somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের অন্য প্রান্ত থেকে - কেয়া

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দশ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে।
কিন্তু আজও বিমানবন্দরের সেই শেষ দেখা আমার চোখে জমে আছে ছবির মতো—
কেয়া-এর সেই শেষ আলিঙ্গন…
যেন মৃত্যুর হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখা একটা শেষ উষ্ণতা।
তারপর জীবন চলেছে।
বা ঠিক বলা ভালো—আমি বয়ে গেছি। আমি ছিলাম, বেঁচে ছিলাম না।
Corporate অফিসে চাকরি, KPI, email, meeting—
আমি যেন একজন মানুষ নয়…
একটা নিখুঁতভাবে প্রোগ্রাম করা যন্ত্র।
কেয়া ছিল দূরে, খুব দূরে।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দুই-একটা মেসেজে আমরা ভেসে যেতাম।
ফাঁকটা বুঝতাম, দূরত্বটা টের পেতাম—
তবুও ভালোবাসা ছিল, আছে…
অটুট, অনন্ত, অমর।

এই বছরের শুরুতে হঠাৎই আমার টিমে যোগ দিলো একজন নতুন একজন—
নাম তার নীলা।
রাঙামাটি-চাঁদপুর-বরিশালের মতো কোনো মফঃস্বল শহর থেকে আসা মেয়েদের যে রঙ, যে নরম আলো থাকে—
সেটা ওর চলে, ওর পোশাকে, ওর চোখে স্পষ্ট।
চোখের ভেতরে একধরনের নীরব স্বপ্ন,
মনের ভেতর শিশিরভেজা সরলতা,
আর শরীরে একটা কোমল সুবাস—যেন মাটির সাথে মিশে থাকা বৃষ্টি।
ওকে দেখলেই মাথায় বেজে উঠতো Children of Bodom-এর গান—
“She Is Beautiful.”
এক দশক পর প্রথমবার আমি অনুভব করলাম—
হৃদপিণ্ডটা যেন সত্যিই স্পন্দিত হচ্ছে।
একটা অচেনা উষ্ণতা।
একটা অদ্ভুত মায়া…
যেন ওকে আমি আগে কোথাও দেখেছি, কোথাও ছুঁয়েছি, কোথাও অনুভব করেছি।
আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম—
“আমি কি ওর প্রেমে পড়ছি?”
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আরেকটা কণ্ঠ বললো—
“না, এটা ভুল… এটা হওয়া উচিত না।”
কিন্তু মানুষ তো মানুষই।
অনুভূতি তো যুক্তিগণিত চেনে না।

যতই দিন গেছে, নীলা আমাকে টেনে নিয়ে গেছে এক অজানা নরম জগতে।
অচেনা অথচ অদ্ভুতভাবে চেনা।
আমি ওর মন পড়তে শুরু করলাম—
কারণ আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন আমি এমন অনুভব করি।
অবাক হয়ে দেখলাম—
নীলা-র ভিতর কেয়া-এর একটা বিশাল প্রতিচ্ছবি।
চোখ, হাসি, স্বপ্ন, ভয়, বেদনা—
সবকিছুতে যেন কেয়া-র একটা ছায়া।
আমার মনে হলো—
কেয়া অন্য কোনো মহাবিশ্ব থেকে নীলা হিসেবে আমার জীবনে ফিরে এসেছে।
নীলা-র সাথে কথা বলতে বলতে আমি ফিরে গেলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।
ফিরে গেলাম সেই বসন্তে,
যে বসন্তে কেয়া আমার জীবনে প্রথম আলো হয়ে ঢুকেছিল।
অফিসের করিডোর, সিঁড়ি, ক্যান্টিন—সব যেন কেয়া-র স্মৃতি দিয়ে ভরে উঠলো।
আর আমি প্রথমবার অনুভব করলাম—
আমি আবার বেঁচে উঠছি।
আমি আবার রঙ দেখতে পাচ্ছি।
আমি আবার মানুষ হয়ে উঠছি।

কিন্তু সময় কখনো উদার হয় না—
আর তার কাছে কেউ প্রিয়ও না।
কয়েক মাস পর বুঝলাম—
এই মহাবিশ্বেও নীলা আমার হবে না।
তার নিজের স্বপ্ন আছে, নিজের পথ আছে।
আর সেই পথে আমার জন্য কোনো জায়গা নেই—
যেমন কেয়া-র জীবনে আমি ফিট হতে পারিনি,
ঠিক তেমনই নীলা-র জীবনেও আমি জায়গা পাবো না।
বসন্তটা আবার শুকিয়ে গেল।
আমি আবার ফিরে গেলাম আমার পুরনো সঙ্গীর কাছে—
গাজার পটে।
আরেকবার নিস্তব্ধতার ধোঁয়ায় ডুবে গেলাম।
তবুও নীলা আমাকে একটা বিশাল অনুভব দিয়ে গেল—
আমার অনুভূতির প্রতিটি গিঁটের মধ্যে কেয়া লুকিয়ে আছে।
আমি যতই কেয়া-এর কথা ভাবি বা কেয়ার সাথে কথা বলি —
নীলা কোথা থেকে আর কিভাবে যেন আমার মজগে চলে আসে,
এখন আমার কাছে মনে হয় —
“আমি নিজের মধ্যেই একটা অচেনা মানুষ।”

আজ আমি জানি না আমি কে।
কোন মহাবিশ্বে আমি শ্বাস নিচ্ছি,
কোন জীবনে আমি বেঁচে আছি,
কোন জন্মের স্মৃতি আমাকে তাড়া করে ফিরছে।
কিন্তু একটা জিনিস জানি—
এই অনুভূতি কোনো সাধারণ অনুভূতি নয়।
এটা পুনর্জন্মের মতো, , cosmic connection-এর মতো কিছু।
কেয়া চলে গিয়েছে,
নীলা এসে চলে গেছে,
আমি আবার একা হয়ে আছি—
কিন্তু আমার ভিতরের সেই পরিচিত অচেনা মানুষটা…
সে আজও জেগে আছে।
এবং তার কাছে একটাই প্রশ্ন—
“কোন মহাবিশ্বে কেয়া আর আমি আবার এক হবো?”
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×