somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ ব্লগ নিউ ইয়র্কের হাইলাইনঃ আকাশের মধ্যে বাগান

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাই লাইন হচ্ছে, নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা অতি পুরনো একটি ট্রেন লাইন। শিল্প বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমেরিকায় ধীরে ধীরে উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষের সখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে। এরই সাথে বাড়তে থাকে মানুষের খাদ্যের চাহিদা। এখনকার মতো ট্রাক সহজলভ্য না থাকায়, ১৯'শ শতকের গোড়ার থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ট্রেনলাইন দিয়ে মূলত মালবাহী ট্রেন নিউইর্কের ম্যানহাটন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে স্বল্প খরচে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করতো। কিন্তু ১৮৪৭ সালে ট্রেন লাইনটি বানানোর পর একটি বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হয়।প্রতিদিনই ট্রেনের ধাক্কায় অসংখ্য দূর্ঘটনা ঘটতে থাকে। সেই সাথে মারা যায় অনেক মানুষ । নিউ ইর্কের মতো ব্যাস্ত শহরে রাস্তার মধ্যেখানে কোন ধরণের নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা না থাকার কারণের এত গুলো দুর্ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে এমন অবথার সৃষ্টি হয় যে এই ট্রেন লাইনকে অনেকে শাপিত বলে আখ্যায়িত করেন এবং এর নাম দেন “Death Avenue.” নির্মানের পর থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫৪০ জন মানুষ ট্রেনের নিচে চাঁপা পরে মৃত্যু বরণ করে।

......................................। The Cowboy.............................
শেষমেশ নিউ ইর্কের মেয়রের টনক নরে এবং অতি অদ্ভুত একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ঠিক করা হয় যে, পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য একজন ঘোড়সওয়ারকে কে নিযুক্ত করা হয় যিনি ট্রেন এর আগে আগে ঘোড়ার উপর বসে দৌড়াবেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিবেন। কিন্তু এটিও খুব একটা কাজে আসে নি। কারণ এরপরও প্রতি মাসে প্রায় এক জন করে মানুষ দূর্ঘটনার কারণে মারা যায়। অবশেষে ১৯২৪ সালে সিধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ট্রেন লাইনটিকে মাটি থেকে প্রায় ১০ মিটার(বা প্রায় ৩০ফুট) উঁচু করে পুনর্নির্মাণ করা হবে। ১৯৩৩ সালে আবারো পুনর্নির্মাণ শেষ হয় এবং একটানা প্রায় ৪০ বছর মিলিয়ন টন খাদ্যসামগ্রী ম্যানহাটনের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্যে সরবরাহ করে। ১৯৬০ সালের দিকে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার কমতে থাকে ও ১৯৮০ সালে এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২ মেইল লম্বা ট্রেন লাইনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয় ও এক ভূতুরে অবস্থার সৃষ্টি হয়।







আসল ম্যাজিকটি শুরু হয় এর পরে। নিউ ইর্কের তৎকালীন মেয়র হাই লাইনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধ্বংস এবং ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু, ১৯৯৯ সালে Friends of the High Line নামে একটি অলাভজনক সংস্থা গঠন করা হয় যেটি মেয়রের বিরুদ্ধে লড়ে, ৩০ ফুট উঁচু ও প্রায় ২ মাইল লম্বা এই ট্রেন লাইনকে একটি বাগানে রূপান্তরিত করে। ২০০৯ সালে বাগানটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়। এটির সাফল্য সবাইকে বিস্মিত করে তোলে। বর্তমানে একটি নিউ ইয়র্ক শহরের পর্যটকদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। তিন ভাগে বিভক্ত, বাগানটিতে গেলে এক স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হাডসন নদীতে সুর্য ডুবার মুহুর্তের অনুভূতি বর্ণনাতীত। যে কেউ স্মপূর্ণ ফ্রিতে এখানে আসতে পারবে। এখানে আসলে শুধুমাত্র যে গাছ ফুল আর নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় তা না, এই সাথে নিউ ইয়র্কের নানান ডিজাইনের ভবনগুলির অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীও উপভোগ করা যায়।



(দুর্ভাগ্যক্রমে আমার মোবাইলে বেশি ছবি না তোলার কারণে বাধ্য হয়ে অনলাইনে ছবিগুলো সংগ্রহ করি) (ক্রেডিটঃ IWAN BAAN, Anita Ng, Joel Sternfeld, আর আমি নিজে)


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:০৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×