- মামা, শার্ট দেখান তো।
- কার সাইজে মামা?
- আমার জন্যই দেখান।
- আপনি শার্ট চয়েস করেন, সাইজ দেয়া যাইবো।
- মামা, ওই শার্টটা আমার সাইজের বাইর করেন। ফিটিং হয় যেন।
- এইটা লন মামা, আপনার ফিটিং হইবো।
- কিন্তু এইটা তো একটু সর্ট, এর চেয়ে একটু লং দেখান।
- লং নিলে তো ফিটিং হইবো না আপনার, হালকা চাপাইয়া নিতে হইবো। আপনার স্বাস্থ্য একটু খারাপ তো, আপনার মাপের শার্ট পাওয়া যাইবো না।
- রাইখা দেন মামা, শার্ট লমু না। বাইরে থেকে একটা সেন্ডু গেঞ্জি কিন্না পইরা থাকুম। আমার মাপের পাওয়া যাইবো আশা করি।
দোকান থেকে বের হয়ে প্যান্টের দোকানে গেলাম,
- মামা প্যান্ট দেখান তো।
- কোমড় কত মামা?
- কোমার তো ৩১, আপনি ৩২ দেখান।
- ৩২" নিলে হাইট ছোট হবে। আর তাছাড়া থাইও টাইট হবে অনেক। ৩৫" কোমরেরটা নেন, পরে ৫০ টাকা দিয়ে কোমারটা ছোট করে নিয়েন।
- এইটা কোন কথা। নতুন প্যান্ট কেনার পরেই যদি কাটাতে হয়, তাহলে কেমন লাগে।
- আসলে আপনার হাইটের তুলনায় স্বাস্থ্যটা একটু খারাপ তো, তাই আপনার মাপের প্যান্ট পাওয়া যাবে না। দর্জি থেকে কাটিয়েই পরতে হবে।
- ঠিকই কইছেন মামা, আমার মাপের কোন প্যান্ট যেহেতু বানানি হয় না, তাইলে আমার প্যান্ট পরাই ছাইড়া দিতে হইবো। কাল থেকে লুঙ্গি পরা শুরু করুম। আমার মাপে লুঙ্গি এটলিস্ট পাওয়া যাইবো। আপনার দোকানে লুঙ্গি আছে? থাকলে দেখান।
- না মামা, লুঙ্গি তো নাই।
- ঠিক আছে তাইলে, অন্য দোকানে দেখি।
শার্ট বা প্যান্ট কেনার সময় এই অবস্থার শিকার প্রতিবারই হতে হয়। নিজের মাপের কাপড় কখনোই পাই না। সবচেয়ে বড় সাইজেরটা কিনে দর্জির কাছ থেকে কাটিয়ে নিতে হয়। যার ফলে কাপড়ের অরিজিনাল সেপটাই নষ্ট হয়ে যায় আর সেই সাথে এক্সট্রা খরচ তো আছেই। এভাবে আর কতদিন আমাদের মত অভাগাদের এই কষ্ট সহ্য করতে হবে? জিম করা বডি বিল্ডার কয়জনইবা আছে পুরো বাংলাদেশে। নতুন স্টাইল নামানোর পর সিক্সপ্যাক কাউকে মডেল না দিয়ে এভারেজ স্বাস্থ্য, হ্যাংলা-পাতলা, আর ভুঁড়িওয়ালাদের মডেল হিসেবে দেখালেই আমরা সাধারণ জনগণ বুঝতে পারবো, কোন কাপড়টা আমাদের মানাবে। যাদের বডি ভালো, তারা যেই কাপড় পরবে, ওইটাতেই সুন্দর লাগবে, এমনকি কাপড় না পরালেও সুন্দর লাগবে। কিন্তু সমস্যা হয় তো আমাদের মত হ্যাংলাদের। দেখানোর মত স্বাস্থ্য নাই বলে পোশাক পরেই নিজেদের একটু প্রদর্শন করি। সেই সুযোগ থেকেও আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
যারা ফ্যাশন ডিজাইনিং লইয়া পড়ালেখা করে, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, "আপনারা শুধু বডি বিল্ডারদের জন্যই পোশাকের ডিজাইন কইরেন না। আমাদের মত স্বাস্থ্যহীনদের দিকেও একটু নজর রাইখেন। "
বিঃ দ্রঃ এতো টাকা দিয়ে কাপড় কেনার পরে দর্জির দোকানেই অর্ধেক ফালাইয়া দিতে হয়। তহন দুঃখে কইলজাটা ফেইল করার অবস্থা হইয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৪