ঠিক এইখানে বসে কেটেছে কত সন্ধ্যেকাল। কত কত মুহুর্ত, হাসি ঠাট্টা আর গান। ঐ ছোট ছোট পায়ের ছাপ গুলো আমার নয়। ভাবতেই বড় কষ্ট হয়। শিশু হাতের ছোয়ায় দেয়ালে আঁকা শিল্প কর্মগুলো কি আমার? মনে নেই আজ আর। সে যে অনেক অনেক দিন আগের কথা। আমার ভুবন, হারিয়ে যাওয়া সময়।
অসাধারন কারুকার্যের এখনো আছে কিছু অবশিষ্ট। প্রভাব প্রতিপত্তির ছোঁয়া ম্লান হয় না। হাতের স্পর্শেই যেন জেগে উঠে মনোহর আর দাম্ভিকতার সোনালী অতীত।
একরাশ নীরবতা। আর আছে শুধু কোলাহল শূন্য করিডর। কোথাও কেউ নেই।
ছেলেটি এগিয়ে যায়। আর তার সাথে সাথে অনেকদিন পর হয়তো দিনান্তের আলোক রাশি প্রাণ ছড়িয়ে দেয়ার আপ্রাণ প্রয়াসে লিপ্ত হয়।
টিউবওয়েলটা দেখেই যেন তৃষ্ণা পেয়ে গেল। পানিটা কি সেই আগের মতন আছে? বরফ শীতল আর সাথে প্রাণ জুড়ানো মিষ্টি স্বাদ। পানি পড়ে পরে জায়গা অনেক পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। পড়ে গিয়া হাত মচকে গিয়েছিল একবার। নাহ ব্যাথাটা আর অনুভূত হয় না আজ। পুকুরে পানি প্রায় নেই। এটা অবশ্য সময়ের প্রভাব নয়। শুষ্ক মৌসুমের কারনেই। চারপাশে বাধানো ঘাট গুলো দূর থেকে দেখতে ঠিক আগের মতই সৌন্দর্য মন্ডিত।
ঐ হ্যাঙ্গার গুলোতেই যেন ঝুলে আছে তার সব স্মৃতি। আর ঐ অবশিষ্ট প্রাণের মাঝে নতুনত্বের আহবান তাকে আর ভাবিত করে না।
বেঞ্চটা-সিড়িটা, কিছুই নেই আর। এই বেঞ্চটা ছিল খেলার সিংহাসন। বেঞ্চের উপরে উঠে লড়াই হতো। যে শেষ পর্যন্ত বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতে পারত সেই সম্রাট। সিড়ি গুলো ছিল নানান নতুন ধরনের উদ্ভব খেলার জায়গা। সবচেয়ে মজার খেলা ছিল সিড়ির রেলিং এর উপরে বসে চড়চড়ি খেয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নেমে যাওয়া। একবারো মাটিতে পা লাগানো চলবে না। মনে পড়তেই হাসি পেয়ে গেল ছেলেটির। ভাবছে একবার চেষ্টা করে দেখবে কিনা এখন। নাহ, সময়টা আগের মতন নেই। বয়স বেড়েছে, তারও, রেলিং এরও।
সব শূণ্য মনে হয়। মনের ভেতর, প্রাণের ভেতর। এরি মাঝে লুকিয়ে আছে কত হাসি কান্না অভিমান। ধুলোয় ঢেকে গেছে তার বেশ কিছু। এখনো কিছু অবশিষ্ট আছে। দেয়ালে কান পেতে শুনে ছেলেটি। চাপা কান্নার আঁওয়াজ? ওটা কি তার মা? নাকি সুলতা? হয়তো অন্য কেউ। হয়তো কেউ নয়। হয়তো এটা সময়। রঙিন চোখে সাদাকালো সময়ের কান্না।
অবাক তাকিয়ে রয় নবীন চোখ। ইতিহাস সে শুধুই সাক্ষী। মিতপ্রায় নগরী এখনো জীবন্ত দলিল। আর কৌতুহলি নবীন চোখ খোঁজে কত শত প্রশ্নের উত্তর।
হাওয়া বদলের সময়ের শেষ। ফিরে যেতেই হয় সেই কাঠিন্য ভরা শহরে। পেছনে ফেলে রেখে যাই জীবন্ত কিছু সময়। নাহ, আসলে মৃত কিছু সময়। আর স্মৃতি, সে শুধুই ক্ষনিকের বেদনা।
(উফ ভয়াবহ কষ্ট হলো এই পোষ্ট দিতে। এমন কষ্টের কাজ আর করব না। ছবিগুলো তোলা হয়েছে মানিকগঞ্জের বালিয়াটি আর পাকুটিয়া রাজবাড়িতে। ইতিমধ্যে সাইফাই সিজার এইটা নিয়া একটা পোষ্ট দিছেন। আমার ইচ্ছে ছিল ইতিহাস নিয়া ঘাটাঘটি কইরা কিছু লেখমু। কিন্ত প্রথম আলো ব্লগের ব্লগার নোমান ভাইয়ের (আমি চিনি না ওনারে) একটা পোষ্ট পাইলাম। আর রেজোওয়ানা আপুর একটা পোষ্ট ফ্রী। বিশাল পোষ্টের জন্য দুঃখিত। )
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:০০