-বলো -চুপ করে আছো যে?
এই কথা বলে হাত ধরতে চায় অন্তু।এক
ঝটকায় হাতটা সরিয়ে দেয় অবন্তী।শেষ
বিকেলের সোনারঙা আলো ওর
চোখেমুখে এসে পড়ছে।তাতে ওর
চুলগুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে।
ফর্সা গালদুটো লাল হয়ে আছে।রাগে।খুব
রাগ করেছে ও।এবং যথারীতি অন্তু তার
রাগ ভাঙাতে হিমশিম খাচ্ছে।
-আমি কি করলাম অবন্তী?
-সারাদিন কোন রাজকার্য
করছিলে যে একটু খোঁজ নেয়া গেল না?
অন্তু চুপ হয়ে যায়।আজ দিনটা খুব
ব্যস্ততার মাঝে গেছে।সকালে বাজার
করা,দুপুরে টিউশনি করানো,কোচিংয়ে যাওয়া
সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ততা ছিল।এর
মাঝে অবন্তীকে ফোন দেয়ার সময়ই
পায়নি সে।
-আজ সত্যিই অনেক ব্যস্ত ছিলাম।
জানোই তো আমার রুটিন। -
হ্যাঁ জানবো না কেন?তোমার
রুটিনে তো সবই থাকবে কেবল আমিই নেই।
-এটা কি বললা?!!?
-ঠিকই বলেছি।
এই বলে ভেংচি কেটে অন্যদিকে মুখ
ঘুরিয়ে রাখে ও।অন্তুর প্রচন্ড খারাপ
লাগতে থাকে।
অভিমানী মেয়েটা কি বোঝেনা যে ওর
ছোট্ট মনে কেবল অবন্তীরই পায়েল
পড়া পায়ের আনাগোনা,কেবল অবন্তীরই
মায়াময় ঐ মুখ।
ছোট্ট এক ফুলওয়ালী এগিয়ে আসে।
-ভাইজান ফুল নিবেন?
-নাতো।বিরক্ত করিস না।যা।
-আপামণিরে দেন।নেন ভাইজান।
-বললাম তো নিব না।যা এখান থেকে।
ফুলওয়ালী চলে যায়।খানিকপরে আবার
আসে।
-ভাইজান নেন না একটা ফুল।আপামণি রাগ
কইরা আছে দেখা যায়।ফুল দেন।খুশি হবে।
অন্তু বেলীর মালা কেনে।অবন্তীর
দিকে ঘোরে।মেয়েটা এখন ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
অন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।কাঁদলেও
যে কখনো মানুষকে এত সুন্দর লাগে ও
জানেনা।মনের গভীরে কোথাও যেন বদ্ধ
আর্তনাদ হাহাকার করে ওঠে অন্তুর।
ভালবাসার মানুষটিকে কাঁদতে দেখলে কারই
বা ভালো লাগে?
-কাঁদছো কেন?
-অনেক সুখ যে আমার তাই।
-পাগলি একটা।এভাবে কাঁদলে চোখের
কাজল সব গালে মেখে যাবে।
-যাক তাতে তোমার কি?
-পরীর মতো সুন্দর মেয়েটাকে তখন
যে পেত্নীর মতো দেখাবে।
এই বলে গোলগোল চোখে অবন্তীর
দিকে তাকায় অন্তু।অবন্তী হেসে ফেলে।
কি সুন্দর ঐ হাসি!মুক্তোদানার মত।শেষ
বিকেলের আলোয় পরীর মতো সুন্দর
ভালবাসার মানুষটার
প্রাণখোলা হাসি অন্তুকে প্রচন্ড এক
ভালো লাগায় আচ্ছন্ন করে।
সন্ধ্যা হয়ে যায়।রাস্তার
নিয়নবাতি গুলো জ্বলে ওঠে।অবন্তীর
হাতে বেলীর মালা।অন্তু ওর
পাশাপাশি হাঁটছে।হাত ধরার চেষ্টা করতেই
অবন্তী চেঁচিয়ে ওঠে।
-হাত ধরবা না।এটা তোমার শাস্তি।
-আজব!আবার কি করলাম?
-এতক্ষণ যে একসাথে ছিলাম তখন
একটাবারের জন্যেও কেন বলোনি আই
লাভ ইউ?
অন্তু দাঁড়ায়।অবন্তীও দাঁড়িয়ে যায়।
রাস্তার এ জায়গাটায় আলোআঁধারীর
খেলা।অন্ধকার কোণে কোনো এক
প্রেমিকযুগলের বাড়াবাড়ি চোখের কোণায়
ধরা পড়ে।সেদিকে পাত্তা দেয়না দুজনের
কেউই।অবন্তীর চোখের দিকে তাকায়
অন্তু।কয়েক মূহুর্ত কেবলই পলকহীন
অপেক্ষা।তারপর অন্তু বলে ওঠে-
ভালোবাসি তোমায় অবন্তী।
-এই কথাটা এতক্ষণে বললেন উনি।হুহ।
-আবার?অবন্তী প্লিজ আজকের
মতো অভিমান বাদ দাও।
-আমি যা করি তাতেই তুমি বিরক্ত হও।
অন্তু কথা বাড়ায় না।ওর খারাপ
লাগতে থাকে।হাঁটতে থাকে দুজন।
অবন্তী আলতো ছোঁয়ায় অন্তুর
হাতটা ধরতে যায়।অন্তু থমকে দাঁড়ায়।
অবন্তী অন্তুর চোখের
দিকে তাকিয়ে আবেগমাখা কণ্ঠে বলে ওঠে-
ভালবাসি তোমায়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮