।

ফিরোজের এখনও জ্বর । একেবারে কাবুকরা জ্বর ।সে চোখ খুলে তাকাতেই পারছে না । মাঝে মাঝে এটা ওটা শুনছে , কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না । তৃতীয় সন্তান আসতে খুব বেশি দেরি নেই । গত দুবার জ্বর হয়েছিল ঠিক এত জ্বর হয় নি । ফাতেমা এবারে একটা ছেলের জন্যে ক্ষেপা হয়ে আছে । ফিরোজ আসলে বুঝতে পারছে না , এই মেয়ে হলে কি সমস্যা । ছোট মেয়ে টা যখন কোলের উপর বসে বসে আনমনে গল্প শোনায় তখন তার কি যে , ভাল লাগে !
ফাতেমার এক কথা । মেয়ে চিরদিন তার কোলে বসে থাকবে না । বিয়ে দিয়ে তাকে লিখিত পড়িত ভাবে পর করে দিতে হয় ।
এই কথা চিন্তা করে নি ফিরোজ । এই কথা চিন্তা করলে তার বুকটা হুহু করে ওঠে !

ইমাম সাহেব এসে বসে আছেন । তাকে খেতে দেওয়া হচ্ছে । তিনি আষান দেবেন বলে এসেছেন । তার আশে পাশে রাজিয়া ঘুরঘুর করছে । তার সাথে সে গল্প করছে ।

খাওযা শেষ হওয়া মাত্রই ! নবজাতকের চিত্‍কার শোনা গেল । হাত ধুয়ে এসে বসতেই ইমাম সাহেবের কোলে পৌছে গেল সদ্য জন্ম নেওয়া আদম সন্তান । উচ্চস্বরে আযান দিলেন ইমাম ।

আযানের শব্দে ঘুম ভেঙেছে ফিরোজের । সারা শরীর তার ঘামে ভেজা । বাসা জুড়ে একটা চাপা আনন্দের বান এসে পড়েছে ।

কিভাবে , কিভাবে যেন রাফিয়া ঘুম ছেড়ে উঠে পড়েছে । বোনের কোলে একটা সাদা মতন বাবু কে দেখে সে অবাক হল । তার অপ্রশস্ত পাজাকোলার মাঝে তার ছোট্ট একটা ভাই !!

ফিরোজ এবার উঠে বসেছে । লাইট জ্বেলে তার রুমে শ্বাশুড়ি ঢুকেছেন । আর তার দুই মেয়ে ।

রাফিয়া তার কোলের অতিথি কে নিয়ে বাবার দিকে এগিয়ে গেল । চিকন কন্ঠে বলল বাবা , দেখ ! নানু ভাই টাকে কোথা খেকে যেন নিয়ে আসছে !!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×