somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃত্তালপনা- অত:পর তাহারা! (১)

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১

সময়: বিকেল ৪.৪৫।
টি.এস.সির ভেতরে বারান্দার ঠিক মাঝামাঝি একটা জায়গায় একা একা বসে ছিল একটি মেয়ে।




শ্যামলা, ছিপছিপে গড়ন, চোখে-মুখে একটা স্পষ্ট কাঠিন্য। ঘর্মাক্ত চেহারায় চিন্তা আর অস্থিরতা ছাপ। খুলে রাখা লম্বা চুলগুলোকে একটু পর পর খুব সন্তপর্ণে ঠিক করে নিচ্ছিল। কপালে বিরক্তির রেখা টেনে বারে বারে মুঠোফোনটির দিকে তাকাচ্ছিল মেয়েটি! আশা করছিল একটা ফোন-কলের।

-উফ্!!বিরক্ত লাগতেছে!
-ধূর! চলে যাবো নাকি??
-নাকি আরেকটা ফোন দিয়ে দেখব?
-নাহ্! আমি ফোন দিব ক্যান?
-একবার দিছি। ধরে নাই! আমি আর দিব না! যার দেখা করার কথা তার যদি মাথা ব্যথা না থাকে তাইলে আমি ক্যান তারে নির্লজ্জের মত বারবার ফোন দিব!??


কথাগুলো নিজেই নিজেকে বলল তরু। খুব ইগো-কনফ্লিকশানে ভুগছিল মেয়েটা! ছেলেটার সাথে আজ দেখা করার কথা! সময় ঠিক করা হয়েছিল বিকেল চারটা বেজে তিরিশ মিনিট। অথচ অলরেডি পনের মিনিট পার হয়ে গেছে!

-যাদের সময় জ্ঞান নেই তারা কেন অন্যকে এক্সাক্ট টাইমে আসতে বলে নিজে দেরি করে?

আজকে শুক্রবার। তাই প্রতিদিনের চে আজ টি.এস.সি একটু বেশিই জমজমাট। চারপাশে তরুণ-তরুণীরা জুটি বেঁধে বসে আছে। কেউ কেউ হাতে হাত রেখে আবার কেউ কাঁধে মাথা রেখে বসে বসে বন্ধু বা বান্ধবির সাথে জীবনে কি পেল আর কি হারালোর হিসেব মেলাচ্ছে। কয়েকটা কাপলের উগ্র আচরণে তরু ভ্রুকুটি করতে থাকে।

-পাবলিক প্লেসকে কেন যে মানুষ নিজের ড্রয়িংরুম বা বেডরুম ভেবে বসে থাকে! অসহ্য!!




কারো জন্য ওয়েট করার অভ্যাস নেই তরুর। আর এভাবে এত লোকজনের মাঝে তো প্রশ্নই আসে না! সবাই নিশ্চয়ই ওকে ফলো করছে! ওকে অপেক্ষা করতে দেখে মনে মনে হাসছে আর ভাবছে দেখ বোকা মেয়ের কান্ড! কি লজ্জা!

এসব পাঁচ-সাত ভাবতে ভাবতে ফোনে ভাইব্রেট হল! স্ক্রিনের ব্যাক-লাইট টা ক্রমাগত জ্বলছে নিভছে। লেখাটা দেখল.. ফায়সাল কলিং। তার কাংক্ষিত কলার। হঠাৎ করে রেগে যাওয়াটা তার বিরাট একটা সমস্যা এবং এতক্ষণে ফায়সালের ফোন দেখে সে রেগে গেল। তুলেই বলল,

-আমি চলে যাচ্ছি! বাই!

ওপাশ থেকে...
-প্লিজ না না! আমি নীলক্ষেত থানার কাছে। জ্যাম! এইতো আর একটু প্লিজ?

ফোন রেখে হ্যান্ডব্যাগ থেকে বের করে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকে দেখল। শেষবারের মত নিজেকে গুছিয়ে নিল তরু।
তারপর একজোড়া কপোত-কপোতির দিকে টেরা চোখে তাকিয়ে ওদের প্রেমলীলা দেখতে লাগল। মনে মনে ভাবল, এমন জুটি দেখলে ঈর্ষা হয়। কি অদ্ভুত সুন্দর। ভালোবাসা কি আসলেই এত মধুর হয়?

আরো কিছুক্ষণ পরে একটা ছেলে এসে টি.এস.সিতে ঢুকল। কিছু না বলে কয়ে ওর পাশে এসে বসে পড়ল। বসেই হালকা করে তার চুলে টান দিল। তরু হতভম্ব ভাব কাটিয়ে তুলতে না তুলতেই ছেলেটা বলে উঠল,

-হাই, আমি ফায়সাল। কোন ভুল করে না থাকলে তুমি তরু? রাইট? অ্যাম স্যরি। আমি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। তাই লেইট হয়ে গেল! স্যরি!!

-হুম। আমিই তরু। আমাকে চিনলেন কিভাবে?


-তোমার চুল। বলছিলা না অনেক লং এন্ড স্ট্রেইট? ঢুকেই দেখলাম একমাত্র তুমিই আছ যার হেয়ার লং এন্ড স্ট্রেইট এবং যে একা একা বসে আছে।

-ও! তাই? যদি না হয়ে অন্য কেউ হলে শিউর গণপিটুনি খেতেন।


এই প্রথম ছেলেটার দিকে পুরোপুরি তাকাল ও।
অসম্ভব হ্যান্ডসাম, রুচিশীল পোশাক পরা, পরিপাটি পরিচ্ছন্ন একটা ছেলে। গায়ের রং হলদেটে, চুল গুলো ব্যাক-ব্রাশ করা। চোখগুলো অস্বাভাবিক ধারাল...ক্যাটস আই না ঠিক। কেমন যেন... সবুজাভ। তাকানো যায় না। মনে হয় যেন মনের ভেতরের সব কথা ঐ দু'টো চোখ দিয়ে এখনি পড়ে ফেলবে! বয়স দেখলে চব্বিশের বেশি কেউ বলবে না। অথচ তরু জানে ছেলেটির বয়স ছাব্বিশ শেষ!

সে চোখ ফিরিয়ে নিল। ফায়সাল বলতে লাগল,

-গনপিটুনির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রিস্কটা নিয়ে দেখলাম আরকি এই বলে হেসে দিল ফায়সাল। আর তুমি এখনও আমাকে আপনি করে বলছ কেন? আজিব!! তুমি করে বল!

-আসলে আমার খুব লজ্জা লাগছে। আমি নিজের থেকে বয়সে বড় কাউকে সহজে তুমি বলতে পারি না। ট্রাই করব।

-হাহাহাহাহাহ!!! এত ফরম্যাল!! মাই গড!! দেখো মেয়ে আমার সাথে এত ফরম্যালিটি দেখাতে হবে না। আমি আপনি না... তুমি শুনতেই বেশি পছন্দ করব। আমার যেহেতু শুনতে কোন সমস্যা নেই তাহলে তোমার ডাকতে কি সমস্যা?
এই বলে আবার ঠোঁটে কামড় দিয়ে এক চোট হেসে নিল ফয়সাল।

কোন ছেলের এত সুন্দর চাহ্‌নি আর নিখুঁত হাসি তরু মনে হয় এই জীবনে প্রথম দেখল! আর হঠাৎ করে ওর বুকের ভেতরটায় যেন কেমন করে উঠল। মনে হল এই ছেলেটাকে সে আগেও দেখেছে। ছেলেটার সাথে তার একটা জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক আছে। অবিচ্ছেদ্য কিছু একটা। আশ্চর্য! অথচ আজই ওদের প্রথম দেখা! এসব ভেবে আবারো লজ্জা পেল সে।

এভাবেই প্রথম দেখার পর কথা শুরু হয়। মিনিট বিশেক থাকার পর ওরা সেখান থেকে বের হয়ে সোহরাওয়ার্দি ধরে হাটতে হাটতে কার্জনে পৌঁছায়। দুজনেরই তাড়া ছিল। তাই সেখান থেকে ছেলেটা মেয়েটাকে রিকশা করে দেয়। রিকশায় উঠে তরু বিদায় জানাল,

-আচ্ছা। আজ তাহলে আসি? ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।

-সেটা ঠিক আছে। বাট নাউ এ্যাটলিস্ট মেক এ্যা রুম ফর মি....
বলে তরুকে সরে বসতে ইশারা করল। আমিও তোমার সাথে যাব।

তরু অবাক হয়ে জানতে চাইল,
-কোথায় যাবা?

-সেগুনবাগিচায় নামালেও চলবে। পল্টনে নামালেও চলবে।

বলতে বলতে তরুর মতামতকে পাত্তা না দিয়ে রিকশায় উঠে বসল ফায়সাল।

তরু হতভম্ব হয়ে বলল,
-ওকে, মাই প্লেজার!



ফায়সাল মূলত ঢাকা কলেজে ইংলিশে মাস্টার্সে পড়ছে। সেই সাথে সাত বছর ধরে ঢাকা থিয়েটারের সাথে কাজ করছে। ঢাকা থিয়েটারের জন্য সেলিম আল-দীন একটা নতুন নাটক লিখেছেন, "নিমজ্জন"। সেটা চতুর্থবারের মত শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে। নিমজ্জনের একটা ক্যারেক্টার করত ফায়সাল। সেগুনবাগিচাতে ওদের ঢাকা থিয়েটারের পুরো গ্রুপের রিহার্সেল হত। তাই তরুর কাছে সেগুনবাগিচা পর্যন্ত লিফট চায় সে।

এভাবে পথে পথে নানা কথা আর হাসি তামাশায় কখন যে পথ শেষ হয়ে যায় কেউ টের পায় না।

ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। বাসায় ফিরেডানে বায়ে না তাকিয়ে সোজা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল তরু। আয়নায় নিজেকে দেখে রীতিমত অবাক। চোখে মুখে কি একটা আভা, অন্যরকম দীপ্তি। মেয়েরা প্রেমে পড়লে যেমন মিটিমিটি করে হাসে, তেমনি এক রহস্যময়ী হাসি!



ও কি কখনও সৌন্দর্যের পূজারি ছিল?
যদি না-ই হয়ে থাকে তাহলে কেন এই ছেলেকে এত ভালো লাগল? ফোনে যখন দুইটা মাস কথা হল তখনতো ওর কাছে এতটা ভালো লাগেনি। ছেলেটার মাঝে ড্যাম পার্সন্যালিটি দেখেনি!

যখন ছেলেটা ওকে না দেখে প্রপোজ করেছিল তখন সাথে সাথে কাউকে না দেখে ভালোভাবে না জেনে কোন সম্পর্ক বা ভালোবাসায় বিশ্বাসী নয় বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারপর ফায়সাল যখন নিজেকে ভালোভাবে জানাতে চাইল তখন বারবার ফিরিয়ে দিয়েছিল।

তারপর গত কয়েকদিন ধরে যখন ছেলেটার হাজারো অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে আজ শেষমেষ দেখা করতে গেলো তখন কেন এমন হল? যাবার আগে তো ঠিক করে গিয়েছিল এসেই মানা করে দেবে। তাহলে এখন এত অস্থির লাগছে কেন? কেন এরকম একটা অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে?
একেই কি লাভ এ্যট ফার্স্ট সাইট বলে?!


হাসতে হাসতে সে গেয়ে ওঠে 'বৃত্তালপনা'...


~"জীবনের আলাপন, কত যে মায়া
শত মানুষের ভীড়ে, তোমায় পাওয়া
ভুলে ছিলাম "ভালোবাসা চাই"

ভালোবাসি না আমি তোমাকে, বলেছিলাম
ভালোবাসিনা আমি তোমাকে, কখনও না
ভালোবাসিনা আমি তোমাকে, স্বপ্ন দেখে যাও..
ভালোবাসিনা আমি তোমাকে, একদমই না
তুমি আমার কে?~"





(চলতে থাকবে।)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৪৭
৭৩টি মন্তব্য ৭০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×