somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তানের তখন বেশি ভালোবাসা প্রয়োজন, যখন সে ভালোবাসা পাওয়ার মত বিশেষ কিছু করেনি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বড় ছেলেটা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। দামী একটি খেলনা নিয়ে তাকে উপহার দিলেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন পাশ থেকে করুণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ছোট ছেলে বা মেয়েটা। ’ইস! বাবার কাছে যেন রেজাল্ট টাই সব’। কারণ স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তিতে সে তুলনা করতে শুরু করে বাবা কাকে বেশি ভালোবাসে। কারণ যেটাই হোক।
এখানেই শেষ নয়। বেশিরভাগ বাবা মা স্বাভাবিক ভাবেই ছেলে মেয়ে শাসাতে গিয়ে যা বলেন- তোর বড় ভাই/বোনের দিকে তাকা। ওর রেজাল্ট দেখেছিস? কিংবা অমুক ভাইয়ের ছেলের রেজাল্ট দেখেছিস? ওর মত হতে পারিস না? তোকে কি কম দিয়েছি কিছুতে? বাবা মা নিঃসন্দেহে সন্তানের উন্নতির জন্য এসব কথা বলেন। কিন্তু তারা এসব কথার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব লক্ষ্য করেন না। সন্তান যদি তাকে প্রশ্ন করে অমুকের বাবা তাকে সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে নিয়ে গেছে। বা অমুকের বাবা তাকে বার্থডেতে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ট্যাব কিনে দিয়েছে... ইত্যাদি। বাবা কি সেটা সহ্য করতে পারেন? আসলে এ ধরনের তুলনা পদ্ধতি সন্তানের মনে এক ধরণের বিদ্বেষ জন্ম দেয় যার সাথে তাকে তুলনা করা হলো তার ব্যপারে, সে আপন ভাই-বোন হোক কিংবা তার সহপাঠী হোক। বাবা মা নিজের অজান্তেই সন্তানদের মধ্যে মনোগত বিদ্বেষ তৈরী করে ফেলেন। শৈশবের এ বিদ্বেষ পরবর্তীতে শত্রুতার পর্যায়েও পৌছায়। যেসব সন্তান বখে যায় তাদের প্রত্যেকেরই জীবনে আছে হয় অতিমাত্রায় আদর কিংবা বৈষম্যমূলক আচরণ।



একটা ছেলে খেলাধূলাকে কেন বেশি পছন্দ করে? প্রথমত এটা তার বয়সের মানসিক চাওয়া। এ বয়সে সে খেলতে চাইবে এটাই তার স্বাভাবিকতা। কিন্তু দ্বিতীয় কারণটিও লক্ষণীয়। সে যখন মাঠে খেলা করে তখন তার বন্ধুরা তাকে তালি দেয়, পিঠ চাপড়ায়, তার হয়ে স্লোগান দেয়। অর্থাৎ সে প্রশংসা পায়, উৎসাহ পায়। অথচ পড়াশোনার ব্যপারে? বাবা মা, ভাই-বোন, শিক্ষকবৃন্দ সবাই তাকে জবাবদিহিতার ভাষায় পড়াশুনার খবর নেন। তাকে জানান দিতে থাকেন পড়াশুনা না করলে জীবনে কত দূর্ভোগ পোহাতে হবে ইত্যাদি নেতিবাচক কথা। সারাক্ষণ এ ধরণের ভীতিকর, নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে তার মনে পড়াশুনার ব্যপারে বিরক্তি ও ভয় তৈরী হয়। কষ্টকর মনে হয় তখন পড়াশুনা। ক্লাসে যাবার ব্যপারে বীতশ্রদ্ধ হয় সে। সবাইকে মনে হয় পুলিশ, কে কখন তাকে রিমান্ডে নিবে, কী জিজ্ঞেস করবে। নিজেকে মনে হয় পড়াশুনার আইনে আসামী। যেটা ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রদের হয় না। তারা আবার ঠিকই উৎসাহ পায় রেজাল্টের গুণে। তাই তাদের পড়াশুনা এগিয়ে যায়।

আমার দৃষ্টি আকর্ষণ এই রেডিমেড উৎসাহের জায়গাটাতেই। যার রেজাল্ট ভালো হয়েছে তাকে উৎসাহ তো সবাই দিবে। তার বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক, প্রতিবেশী সবাই। কিন্তু বাবা-মা, ভাই-বোনও কি সবার মতই সাফল্যে উৎসাহ দিবেন আর ব্যর্থতায় নিরন্তর অপমান-লাঞ্ছনা? সন্তানের পরম আশ্রয় তো পরিবার। সুখ-দুখ, সাফল্য ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা সব ক্ষেত্রেই সমান অভিভাবত্ব প্রয়োজন। তুলনা পদ্ধতি প্রয়োগ না করে তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং পারদর্শিতা নিয়ে তাকে উৎসাহিত করা দরকার। বাবা-মা, ভাই-বোনের কোমল উৎসাহ এবং নিবিড় মনোযোগ একটি শিশুর বিকশিত হবার ক্ষেত্রে শালদুধের মতই গুরুত্বপূর্ণ।

তা যদি না হয়? সন্তান ঘর এবং পরের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখবে না। আপনজনের প্রতি কর্তব্যের বিষয়ে তাকে যতই উপদেশ, ওয়াজ নসিহত করা হোক, তার মন থেকে সে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারবে না। পারিবারিক সম্পর্ককেও তার কাছে মেকী মনে হবে। তার কাছে পরিবার হয়ে যাবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। যেখানে বস্তুগত চাহিদাপূরণই মূখ্য বিষয়।


তাই সন্তানকে শুধু সাফল্য উৎপাদনের মেশিন না ভেবে তার মানসিক বিকাশে একান্ত সহযোগী হওয়া প্রয়োজন। তখন সন্তানের সাফল্য হবে দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারাবাহিক। একই সাথে সেটি রুপ নিবে পুরো পরিবারের সফলতায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×