somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১০ই নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনের একটি শোকাবহ দিন

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০ই নভেম্বর ১৯৮৩ ইং, যেদিনটিতে ঘাতক দালালচক্র প্রীতি গ্রুপ জুম্ম জনগনের অগ্রপথিক, স্বপ্নদ্রষ্টা, বুদ্ধিদীপ্ত, মহান নেতা এম এন লারমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিন্তু এই দালালগিরি মহান এমএন লারমাকে হত্যা করতে পারলেও উনার স্বপ্নকে রুখতে পারেনি। তাইতো এখনো টিকে আছে তাঁর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ। তাঁর স্বপ্নকে অভিগম্যপথে দৃষ্টিরক্ষেত্র রয়েছে বলে আজও জুম্ম জনগন সেই স্বপ্নটিকে তাদের নিজের স্বপ্ন হিসেবে দেখে, তাঁর স্বপ্নকে সামনে রেখে এখনো জুম্ম জনগন তাদের নৈতিক দাবী আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত।



এই ১০ই নভেম্বর মহান নেতাকে মৃত্য দিয়েছে সঠিক, কিন্তু এই দিনটিতে তাঁর স্বপ্ন গেঁথে গেছে প্রতিটি জুম্ম জনগনের রক্তে। এই সেই মহান নেতা যিনি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে দাবি আদায় করতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন সামাজিক অনাচার, অত্যাচার, নির্যাতন, শোষন, লুন্ঠন ও জাতিগত নিপীড়নের হাত থেকে জুম্ম জনগনকে বাঁচাতে।

এই সেই মহান নেতা যিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুম্ম জনগনের স্বকীয়তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বলে প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রতিবাদ করেছিলেন সংবিধানের মাধ্যমে চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা, তনচংগ্যা, মুরং, বম, ওরাও, সাঁওতাল, কোচ, গারো সহ অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীসমূহকে তাঁদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, জাতি পরিচয় থাকা সত্বেও স্বরসঙ্ঘাত করে বাংগালি বানানো হয়েছিলো বলে। জোর করা হয়েছিলো সবাইকে নিজস্ব জাতীয় পরিচয় ভুলে বাংগালি হয়ে যেতে।

কিন্তু সংসদে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা তাগড়াই উত্তেজনায় প্রতিবাদ করেছিলেন যে,“আমি বাঙালি নই” “আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি , সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে বাস করে আসছে । “বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সাথে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সব দিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে একযোগে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমি একজন চাকমা। আমার বাপ, দাদা, চৌদ্দ পুরুষ – কেউ বলে নাই আমি বাঙালি”

একদিকে জুম্ম জনগনের অশ্রুতে নির্মিত পাকিস্তান আমলের কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ, অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতিগত বৈষম্য। সবকিছুই কেবল কাঁদিয়েছিলো এই জুম্ম জনগনকে। শোষণমুক্ত সুন্দর স্বাধীন বাংলাদেশকে রূপ দিয়েছেন এই বাংলার দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে শুধুমাত্র শোষন, নির্যাতন ও বঞ্চনাকে চিরতরে দ্বীপান্তর করার জন্য।

যার আচ্ছাদন থেকে মুক্তি মিলেনি পার্বত্য জুম্ম জনগনের। যার নৈতিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহান নেতা এমএন লারমা। কিন্তু জুম্ম জনগনের এই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয় কয়েকটিমাত্র ভ্রান্ত অজুহাতে। ফলে জন্ম নেয় "শান্তি বাহিনী", পরে যা জনসংহতি সমিতির আর্মড ক্যাডার নামে পরিচিত হয়।

তারপরেও মহান নেতা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ন সমাধানের পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর সেই খোলা পথটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাড়তে থাকে জুম্ম জনগনের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন, ভূমি দখল। আর এইসব কারনে বাড়তে থাকে জুম্ম জনগনের প্রতিরোধ। এই প্রতিরোধে সুদক্ষ নেতা ভালোভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই প্রতিরোধে ভাটা পড়ে শান্তিবাহিনীর বিভাজনের কারনে।

বিভাজন শান্তিপূর্ণভাবে সামাল দিতে চেয়েছিলেন মহান নেতা এমএন লারমা। নিজেকে শান্তিকামী রেখেই কয়েকজন শান্তি হন্তারকের কাছে নিজের জীবন দিতে হয় মহান নেতাকে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত রেখে শুধু স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিলেন বলেই তাঁকে আজ জীবন দিতে হলো। কিন্তু তাঁর শান্তিময় স্বপ্নে শান্তিহন্তারককারীরা হাত দিতে পারেনি। তাই আজো অম্লান তাঁর সেই স্বপ্ন গুলো। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় বাঙ্গালিদের কাছে তিনি এখনো খলনায়ক, বিভেদপন্থ।

নিপীড়িত জাতি ও মেহনতি মানুষের একনিষ্ঠ বন্ধু মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা উপলব্ধি করে গেছেন,
“আজকে যারা কলকারখানায় চাকা ঘুরাচ্ছেন, যাঁদের রক্ত ছুঁইয়ে আমাদের কাপড়, কাগজ তৈরী হচ্ছে সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কথা সংবিধানে নেই”

কারন তিনি নিজের জাতিসত্ত্বাকে শোষন, নিপীরণ, লুন্ঠন থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, রক্ষা করতে চেয়েছিলেন নিজের জাতিকে। বৈশিষ্ট্যসমূহকে। মৃত্যু বরন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের সাথে রাখতে চেয়েছিলেন বলে। বাংলাদেশ জুম্ম জনগনকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি সত্যি, কিন্তু তিনি মহান নেতা এমএন লারমা বাংলাদেশকে আপন দেশ মনে করেছেন। ভালোবেসেছেন বাংলাদেশকে, ভালোবেসেছেন বিভিন্ন আদিবাসী জাতিসত্ত্বাক্বে।



মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্ম ও কর্মজীবন পাহাড়ী জনপদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পার্বত্য জনপদের মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজে নিবেদিত এই মানুষটি ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজ দলীয় বিভেদপন্থীদের হাতে নিহত হন।

ছবি কার্তেসীঃ বিনয় ত্রিপুরা
লেখক: নিউটন তালুকদার ফ্রান্স(Daily CHT Admin)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×