somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাপিত জীবন

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠিক কবে থেকে জীবন যাপন উপভোগ করতে শিখেছি মনে নেই। কখন থেকে যে বেঁচে থাকাটা অনেক বেশি আনন্দের মনে হয় সেটার হিসেবও জানা নেই। হয়তো ছাপোষা মধ্যবিত্ত বলে এত এত উপলক্ষ্যের ভিড়ে হারিয়ে গেছে সবচেয়ে বড় এই উপলক্ষ্যটা। কিংবা একটু ঘুরিয়ে বললে মধ্যবিত্তের ছাপোষা মনোবৃত্তিতে এটা আসলেই কোনো উপলক্ষ্য নয়। তারপরেও যতদুর মনে পড়ে মধ্যবিত্তের লেবেলে আমার এই যাপিত জীবনের প্রায় প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো ভাবে 'আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান' এই বোধটা ক্ষনিক আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছে। সেই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপলক্ষ্য নিয়েই যাপিত জীবন।

শুনেছি পড়াশুনার নাকি শেষ নাই। শিক্ষার বয়স মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। কিসের কি ঘোড়ার ডিম। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই মাথায় গামছা বেধে নেমে পড়লাম কামলা গিরিতে। সেই যে নেমেছি, আজ কাল প্রায় মনে হয় এ যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে গেছে। পড়াশুনাটা আর আদৌ আর করা হবে কিনা কে জানে? বন্ধুরা সব একে একে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। অল্প কিছুদিন পর ওরা ফিরে আসবে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে। আর আমি? কদিন পর পর ওদের বিদায় দেয়ার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। আর মাস শেষে ব্যাংকে জমা হওয়া টাকার বিন্যাস নিয়ে হাবুডুবু খাওয়া। মাঝে মাঝে হিসেব মেলে না। তাতে কি? দিনতো চলেই যাচ্ছে। ভালো মন্দ মিলিয়ে। মন্দ না থাকলে ভালো কি ভালো থাকে? তাই মন্দের সাথে সহবাস করেই ভালো বুঝতে শেখার নির্মম প্রয়াস। দিন শেষে রুমের বাতি নিভিয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমুতে যাবার সময় কোনো অতৃপ্তি বোধ করি না। এই বেশ ভালো আছি, এই বোধের নামই বোধহয় মধ্যবিত্তবোধ।

চাকরীতে ঢোকার পর থেকে একটা নিয়মিত রুটিন হলো, প্রতিদিন রাত আটটার মধ্যে বাসায় একবার ফোন দেয়া। মাঝে মাঝে একটু দেরী হয়ে যায়। তখন আম্মা ছটফট করতে করতে নিজেই ফোন দিয়ে বসেন। এখানেও একটা নিয়ম আছে। আম্মা যদি রাত আটটার পরে ফোন দেন, এর মানে হলো এটা স্বাভাবিক কল। আমার দিতে দেরী দেখে কল দিয়েছেন। এটাকে দুশ্চিন্তার কলও বলতে পারেন। মায়েরা একটু বেশিই দুশ্চিন্তা করে। আর যদি কোনোদিন আটটার আগেই কল করে বসেন, এর মানে মোটামুটি ইমার্জেন্সি কল। এমন একটা কিছু হয়েছে যেটা আমাকে বলার জন্য উনি মুখিয়ে আছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে এই কাজটা করতে কখনো ক্লান্ত লেগেছে মনে পড়ে না। বরং দিনের ক্লান্তিটা মুছে যায় হাসিমুখে দুইটা কথা বললে। প্রতিদিন কি আসলেই ফোনে একমিনিট বলার মতন কথা থাকে? আজকে রাতে বাসায় গিয়ে কি কথা বলবো? মজার ব্যাপার হলো এখন ভেবে কিছু খুঁজে না পেলেও ফোন করলেই হড়বড় করে কথা বলতে থাকি। তবে আম্মা মনে হয় আরো বেশি কথা বলেন। ওনার কথা বলার বিষয়ের কোনো শেষ নেই। এই যেমন গতকাল একটা ইমার্জেন্সি কল করলেন, খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়ে কথা হলো। আমাদের বাসার ব্যবহারের কাঁচের জগটা ভেঙ্গে গেছে। আব্বা নতুন একটা জগ কিনে আনলেন। একটা কিনলে একটা ফ্রী এই দৌরাত্ন্যে জগের সাথে একটা টেবিল ঘড়ি ফ্রী পাওয়া গেল। ঘড়িতে এলার্ম দেয়া যায়। আমাদের বাসায় ইতিমধ্যে দুইটা এলার্ম দেয়ার যোগ্য টেবিল ঘড়ি আছে। একটা আব্বা ব্যবহার করে। আরেকটা ছোট বোন। আমার ছোট ভাই দাবী করে বসলো তার নাকি এই টেবিল ঘড়িটা খুব দরকার। (প্রসঙ্গত বলে নিই, ঠিক এই মুহুর্তে তার ঘুমানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। কলেজ বন্ধ। নতুন ইয়ারের ক্লাস শুরু হতে দেরী আছে।) কিন্ত ইদানিং নাকি আমার ছোট বোনের টেবিল ঘড়িটা ঠিক মতন সার্ভিস দিচ্ছে না। তাই আম্মা তাকে বললো এটা যেন মুমু (আমার ছোট বোনের নাম) কে দেয়া হয়। ব্যস লেগে গেল লংকা কান্ড। আমার ছোট ভাই রেগে মেগে আগুন। তার কথা আম্মা নাকি সবসময় সব কিছু মুমুকে দিয়ে দেয়। তাকে কিছু দেয় না। এবং ক্ষেপে গিয়ে সে দুপুর থেকে আম্মার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আম্মা আমাকে ফোন করে তার এই বিশাল সমস্যার কথা জানালো। এবং এর সমাধান চাইল। আমি এত দূরে বসে সমস্যার সমাধান করবো কি? হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলাম। আমিও হয়তো ওদের সাথে ঘড়ির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা লড়াই করতে পারতাম। তা না এই জঙ্গলময় শহরে বসে রিমোট সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আম্মার ফোন কেটে ছোট ভাইকে ফোন দিলাম। আমার ফোন পেয়ে আমি কিছু বলার আগেই বেচারা থতমত খেয়ে বললো ভাইয়া দিয়ে দিছিতো। আমার লাগবে না। আমি হাসতে লাগলাম আর আরো একবার মনে হলো এটাই বোধহয় মধ্যবিত্তবোধ।

চলবে

(কারো কারো কমন পড়তে পারে, এই দোষ আমার না)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:১০
৫৭টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×