একটা কৌতুক বলি, "রাত ১২ টার দিকে এক ছেলে বাসায় ফিরছিলো। রাস্তায় পুলিশ তাকে আটকায়। এটা সেটা প্রশ্ন করে নাজেহাল অবস্থাব। কোন কিছুতেই দোষ খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি বডি চেক করেও কিছু পাওয়া যায় নি। কিন্তু এমনি এমনি কী আর ছেড়ে দেয়া যায়!!! কিছু টাকা তো কামিয়ে নিতেই হবে।
- তোর কাছে চেক করে কিছুই পাই নি। কিন্তু ব্যাপারটা সন্দেহজনক। কিছু একটা তো আছেই। ভালোই ভালোই বের করে দে, নয়তো বিপদ হয়ে যাবে।
- আমার কাছে কিছুই নেই। আপনারা চেক করেও তো কিছু পাননি।
- রাতের বেলা ভালো মানুষ কখনো বাইরে বের হয় না। নিজে থেকে স্বীকার না করলে কোর্চে চালান করে দেবো।
- আমার তো কোন অপরাধই নেই। কোন মামলায় চালান করবেন আমাকে?
- বেশি কথা বলস কেন? এই রাতে বের হয়েছিস, এটাই তোর অপরাধ। দে, ১০০০ টাকা দে, ছেড়ে দিচ্ছি।
- এতো টাকা তো আমার কাছে নেই।
- তবে কত আছে?? দে তাহলে ৫০০ টাকাই দে।
- স্যার, ৫০০ টাকাও নেই আমার কাছে।
- তবে কত আছে, ওইটাই বের কর।
- রাতে বের হইছি তো, তাই টাকা নিয়ে বের হইনাই্।
- সালা, খালি খালি তো আর তরে ছাড়তে পারি না, যাওয়ার আগে আমার পিঠটা একটু চুলকায় দিয়া যা।
********
একদিন ফার্মগেট থেকে ফুটবল খেলে সদরঘাট হোস্টেলে যাচ্ছিলাম। পানির মধ্যে খেলার কারণে কাপড় ভিজে গিয়েছিলো। হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি ফ্রেন্ডের বাসায় রেখে শুধু আন্ডার গার্মেন্টসটা সপিং ব্যাগে ভরে নিয়ে যাচ্ছিলাম। হাতে ব্যাগ আর আমার সন্ত্রাসীমার্কা চেহারা দেখেই আমাকে আটকালো। "সবার চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবেনা বাচাধন"- এমন একটা ভাব চেহারায় ভেসে উঠলো। "চোরাচালানির নাটের গুরুকে পাইছি, এইবার আমার প্রমোশন আর ঠেকায় কে!!!- এই চিন্তার অফিসারের চোখ জ্বল জ্বল করতে লাগলো। আমাকে বলে, "ব্যাগে কী?" বললাম, "কাপড়।" এক কথায়ই উত্তর দিলাম। পুলিশের সাথে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল। বেশি কথা বললে আবার মনে করতে পারে পোলায় নেশা করে আসছে। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই সরাসরি ব্যাগে হাত চালান করে দিলেন। কণ্ডুলী পাকানো ছোট কাপড়টি হাতে নিয়েই বললেন,
- এইটা কী?"
আমার নির্বিকার উত্তর, "স্যার, আন্ডারপ্যান্ট।"
- ভেজা কেন?
- ফুটবল খেলতে গিয়ে ভিজে গেছে।
ইনি আমার কথার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস না করে কী যেন খুঁজেই চলেছেন। যতই উনাকে বলার চেষ্টা করছি এখানে কিছুই নেই, ততই উনি বেশি নিখুতভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এমনভাবে হাতরাচ্ছেন যেন এর মধ্যে একটু পানি আর গুড়া সাবান ছিটিয়ে দিলে ধোয়া হয়ে যাবে, আমার আর কষ্ট করতে হবে না। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ সব সময়ই বেশি থাকে, তিনি এটারই প্রমান দিয়ে যাচ্ছেন। উনার খোঁজার একাগ্রতা দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি কোন কিছু পাচার করছি, হয়তো মাদক দ্রব্য, বা দামী কোন সোনা, হীরা। আমি মনে মনে বলি, "চান্দু, এইটা সোনা দানার কন্টেইনার হইলেও, তোমরা যেটা খুঁজতাছো সেই সোনা দানার প্যাকেট এটা না। " শেষমেশ কিছু না পেয়ে আমাকে ছেড়েই দিলেন (তাও ভালো কাপড়টা আমাকে ফেরত দিয়েছিলেন, ময়না তদন্তের জন্য রেখে দেননি)।
*******
কক্সবাজার থেকে আসার সময় বাস চেক করে নরমালী। কিন্তু কথা হল আমাদের চেহারার কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক, সন্দেহটা স্রেফ আমাদের উপরেই বর্তালো। বাসের এতো এতো যাত্রী থাকতে, আমাদের ৫ জনকেই শুধু বাস থেকে নামালো। তারপরে চলল "সেচ তল্লাশী" ( সব পানি সেচ দিয়ে কাদার মাছ যেভাবে ধরা হয় এরকম তল্লাশী আরকি)। চিরুনী তল্লাশী তো বুঝিই, এটা তার থেকেও বেশি ছিলো। ব্যাগের প্রতিটি সুতার ফাঁকে ফাঁকে তারা চেক করেছে। এমনকি জুতার সোলের ভেতরেও টিপে টিপে দেখছিলো। এমন ভাব যেন মদের বোতলগুলা আমরা জুতার মধ্যে লুকাইয়া রাখছি। শুটকিগুলা এতো সুন্দর করে প্যাকেট করে আনছিলাম যেন ব্যাগের কাপড় গন্ধ না হয়, উনারা সেই প্যাকেটকেও রক্ষা দিলো না। ফলাফল- দুর্গন্ধ যুক্ত কাপড়। তারা কিন্তু সঠিক লোকদেরই সন্দেহ করেছিলো। আমাদের সাথে মদ্য ছিলো, ধরতে পারে নায়। যদিও তা ছিলো পেটের ভেতরে। ভাগ্যিস সন্দেহ করে নায়, সন্দেহ হইলে বলতো যে, "আপনাদের পেটে মাদক আছে, এখনি হাগের, আমরা আপনাদের গু চেক করবো।" যাক বুঝতে পারে নায়, তাই এই যা্ত্রায় বেঁচে গেলাম্।
এরকম আরো অনেক অনেক ঘটনা আছে আমার পুলিশের তল্লাশী নিয়ে। আমি দেখতে না হয় একটু কালো, দাড়ি টাড়ি সেভ করি না আর চোখগুলো না হয় গাঞ্জাখোরের মত, স্বাস্থ্যটাও না হয় হিরোইনচির মতো তাই বলে কি আমাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে মনে হয় কখনো?? পুলিশের তো বোঝা উচিত, অপরাধীরাই ফিটফাট হইয়া ঘুইরা বেড়ায় আর উস্কাখুস্কু চেহারার ওরা নিতান্তই গোবেচারা।