somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব-ই-বরাতের হালুয়া রুটি জর্দা সেমাই

০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই সময়ে বাংলাদেশে শব-ই-বরাত মানে হলো শব-ই-বরাত পন্থী আর পরিপন্থীদের মধ্যে জায়েজ-নাজায়েজের বিতর্ক। শব-ই-বরাত বলে কিছু আছে কি-না, রাসূল (স) এর সময়ে পালন করা হতো কি-না,পক্ষের লোকজন যে সকল সূত্র বা হাদীস উপস্থাপন করেন সেগুলো ঠিক কি-না এই নিয়া বিতর্ক যেমন আছে, তেমনি মধ্য শা'বানের রাত্রি হিসেবে ইবাদত বন্দেগী করা গেলেও হালুয়া রুটি জর্দা পায়েস খাওয়া জায়েজ হবে কি-না সেই নিয়াও বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের মধ্য দিয়া পন্থী ও পরিপন্থী গোষ্ঠির লোকজন ব্যাপক সওয়াব কামাই করে নেয়। কিন্তু এই দুই পন্থী ছাড়াও আরেকপন্থী আছে, তারা হলো মধ্যপন্থী।

এই দলে আছে আমার মতো লোকজন - এরা জায়েজ-নাজায়েজ নিয়া চিন্তা করে না বরং শব-ই-বরাতের ছুটি কি বারে পড়ল তাই নিয়া চিন্তা করে, কোথাও হালুয়া-জর্দা-পায়েস লেখা দেখলেই এদের জিহবায় পানি চলে আসে, খাওয়া সঠিক না বেঠিক - সেটা ভাবার সুযোগটাই পায় না। শব-ই-বরাত পালন করা না করা নিয়ে বাকী দুই পন্থী লোকজন যতটা না কষ্টে পায়, তার চেয়ে বেশি কষ্টে যন্ত্রণায় অনিশ্চয়তায় ভুগে এই মতো মধ্যপন্থী জনগণ। একে তো পন্থীদের স্ট্যাটাস-ছবি-ভিডিওতে দেখতে থাকে সেমাই জর্দা আর হালুয়া, অন্যদিকে পরিপন্থীদের প্রচার এস্টাবলিশড হয়ে গেলে ভবিষ্যতের রুটি হালুয়ার কি হবে ভেবে বিড়বিড় করে বলতে থাকে লা হাওলা.. লা হাওলা।

জোহরের সময় হুজুর শব-ই-বরাতের রাত্রের ইবাদত বন্দেগীর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করলেও হালুয়া-জর্দা খাওয়া নিয়ে কিছু বলে নাই। প্রথমে একটু দুঃখ লাগলেও পরে বুঝলাম - হুজুর তো খাইতে নিষেধও করে নাই। অফিস থেকে বের হয়েই দেখি বিশালাকৃতির সব রুটি বিক্রি হচ্ছে, বেকারির দোকানে ভীড়। ঠেলেঠুলে দেখলাম - নতুন কিছু আসলো কি-না। এই বেকারির লোকজন সম্ভবত বলেন বিএনপিপন্থী, নাহয় চামচামির অভ্যাস নাই। কারণ তারা কুমির, মাছ, কুলা, পাখি ইত্যাদি ডিজাইনের রুটি বানালেও পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল কিংবা রূপপুরের আদলে কোন রুটি বানায় নাই। পত্রিকায় দেখলাম - আজকে নাকি তর্জনী ব্রাউজার উদ্বোধন করা হইছে, আমি বেকারির মালিক হইলে আজকে আমি তর্জনীর মতো রুটি বানায়ে পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাইতাম।

ফেরার জন্য গাড়িতে উঠে দেখি - সহযাত্রীর হাতে লাল ব্যাগ। সেই ব্যাগের মধ্যে লাল বাটি আর লাল বাটির স্বচ্ছ ঢাকনা দিয়ে লাল লাল জর্দা উঁকি দিচ্ছে। আরেকজনের ঘরে চোখ দেয়া অন্যায়, কিন্তু মন পড়ে থাকলে কি হবে জানা নাই, তাই চোখ সরালেও মনটাকে আর সরানোর চেষ্টা করিনি। কি দরকার শুধু শুধু মনটাকে কষ্ট দেয়ার। মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা তো সমান, তাই না

ঘরে ঢুকেই মনটা জুড়িয়ে গেল। বিবি প্রাচীনপন্থী, বোধহয় শব-ই-বরাত পন্থী-পরিপন্থীদের ক্যাচালে এখনও ঢুকেনি, তাই খেটেখুটে সুজির হালুয়া বানিয়েছে। বললাম - ঘটনা কি? বলল, কুমীর রুটি কিনতে চেয়েছিল, দাম শুনে মনে হয়েছে - কুমীরটা কামড়ে দিয়েছে। মনের দুঃখে হালুয়া বানিয়ে ফেলেছে। বললাম, কুমীর থেকে ছাড়া পাইছো? বলল, কুমীরটা ছাড়ছিল না, তাই বাধ্য হয়ে মোরব্বা রুটি ওভেনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওভেনের গরমে কিনা জানিনা, কুমীরটা আর দেখা যাচ্ছে না।

ফ্রেশ হয়ে দেখি মোরব্বা রুটি তৈরি। গরম গরম রুটিতে কামড় দিলাম, রুটির শরীর ভেদ করে দাঁতগুলো যখন মোরব্বার পিঠে বসে পড়ল, জিহবাটা তখন মোরব্বার স্বাদ নেয়ার জন্য লকলক করছে। কুমীরের মত টান দিয়ে মোরব্বাসহ রুটিটা ছিড়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি - বিশাল একটা হলদে লাড্ডু আকাশে ঝুলে রয়েছে।

এত চমৎকার লাড্ডু আকৃতির চাঁদ দেখে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম - আজকে রাতে ইবাদত বন্দেগী করতেই হবে। না চাইতেই আকাশের ঐ লাড্ডুর কারিগর মোরব্বা রুটি আর হালুয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, চাইলে না জানি কত কি দিবেন!

অন্যান্য রম্য পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:১৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×