নীলের দোকানটার মোড়ের কাছাকাছি, সেখানে এসে ক্লান্ত চোখে কুকুরটার খোঁজে এদিক ওদিক তাকালাম। নেই। আজ নেই কেন? কিছু হয়েছে নাকি? অজানা আশঙ্কায় অবলা একটা প্রাণীর জন্য বুক ধ্বক করে উঠলো। এমনটা হতে নেই। অনেক আগেই বুকে জগদ্দল পাথর আটকে দিয়েছি যে!
মোড় থেকে বাড়ি পর্যন্ত এই শীতের গত বিশ -বাইশ দিন ধরে এই কুকুরটা সঙ্গ দিয়ে চলেছে, মনোযোগী শ্রোতার মত। এই রকম শ্রোতা পেয়ে আমিও খুশি, গন্ধভরা মুখ নিয়ে কথা বলে যেতে থাকি - অভিযোগ করার থাকে না কেউ। মানুষ হলেই হতো যত সমস্যা - আপনার মুখে সিগারেটের এতো কড়া গন্ধ ক্যানো? কত টেনেছেন শুনি? মুরুব্বি গোছের হলে বাতাসেই ফিসফিসিয়ে বলতো - আরে কাঁচা পয়সা হাতে আসে তো, গরম বলে একটা ব্যাপার আছে। হয়তো একটু দোষ - টোষও আছে। কে জানে? আরে না না, আমি বেশি ভাবছি - ওই গোছের কেউ আসলে কথাই বলতো না! একটা ব্যাপার আছে তো মশাই! তাই না!
কুকুরটার এই নীরব শ্রোতার ভূমিকা আমায় বেশ সন্তুষ্ট করে ফেলেছে ইতোমধ্যে, অফিস থেকে বেরিয়েই তাই সাত টাকা দামের বেশ বড় বড় দুটো পাউরুটি কিনে ঢুকোই ব্যাগে - চৌদ্দ টাকা বিল। সাত টাকার বিনিময়ে ভালো শ্রোতা পাওয়া - বেশ দামি ব্যাপার। এই চড়া দামের বাজারে বেশ দুর্লভ বটে! বাড়ি অবধি পৌছে মুখে আঙ্গুল তুলে দিয়ে কুকুরকে চুপ থাকার ভঙ্গি করে ধীরে ধীরে ঢুকতে বলি বাড়িতে - পাছে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা প্রতিটি সদস্য যদি জেগে যায়! কে জানে হয়তো তারা শব্দ পেয়ে বিছানার ধূলোটি সরিয়ে উঠে এসে বলবে - এই তোর আসার সময় হলো? কোনো কান্ডজ্ঞান নেই বুঝি? কবে বুঝতে শিখবি রে?
আমি আবার কুকুরটার খোঁজে চারপাশে তাকাই - নেই। আসবে কি? জানি না। আমার বুকটা ক্যামন করতে থাকে। চোখের কোণে জল আসবে বলে মনে হচ্ছে! ধুর! ধুর! জল আসবেটা কোথথেকে শুনি? বুকে আমার জগদ্দল পাথর - শুধু ভাবছি, আমার গল্প গুলো নিয়ে কুকুরটা কই চলে গেলো? ব্যাগে এখনো মিষ্টি পাউরুটি পড়ে আছে দুটো - একটা তো আমার - বাকি একটা দিয়ে কি করি?
ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যেতে থাকি বাড়ির দিকে - একটা প্রবল শীতের মত ঠান্ডা, আমার একলার মৃত বাড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৭