মানিকগঞ্জ জেলার বালিয়াটিতে অবস্থিত উপনিবেশিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। এই প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার জুড়ে অবস্থিত এবং এখানে ৭টি দক্ষিনমুখি প্রাসাদ আছে।
প্রথম সারিতে চারটি প্রাসাদ, সব গুলোর নির্মান শৈলিই একরকম, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মিশ্রণ।
ফ্লোরাল টপ সহ কোরেন্থিয়ান ধাচের পিলার আছে চারটা প্রাসাদেই।
এই সাদা প্রাসাদে প্রত্নত্তত্ব অধিদপ্তর বর্তমানে একটা জাদুঘর নির্মান করেছ এবং এই একটা প্রাসাদই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। বেশি কিছু নেই অবশ্য ডিসপ্লেতে।
প্রথম সারির সব গুলো প্রাসাদের সামনের দিকের বারন্দার লোহার গ্রীলে চমৎকার ফ্লোরাল মোটিফ আছে সবকটা স্থাপত্যেই। এছাড়া ছাদের কার্নিশে স্টাকো অলংকরণও দৃষ্টিগ্রাহী।
অন্দরভাগের একটি ঘরের ঘুলঘুলি।
মজলিস কক্ষের এমন ঝুলানো ঝাড়বাতি গুলো অতীতের জৌলুসকে মনে করিয়ে দেয়।
মজলিস কক্ষটির দেয়ালের পেইন্টিং সব হাতে আকা। সাদা প্রাসাদটির দোতালায় এর অবস্থান।
দোতালায় ওঠার সিরি। সিরির এই বর্ধিত অংশ রাখার কারণ হলো, জমিদার যখন উঠবেন বা নামবেন তখন যদি কেউ সিরিতে থাকে তখন এখানে সরে দাড়াবে
জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বার, এটা নতুন করে নির্মান করা হয়েছে। মুল প্রবেশদ্বার নাকি কাঠের তৈরি ছিল (স্থানীয় লোকদের কাছে শোনা)।
এটা আন্দরমহলের একটা অংশ। অন্দর মহলে রয়েছে তিন সারি বিল্ডিং, অতিথীদের থাকবার জায়গা, রন্ধন শালা, সহিস আর পরিচারকদের থাকবার ঘর।
জানালরা উপরের কারুকার্যময় কাঠের প্যানেলিং গুলো ধ্বংস হয়ে যেতে যেতেও কিছুটা টিকে আছে।
অতিথিদের থাকবার জায়গা এবং বারান্দার কাঠের কারুকাজ।
এটা অন্দরমহলের পুকুর। চার পাশে অনেক গুলো ঘাট বাধানো আছে।
আর এগুলো অতিব প্রয়োজনীয় টয়লেট। দেখে মনে হয় দলবদ্ধ ভাবে গল্পগুজব করতে করতে প্রকৃতির ডাকে সারা দেবার ব্যবস্থা অন্দরমহলের পুকুরের শেষ প্রান্তে এর অবস্থান।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির সব গুলো প্রাসাদ অবশ্য এক সাথে নির্মান করা হয়নি, উনবিংশ শতকের মধ্য ভাগ থেকে বিংশ শতকের প্রথম ভাগের বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় একটি ধনী পরিবারের বেশ কয়েক জন সদস্যদের দ্বারা নির্মান করা হয়।
এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা খ্রি: আঠারো শতকের শেষের দিকের একজন বর্ধিষ্ঞু লবন ব্যবসায়ি ছিলেন। পরবর্তিতে উনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে তার উত্তরাধিকারিরা জমিদারি লাভ করেন।
এই পরিবারে স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন নিত্যানন্দ রায় চৌধুরী, বৃন্দাবন চন্দ্র, জগন্নাথ রায়, কানাই লাল, কিশোরি লাল, যশোর্ধ লাল, হীরা লাল রায় চৌধুরী, ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী, হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী প্রমূখ।
এরা ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি নির্মান করেছিলেন যা এখনও টিকে আছে।
যেভাবে যেতে হবে: যদি নিজে গাড়ি নিয়ে যেতে চান তাহলে খেয়াল করবেন মানিকগঞ্জ শহরে পৌছার কিছু আগে সাটুরিয়ার কাছাকাছি রাস্তার বাম দিকেই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি লেখা সাইন বোর্ড দেখা যাবে, সেই গলি দিয়ে ঢুকতে হবে। এরপর সোজা রাস্তায় মাইল দুয়েক গেলেই হবে।
আর যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন তাহলে বাস ওয়লাদের বললেই বালিয়াটি নামিয়ে দেবে, ওখান থেকে টেম্পো আছে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত। এছাড়া সাভার হেমেয়েতপুর থেকেও বাস যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:৩৩