কাল ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ১১ টার দিকে। স্বপ্নে দেখলাম আামি ঝালমুড়ি বিক্রেতার হাতের কৌট হয়ে গেলাম। যেটাতে মুড়ি, ঝাল, মশলা একসাথে মিশিয়ে ঝাকি দিয়ে মাখানি তৈরি করে। দেখলাম অসম্ভব রূপবতী একটি মেয়ে ঝালমুড়িওয়ালার কাছে ৫ টাকার মাখানি চাইলো। আমি টের পাচ্ছিলাম আমার মধ্যে দুই মুঠো মুড়ি, চানাচুড়, শরীষা তেল আর মশলা একসাথে দিয়ে আমার ঢাকনাটা বন্ধ করে ইচ্ছামত ঝাকানো শুরু করছে। সেই ঝাকুনির ঠেলায় আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তড়িঘড়ি করে উঠে টের পেলাম বৌ আমাকে ঝাঁকি দিয়ে ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মাত্র বাজে ১২ টা। এই রাতে আমাকে ডেকে তোলাম মানে টা কী!!!
- এই ওঠো।
- কেন, কী হইছে? এই মাঝ রাতে ঘুম থেকে ডেকে তোলার মানে কী?
- আজকের এই বিশেষ দিনে এতো তাড়াতাড়ি কেউ ঘুমায়?? ওঠে পড়ো, আমরা সেলেব্রেট করবো।
আমি তারিখটা মনে করার চেষ্টা করলাম। আমি ঢ়ুমানোর আগে তো ফেব্রুয়ারী মাসই ছিলো। আর আমাদের মেরেজ ডে তো ডিসেম্বরে। বাচ্চা কাচ্চাও তো হয়নি যে তাদের জন্মদিন আজকে। তাহলে উপলক্ষটা কী!! মাথায় কাজ করছে না কিছুই।
- কী উপলক্ষে সেলেব্রেট করবো? তোমার দাদুর জন্মদিন নাকি আজকে? উনি তো মারা গেছেন কতোদিন আগেই।
- দেখো, এখন মুড অফ করবা না। ফালতু কথা আমি পছন্দ করি না।
- কাহিনীটা কী বলবা তো?
- ভুলে গেছ আজকে কত তারিখ? ২৯ ফেব্রুয়ারী, আজকে তো লীপ ইয়ার, ৪ বছরে একবার আসে এই দিন। এই দিন কি আর ফিরে পাবো?? ওঠো আমরা উদযাপন করি।
এটা শুনে তো মেজাজটা আরো চড়া হয়ে গেল। এটা উদযাপন করার চেয়ে স্বপ্নের মেয়েটাকে আমার গায়ে মাখানো ঝালমুড়ি খাওয়ানোটাই বেশি ভালো ছিলো।
- এটা উদযাপন করার কী হলো। চার বছর পর পর আসবে এই দিন, এটাকে তো বিশেষ ভাবার কোন কারণ নেই। যতসব ফালতু নেকামী!!
এবারে ক্ষেপে গেল ও। চোখে রক্ত চলে আসলো- "ওওও, আমার এগুলোই সব ফালতু!! তুমি যখন ফুটবল বিশ্বকাপের সময় ৩/৪ টার সময় খেলা দেখতে ওঠো আর সাথে আমাকেও জাগাও তোমার চা করে দেওয়ার জন্য, তখন এই কথা মনে থাকে না, না???
- কীসের মধ্যে কী!! ফুটবলের সাথে এটার তুলনা কেন??
- হ্যা, এখন তো এটা মনে হবেই। নিজের বেলায় সব ঠিক আর আমি সখ করে কিছু করতে চাইলেই তুমি উল্টা পাল্টা বলো!!
অবস্থা বেগতিক দেখে ওকে ঠাণ্ডা করার জন্য বললাম, "আচ্ছা, ঠিক আছে, বলো কীভাবে উদযাপন করতে চাও??"
- আমরা আমাদের বাসর রাতটা যেভাবে কাটিয়েছি, আজকে আমরা সেভাবেই কাটাবো।
ফিরে গেলাম দুবছর আগের সেই রাতের কথা। বিয়ের সব ঝামেলা শেষ করে গেলাম বাসর ঘরে। প্রেমের বিয়ে, তাই ঘোমটা তোলার নাটকীয়তায় যাই নাই। বিছানায় তার পাশে বসেই বললাম-
- অবশেষে আমাদের স্বপ্নটা পূরণ হলো।
- হমম, আমি খুব খুশি। চল, আজকের এই রাতটাকে আমরা স্মরণীয় করে রাখি। আমরা এমন কিছু করবো যা আমাদের এই রাতের কথা মনে করিয়ে দেবে আজীবন।
মনে মনে বললাম, এটার অপেক্ষায়ই তো ছিলাম সারাটা জীবন। আহা, আজ আমি পাইবো, আমি ইহাকে পাইবো। উত্তেজনায় তো শীতের মধ্যেও আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছিলো। আমি আবেশে তার গালে হাত রাখতেই বলে উঠলো-
- উহু, এভাবে নয়। আমরা অন্যরকম করে এই রাত পার করবো। সারা রাত আমরা গল্প করে কাটাবো, এই রাত হবে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত।
এটা শুনে আমার শরীরের সব ঘাম শুকিয়ে শীত লাগা শুরু করলো। আর বাকিটা ইতিহাস।
- এই কী চিন্তা করছো?
বৌয়ের ডাকে সম্ভিত ফিরে পেলাম্। বুঝতে পারলাম আজকেও আমাকে সারারাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হবে।
অগ্যতা, তাকে খুশি করতে সারারাত বাসর রাতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছে। বরাবরের মতই তন্দ্রার মত চলে আসে, আর সেই ঝালমুড়ি মাখানোর স্বপ্নটা দেখি। যখনই মুড়িওয়ালা ঝাঁকি দেয়, তখনই জেগে উ্ঠতে হয়। এভাবেই সারারাত পার করে সকালের দিকে লক্ষ্মী বৌ আমার ঘুমিয়ে পড়লো। আমি আর ঘুমানোর রিস্ক না নিয়ে ফ্রেস হয়ে অফিসে এসে ঝিমাচ্ছি আর মনে মনে প্রার্থনা করছি, " হে খোদা, হয় লীপ ইয়ার উঠায় নেও, আর না হয় আমারে উঠায় নেও।"
সুখের কথা এই যে, প্রতি মাসে লীপ ইয়ারটা আসে না, তাহলে তো প্রতি মাসে একটা রাত আমাকে অন্যরকম বাসর করে পার করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭