somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'দ্য ডে অব দ্যা জ্যাকল' সিনেমা এবং সত্যিকারের গুপ্তঘাতক

২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আলজেরিয়াকে স্বাধীন ঘোষনা করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গল কিছু সামরিক এবং সরকারী অফিসারের চক্ষুশূলে পরিনত হন। একদি বিদ্রোহী দল গড়ে উঠে, যার নাম 'ওএএস'। প্রেসিডেন্টকে হত্যার একটা চেষ্টা হয় বটে কিন্তু ব্যর্থ হ্ওয়ায় হামলাকারীরা এবং তাদের নেতৃবৃন্দ ফাসিকাষ্ঠে ঝুলেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আধ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একজন হিটম্যানকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার আসল নাম কেউ জানে না, শুধু জানে তার নাম 'দ্য জ্যাকল'।

এই দ্য জ্যাকল এর হত্যাপ্রস্তুতি এবং তাকে ঠেকানোর জন্য সরকারী প্রচেষ্টা - এই নিয়েই সিনেমা - দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল। ১৯৭৩ এ নির্মিত সিনেমা বলে হয়তো একটু পুরোনোই লাগবে সিনেমাটি, কিন্তু তাই বলে এর উত্তেজনা মোটেও পুরোনো হয় নি। পাক্কা ১৪০ মিনিটের এই সিনেমাটির গল্প নেয়া হয়েছে বিখ্যাত লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের একই নামের উপন্যাস থেকে। উপন্যাসটিই দ্য জ্যাকল নামের একজন হিটম্যানকে বিখ্যাত করে তোলে। দেখা যায়, নানাভাবে হিটম্যানের সাথে দ্য জ্যাকল নামটি মিশে আছে।

আমরা যে বর্ণ ট্রিলজি দেখে জেসন বর্ন এর ভক্ত বনে গেলাম, সেই জেসন বর্ণের মূল শত্রু কিন্তু আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিস ছিল না। রবার্ট লুডলাম তার বর্ণ আইডেন্টিটি উপন্যাসে কার্লোস নামে এক চরিত্রকে সৃষ্টি করেছেন যা উপন্যাসটিকে সিনেমার চেয়ে বহুগুনে সমৃদ্ধ করেছে- প্রকৃতপক্ষে সিনেমায় কার্লোস নামে কোন চরিত্রই নেই। এই কার্লোস এমন এক ব্যক্তি যে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন হত্যাকান্ডে অংশ নেয় অথচ কেউ তার নামটি জানে না, তার কোন ছবি কোথা্ও সংরক্ষিত নেই - আর জেসন বর্ণকে তৈরী করা হয়েছে এই কার্লোসকে ধরার জন্য। মজার ব্যাপার হলো, বর্ণ আইনেডেন্টিটিতে ভিলেন কার্লোস হলেও পরবর্তী খন্ডগুলোতে তার নাম হয়ে যায় কার্লোস দ্য জ্যাকল। কারণ কি?


সত্যিকারের জ্যাকেল

কারণ ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের উপন্যাস দ্য ডে অব দ্যা জ্যকল মুক্তি পেয়ে গেছে এবং সমসাময়িক বিশ্বে কিছু ঘটনাও ঘটে গিয়েছে। ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের উপন্যাসের হিটম্যান নিজেকে দ্য জ্যাকল নামে পরিচয় প্রদান করে যার কোন পূর্ব পরিচয় কারো জানা ছিল না। এমনকি পুলিশও চেষ্টা করেও নানান ফন্দিফিকির করে তার আসল তথ্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হয়, তাই দ্য জ্যাকল এর মৃত্যুর সাথে সাথে তার আসল পরিচয়টিও হারিয়ে যায়।


সিনেমার একটি দৃশ্য

উপন্যাসে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে, বাস্তবে যে ঘটে না তা নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিপাওয়া উপন্যাসটি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে বোধহয় এর সমসাময়িক কার্লোসের ভূমিকা বেশী। ইলিচ রেমিরেজ সানচেজ নামের এক ভেনিজুয়েলান ফ্রান্সে খুন করার দায়ে তখন ফেরার, বেশ কিছু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে তাকে খুজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় নিজেকে যুক্ত করে কার্লোস। প্যালেস্টাইন, লেবানন, ইরাক সহ বেশ কিছু দেশে ইসলামিস্ট, কম্যুনিস্ট এবং আরব ন্যাশনালিস্টদের সাহায্য করে সে - এ কাজে তার মিলিটারী প্রশিক্ষন বেশ সাহায্য করেছিল। ফেরার এই কার্লোস রিমিরেচ সানচেজকে মাথায় রেখেই হয়তো ফ্রেডিরিক ফোরসাইথ তার উপন্যাসটি লিখেছিলেন, সে সময় সানচেজ বাববার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন। এই ইলিচ রামিরেজ সানচেজ কতটা ভয়ংকর ছির সেটা জানা যাবে ব্লগার সৌম্যর এই পোস্ট থেকে।

ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ সত্যিই এই কার্লোসকে নিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন কিনা সেটা জানা না গেলেও কার্লোস রূপান্তরিত হয় কার্লোস দ্য জ্যাকেল। একই সাথে রবার্ট লুডলামের উপন্যাসের কার্লোস রূপান্তরিত হয় কার্লোস দ্য জ্যাকল এ, যদিও দুজনের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন ছিল। সুতরাং কার্লোস দ্য জ্যাকল হয়ে গেল বিখ্যাত এক চরিত্র। বাস্তবের কার্লোস দ্য জ্যাকল অবশ্যই উপন্যাস বা সিনেমার মতো এত ধুরন্ধর হতে পারেনি, তাই ১৯৯৪ সালে সুদানে ধরা পরে এবং এখন জেলখানায় বন্দী জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে - কারাদন্ড যাবজ্জীবন।

ফ্রেড জিনেমানের পরিচালনায় কার্লোস দ্য জ্যাকল সারা বিশ্বের দর্শকের সামনে আসে। এড্ওয়ার্ড ফক্স নামের একজন অখ্যাত অভিনেতাও পরিচিত হয়ে উঠেন তার এই চরিত্রটির মাধ্যমে। ফিল্ম এডিটিঙ এর জন্য অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেও জিততে পারেনি 'দ্য জ্যাকল'। ক্ষতি নেই, কারণ বিশ্বের সেরা সিনেপর্দার হিটম্যান এর তালিকায় দ্য জ্যাকল এর অবস্থান সবসময়ই সেরা দশে।

=============================================
ফেসবুকে দারাশিকো'র ব্লগের সাথেই থাকুন
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৫৫
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×