somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেয়া তুমি কি জানো (সরস্বতী পূজা)

২১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসন্তের সেই সকালটা অন্য রকম ছিল। ঢাকার আকাশে হালকা মেঘ, কিন্তু বাতাসটা ছিল সুন্দর, ঠান্ডা। শারদীয় দুর্গাপূজার আবহের মধ্যেই আজ সরস্বতী পূজা।

তোমার অনেকদিনের ইচ্ছা তুমি জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা দেখতে যাবে,আজ সেই দিন,

ঘুম ভেঙে তোমাকে কল দিলাম,
ঘুমের ঘোরে তোমার কন্ঠস্বর যেন আমাকে মাতাল করে দেয়।
কি জেনো এক অদ্ভুত সুর থাকে তখন তোমার কন্ঠে,
আমি তখন হারিয়ে যাই , কোনো এক স্বর্গীয় সুরের মূর্ছনায়।
যেন এক অপসারী আমার সাথে কথা বলে তখন।

সেই স্বর্গীয় সুরের মূর্ছনায় আমার যেন ঘোর কাটে না,
ঠান্ডা সকালে , তুমি একটু আলসেমি করছিলে, আর আমারও খুব মজা লাগছিল, মনে হচ্ছিল, আমি যেন তোমার সাথেই এক কম্বলের নিচে শুয়ে আছে তোমাকে জোড়িয়ে।

এরপর তুমি আলতকরে কম্বল থেকে উঠে ফ্রেস হলে,
আর আমি তোমার সাথে কথায় মগ্ন, যেন এক স্বর্গীয় সুখে।
তুমি শাড়ি পরলে, কপালে টিপ দিলে আর চুলে খোপা করলে, যদিও তোমার চুলে খোপা করতে কস্ট হচ্ছিল , আমি জানি তাই আমি তোমাকে বার বার বলতেছিলাম তোমার খোলা সিল্কি চুলের হারিয়ে যায় আমার মন,
কিন্তু তবুও তুমি চুলে খোপা করলে অনেক কস্টে।

জানো কেয়া তখন না, আমার তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল আর তোমার খোপাতে একটি রক্ত গোলাপ গুজে দিতে চেয়েছিলাম , আমি জানি তখন তোমাকে স্বর্গের অপসারীর থেকেও বেশি সুন্দর লাগছিল।
কিন্তু আমি তোমাকে এটা বলিনি,

কি এক অলৌকিক ভাবে তুমি আমার মনের কথা বুঝে গেলে আর আমাকে বললে, তুমি চলে আসো উত্তরা মেট্রোরেল স্টেশনে।
জানো তখন আমি কিছুক্ষন ভাষা হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছিলাম আর খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম।

তারপর , আমি তারাহুরো করে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম আর মনে মনে ফুলের দোকান খুজতেছিলাম।
অবশেষে একটা ফুলের দোকান পেয়েও গেলাম আর তোমার জন্য অনেক সুন্দর একটা রক্ত গোলাপ কিনেলাম আর রিক্সায় করে মেট্রোরেলের দিকে রওনা দিলাম।

অবশেষে সেই মূহুর্ত এলো, যার জন্য আমি হাজার বছর ধরে অপেক্ষায় করেছিলাম এই ইহলোকে। তুমি কিছুটা অপ্রস্তুত ছিল, আমিও।

তুমি শাড়ি পরেছিল। নীল আর সাদা রঙের মিশেলে, যেন আকাশ আর মেঘ একসঙ্গে জড়িয়ে আছে। মাথায় খোঁপা, ছোট্ট একটা গাজরা, কপালে ছোট্ট টিপ। চোখে চোখ পড়তেই মনে হলো, সময় যেন একটু ধীর হয়ে গেল, চারিদিক যেন ব্লার হয়ে গেলো আর আমার চোখে শুধু এক অসম্ভব সুন্দর এক দেবী।
বাতাসে তোমার আঁচল উড়ে গেল একপাশে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম,
নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে, আমি তোমাকে সেই রক্ত গোলাপটা দিলাম, তুমি খুব অবাক হয়েছিলে কারণ আমি ফুলটুল দেই নাই তোমাকে বা কেউকেই আগে।
তুমি অনেক খুশী হয়েছিলে তখন,
কেয়া তুমি কি বুঝছিলে, সেই রক্ত গোলাপের রং যে আমার রক্ত দিয়ে লাল করেছিলাম?
আমি ভিভোর হয়ে তোমার রুপের প্রেমে পাগল হয়ে তোমার দিকে ফেল ফেল করে চেয়ে রইলাম,
হঠাৎ , আমি খেয়াল করলাম, তোমার শাড়ির পিছনের পাইরে একটু ভাজ হয়ে আছে, একা একা শাড়ি পড়ছ তাই খেয়াল করতে পারো নি তাই আমি তোমাকে না বলেই তোমার পায়ের নিচে হাত দিয়ে শাড়ির ভাজ ঠিক করে দিলাম,
তুমি অবাক হয়ে একটু লজ্জা পেলে,
আর তখন আমার মনে এক সাহিত্য রচনা হচ্ছিল তোমাকে নিয়ে,
জানো কেয়া তোমার সৌন্দর্য ছিল ঠিক যেন সরল অথচ রহস্যময় কোনো কবিতা।
নীল-সাদা শাড়িটা তোমার গায়ের সঙ্গে এমনভাবে মিশে ছিল, যেন ওটা কোনো পোশাক নয়,তোমার আত্মারই এক অংশ। বাতাসে যখন শাড়ির আঁচল উড়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল তুমি কোনো অপসরা, যার গতি থামিয়ে দেওয়া অসম্ভব,
তোমার চোখ দুটো গভীর ছিল—গাঢ়, শান্ত, কিন্তু ভেতরে যেন এক অদ্ভুত আলো জ্বলছিল। কপালের ছোট্ট লাল টিপটা তোমাকে আরও মায়াবী করে তুলেছিল, ঠিক যেন পূজার প্রদীপের আলোর মতো নরম, কিন্তু দৃঢ়। চোখে হালকা কাজলের ছোঁয়া, ঠোঁটজোড়া হালকা হাসিতে ভরা—একবার তাকালে দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে থাকা অসম্ভব।

তোমার চুল ছিল খোলা, কিন্তু হালকা খোঁপায় বাঁধা, আর তাতে ছোট্ট একটা গাজরা—ফুলের সুবাস যেন তার চারপাশে মো মো করছিল।
হাতে একগুচ্ছ চুড়ি, কানের দুলগুলো দোল খাচ্ছিল হালকা বাতাসে। হাঁটার সময় শাড়ির ভাঁজের নিচে তোমার নূপুরের শব্দ যেন মেট্রো ট্রেনের যান্ত্রিক শব্দকেও ছাপিয়ে যাচ্ছিল।

কেয়া তুমি শুধু সুন্দর ছিলে না, তুমি ছিল একেবারে পূজার প্রতিমার মতো—শান্ত, নির্মল, এবং অদ্ভুতভাবে সম্মোহনী। আমি তাকিয়ে ছিলাম, মুগ্ধ হয়ে, যেন সেই মুহূর্তে সময় থমকে গেছে, আর আমি কেবল তোমাকে দেখেই হারিয়ে যাচ্ছিলাম।

কেয়া তুমি যেন কোনো এক কবিতার বাস্তব রূপ। তুমি যখন মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন আশপাশের ব্যস্ততা একেবারে ম্লান হয়ে গিয়েছিল। মানুষজন আসছে-যাচ্ছে, কেউ ব্যস্ত, কেউ তাড়াহুড়ো করছে, কিন্তু আমার দৃষ্টি আটকে ছিল কেবল তোমার দিকেই।

তোমার শাড়ির নীল ছিল যেন বর্ষার আকাশের মতো গভীর, আবার সাদা অংশটা ঠিক কাশফুলের মতো কোমল। বাতাসে তার আঁচল একবার উড়ে গেলে, মনে হচ্ছিল যেন ঢাকার মেট্রো স্টেশন নয়, বরং কোনো দূর দেশের মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি।

তোমার চোখের দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল, তুমি যেন কিছু বলতে চাও, আবার লুকিয়ে রাখতে চাও। চোখের পাতায় হালকা কাজল, সেই গভীর চাহনি যেন মনের মধ্যে ঢুকে যায় নীরব কোনো ঝড়ের মতো। তোমাকে ঠোঁটের কোণে একটা হালকা হাসি ছিল—যেন তুমি নিজেও জানো, আমি তাকিয়ে আছি, কিন্তু তুমি কিছু বলবে না, শুধু আমায় দেখতে দেবে।

তোমার হাতে কিছু চুড়ির মৃদু শব্দ হচ্ছিল, আর যখন তুমি একটু হাটলে, তখন নূপুরের একটা নরম ঝংকার শুনলাম। তুমি কি বুঝতে পারেছিলে, আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সম্মোহনে ? হয়তো বুঝেছিল, কিংবা হয়তো আমাকেও একটা পরীক্ষা নিচ্ছিলে।

হঠাৎ ট্রেন এলো, হালকা বাতাসের একটা ঝাপটায় তোমার চুল উড়ে গেল একপাশে। তোমার চুলের গন্ধটাও যেন বাতাসে মিশে আমার কাছে এল—একটা মিষ্টি, নরম সুবাস, যা মুহূর্তেই আমার হৃদয়টাকে পাগল করে দিল।

তারপর ধীরে ধীরে ট্রেনে চলে আসার সময় হয়ে গেলো। আমি কি তোমার সাথে যাব নাকি অফিসে যাব তারমাঝেই ভাবনায় হারালাম ? নাহ, হয়তো আজ নয়। হয়তো আমাদের পরের অন্য আরেকটা পূজায়, আরেকটা শারদীয় বিকেলে তোমার সাথে যাব, যখন আবার তুমি শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর আমি হারিয়ে যাব তোমার সৌন্দর্যে, ঠিক আজকের মতো করে।
আজ তুমি তোমার বন্ধুদের সময় দেও আমি না হয় পরে তোমার সময় নিব।

তুমি জানো কেয়া আর আমি মনে মনে ভাবলাম—এটাই সেই মুহূর্ত, যা সারাজীবন মনে থাকবে আমার।
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×