somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবার ঈদে সবার মুখে হাসি ফুটবে কি..?

২০ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি সচারাচর ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করি না, মানে ঈদের জন্য কোনো রকম কেনাকাটা করি না! এ আমার বিশাল এক ব্যর্থতা! এর মূল কারণ, আমি সময় বের করতে পারি না যে মার্কেট ঘুরে কেনাকাটা করবো! আরেকটা বড় সমস্যা, কেনাকাটায় আমি খুবই কৃপণ ও ভালো মানুষ না। আমার সহজে কোনো কিছু পছন্দ হয় না! তাই কেনাকাটা আমার পছন্দ হয় না, আর আমি সবসময় দামে সাশ্রয়ী এমন কোনো মার্কেটে ঘুরাঘুরি করি। নামি শপিং মল থেকে দামি পোশাক কেনার মত পকেট এখনোও ভারী হয়ে উঠেনি বা যদি কোনোদিন পকেট ভারীও হয় তবুও অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবো না!

.
আর কয়দিন পরেই ঈদ। সবাই ঈদ উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাদের বাড়ি ঢাকা শহর থেকে দূরে বা যারা গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করবে তারা বাস ট্রেন, লঞ্চের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করা শুরু করে দিয়েছেন। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করছেন। যারা নিজ শহরে চাকরি করে তাদের এতো দুশ্চিন্তা নেই। দুশ্চিন্তা হলো যারা গ্রামে গিয়ে ঈদ করবে তাদের। শহরের নানান দুর্ভোগ, জ্যাম, বাস-ট্রেনের টিকিট সঙ্কট, লঞ্চে পর্যাপ্ত আসন নেই। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চ পরবর্তী বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করবে। এইজন্য অতীতে আমরা অনেকবার লঞ্চ ডুবির খবর পেয়েছি। ঈদে ঘর মুখী এসব মানুষের দুর্ভোগের অনেক। এরপর আছে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীর উপদ্রব! একজন গার্মেন্টস শ্রমিক কষ্টে উপার্জন করা টাকা-পয়সা যাত্রাপথে যদি ছিনতাইকারীর কবলে পরে বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তো আর দুঃখের সীমা নাই!

স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার। কতটুকু স্বপ্ন বাড়ি পৌঁছতে পারবে? স্বপ্ন বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে পুরোপুরি পূরণ হবে তো?! কথাটা বলার কারণ, যে হারে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কিন্তু বেতন বা বোনাস বৃদ্ধি পাচ্ছে না! ঈদ মানে আনন্দ, এই আনন্দ কি সবার মুখে ফুটাতে পারবে চাকুরীজীবী মানুষ গুলো। তাদের মাথায় কিন্তু অজস্র চিন্তা ও দুশ্চিন্তা। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটানো চাট্টিখানি কথা নয় এর জন্য অনেক শ্রম দিতে হয়। শ্রম দিয়েও অনেক সময় সবার চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। দেখা যায় অনেক সময় ঘাটতি রয়ে যায়, এমনকি নিজের যে চাহিদাটুকু সেটাও সম্পূর্ণ পূরণ হচ্ছে না! মানুষের মৌলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। কিন্তু মানুষের এই মৌলিক চাহিদা গুলো সহজে পূরণ হচ্ছে না। মানুষ হিমশিম খাচ্ছে! ছোট বড় সবারই একটা ইচ্ছে থাকে ঈদে ভালো, সুন্দর জামা কাপড় কিনবে। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে দেখা যায় ইচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে পূরণ হয় না।
আর তাই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় প্রায়শই।

আর যারা উদ্বাস্তু তাদের কি অবস্থা! নিজের বাস করার মতো জায়গাই তো নেই! ঈদেই কেনাকাটা করার প্রশ্নও তো উঠবে না। কোনো মতে দিন আনে দিন খায়। ওদের ঈদ মানে শুধুই ঈদ, ঈদের আনন্দ নেই। আমি যখন রাত বিরাতে শহরের রাস্তায় হেটে বেড়াই তখন দেখি ফুটপাথ, রাস্তার ধারে অনেক মানুষ কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। কেউ কেউ ছোট খাটো ঝুপড়ি উঠিয়ে নিয়েছে রাতে মাথা গোজার জন্য। সেখানেই রাত সেখানেই কাত। এইসব মানুষেরও মনে অনেক স্বপ্ন আছে ঈদের জামা কাপড় কিনবে, আনন্দ করবে! ঈদে অনেক ভালো খাবার খাবে।
কিন্তু তারা কি তা করতে পারছে?!

একজন বৃদ্ধ মানুষ যার কোন সন্তান নেই বা সন্তান থেকেও নেই তার ঈদ উদযাপন কেমন হবে?! বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস রত একজন মা বাবার ঈদ কেমন কাটবে, তার সন্তান কখনো কি খোঁজ খবর নিয়ে দেখে!! অন্তত ঈদের দিনে তো খোঁজ নেয়া উচিত। কেন খোঁজ খবর নেয় না এসকল সন্তানেরা? ব্যস্ততায় নাকি দায়িত্ব থেকে এড়িয়ে চলার জন্যে?!
যার সন্তান নেই সেই সকল মা-বাবার কি অবস্থা! সে বৃদ্ধ মা বাবা ঈদের দিন আর বাকি দিন একই রকম। শুধু জানালার পাশে বসে কারো জন্য নীরব অপেক্ষা আর অশ্রু ঝরিয়ে যাওয়া।
এই বৃদ্ধ মা-বাবাদের ঈদ কেমন কাটবে?

এই যে কিছুদিন আগে পাহাড় ধসে পরলো রাঙামাটিতে, যাদের পরিবারের দুই একজন সদস্য বেঁচে আছে তাদের কি ঈদ হবে এবার?! তাদের চোখে শুধু স্মৃতী, বুকে স্বজন হারানোর বেদনা, কানে বেজে উঠছে আর্তনাদ। এবার তারা কার সাথে, কি নিয়ে ঈদ করবে!? যে কয়জন মানুষ এই দৃশ্য দেখে বেঁচে আছে তারা পাথর হয়ে গেছে।

পাহাড় ধসের ঘটনা এদেশে নতুন নয়! কিন্তু এর কোনো সচেতনতা নেই, না সরকারি প্রশাসন থেকে না জনগণ নিজেদের থেকে! বললে অনেক কথাই উঠে আসবে, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, পাহাড় ধসের জন্য বিএমপি দল দায়ী। আমরা জানি আপনারা পাগল হয়ে গেছেন, কিন্তু এটা কি কারো দোষ ধরার সময়? পত্রিকা খুললেই তো আমরা দেখি অমুক লীগের তমুক নেতা, নেতার বিশ্বস্ত লোকজন পাহাড় কেটে রাস্তা করেছেন, পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করছেন, এমনকি পাহাড়ের জায়গা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। তখন কি উনার এ নিউজ চোখে পড়ে না।
এই পাহাড় ধসের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা থেকে বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে চার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন(যতটুকু খবর থেকে জেনেছি), এদের মধ্যে একজন সদ্য বিবাহিত! তার বাড়ির এবং বাকি সবার ঈদ কেমন কাটবে?!

এই সকল প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত আমাদের কারোর জানা নেই!


লেখাটা অনেক ভারী হয়ে গেছে, পড়ে যদি কারো মন খারাপ হয় তাহলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৫৯
২৮টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×