পদ্মা সেতুর সুফল ও বরিশালের উন্নয়ণ -০১
‘‘পদ্মা সেতুর’’ প্রেক্ষিতে ‘‘বরিশালের উন্নয়ন’’ যারা জানেন না - ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেন - প্রকৃতপক্ষে এটি তাদের অজ্ঞতা নয় বলে আমি মনেকরি - তারা স্বাধিনতা বিরোধি প্রজন্ম ও মাওবাদি পিকিংপন্থি সেচ্ছায় স্বজ্ঞানে না জানার ভান করে (স্বয়ং মাওসেতুং ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে - মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে) – নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ তারা -
‘‘পদ্মা সেতুর’’ ফলে উন্নত জীবনের অপেক্ষায় বরিশালের মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষার (ক) পদ্মা সেতু, অন্যদিকে (খ) পায়রা সমুদ্র বন্দর ও (০৩) পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এর মধ্যে বরিশালের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নে চলছে ০৭ (সাত)টি উন্নয়ন প্রকল্প।
আর এসব প্রকল্প পাল্টে দেবে বরিশালের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে। এমনকি পাল্টে যাবে এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকাও।
(০১) নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহি করতে বরিশালে স্থাপন করা হচ্ছে " নভোথিয়েটার"। "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার" নামে নতুন এই "নভোথিয়েটার"টি কুসংস্কার দূরীকরণে, জনগণের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণা তৈরিতে এবং বৈজ্ঞানিক মনোভাব সঞ্চার করতে ভূমিকা রাখবে।
নভোথিয়েটারটি স্থাপিত হবে বরিশাল সদর উপজেলাধিন "দক্ষিণ চরআইচা" মৌজায়। এজন্য ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প গত ০৭ জানুয়ারি ২০২১ খৃষ্টাব্দে একনেক সভায় অনুমোদন করেছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই প্রকল্পের আওতায় ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সেখানে স্থাপন করা হবে ০৬ (ছয়) তলা ভিতবিশিষ্ট প্লানেটেরিয়াম ব্লক এবং সাততলা ভিতবিশিষ্ট ডরমেটরি। এর সঙ্গে প্রয়োজনিয় যন্ত্রপাতিও থাকবে।
এর মধ্যে মেশিনারি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ডিজিটাল এক্সিবিটস, সায়েন্টেফিক এক্সিবিটস, ৯টি মুভি থিয়েটার, অবজারবেটরি টেলিস্কোপ, জেনারেটর, ইউপিএস, পিএবিএক্স সিস্টেম, ডাটা ক্যাবল নেটওর্য়াক, সাউন্ড সিস্টেম, এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম, পাম্প মটর, সিসি টিভি, সোলার এবং অফিস সরঞ্জাম ক্রয় করা হবে।
(০২) এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের "মেরিন একাডেমি" ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ১২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন "মেরিন একাডেমি"র একাডেমিক ভবন, ডরমেটরি ভবন, কমান্ড্যান্টের বাসভবন, ডেপুটি কমান্ড্যান্টের ভবন, কোয়ার্টার, শিক্ষার্থিদের সুইমিং পুল, প্যারেড স্কোয়ার্ড ও বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থিরা উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হতে এখানে পড়াশোনা করতে পারবে।
আধুনিক এ "মেরিন একাডেমি"তে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখতেই প্রকল্পটি বড় আকারেই গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রি এই মেরিন একাডেমির উদ্বোধন করছেন - শিক্ষা কার্যক্রম চলছে -
অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামি নৌযান নিরাপদ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা, জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রস্তুত এবং একই সঙ্গে বেকার সমস্যা দূর করা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ করেই "মেরিন একাডেমি"তে শিক্ষার্থিরা ভর্তি হতে পারবে। প্রাথমিক অবস্থায় প্রি-সি নার্টিক্যাল সাইন্স ও প্রি-সি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ২টি কোর্সে শিক্ষার্থি ভর্তি করা হবে। ৪ বছর মেয়াদী এ কোর্সে উত্তির্ণ শিক্ষার্থিদের প্রি-সি মেরিন মার্চেন্ড সনদ দেয়া হবে।
জাতি সংঘের অঙ্গ সংস্থা "মেরিটাইম অর্গানাইজেশন সুইডেনের ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটির" নিয়ন্ত্রণে এ "মেরিন একাডেমি" পরিচালিত হবে। এখান থেকে উত্তির্ণরা জাহাজ চালনা, নৌ-প্রকৌশল, ইলেকট্রিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভাগে চাকরির সুযোগ পাবেন।
(০৩) বরিশালের আর একটি উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে " ক্যান্সার হাসপাতাল"। এই হাসপাতালটি নির্মিত হলে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা বিদেশ যেতে হবে না বরিশালবাসি তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে। প্রায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে এই হাসপাতালটি। যার নির্মান কাজ চলছে - শের ই বাংলা ম্যাডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে -
১৫ তলাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে কার্ডিওলোজি, নেফ্রোলজি এবং বার্ন ইউনিটসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতিয় শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের পেছনের নির্ধারিত জায়গায় এই হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য একশ' শয্যা থাকবে। ১৭ তলার ফাউন্ডেশনে ১৫ তলাবিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল ভবন দুইটি বেইজমেন্টসহ নির্মিত হবে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত বরিশালের উপ-সহকারী প্রকৌশলি মো. ওবায়দুল হক।
(০৪) এছাড়া বরিশালে প্রথমবারের মতো নির্মিত হচ্ছে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত "শিশু হাসপাতাল"। নগরির আমানতগঞ্জ এলাকায় প্রায় এক একর জমির ওপর ১০ তলা ফাউন্ডেশনের ‘"শহিদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতাল"’ নির্মাণ কাজ চলছে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০তলা ভিত্তি দিয়ে চার তলাবিশিষ্ট "শিশু হাসপাতাল" নির্মাণ কাজ চলছে। এ হাসপাতালে থাকছে জরুরি বিভাগ, রেডিওলোজি, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি বিভাগ, অপারেশন ব্লক, ওষুধ সরবরাহ বিভাগ, থেরাপি বিভাগ, সাধারণ শিশু ওয়ার্ড, প্রশাসনিক ব্লক এবং কনফারেন্স রুম। যার ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
(০৫) শিল্প সাহিত্যে সমৃদ্ধ এই বরিশালের আরও একটি উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে "শিল্পকলা একাডেমি" ভবন ও অডিটোরিয়াম। ২৫ কোটি টাকা ব্যয় এই প্রকল্প অনুয়ায়ী ৫০০টি আসন, একটি -
(০৬) এদিকে পর্যটন শিল্পের বিকাশে বাবুগঞ্জের " মাধবপাশায়" ঐতিহ্যবাহি "দুর্গা সাগর"কে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ১৬ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে "দুর্গা সাগর দিঘির পর্যটকদের জন্য একটি গেস্ট হাউস, একটি শপিং সেন্টার, বোট ল্যান্ডিং স্টেশন, সিমানা প্রাচির নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, "মাধবপাশায় চন্দ্রদ্বিপের রাজধানি" স্থায়িভাবে প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রদ্বিপ রাজবংশের কির্তিমান পুরুষ রাজা রামচন্দ্র। রাজবংশের রাজা শিব নারায়ণের প্রজাবৎসল স্ত্রী রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বিশাল এক দিঘি খনন করে এখনো অমর হয়ে আছেন। তার নামেই এই দিঘি ‘‘‘দুর্গা সাগর’’ নামে পরিচিত।
এটি এখন পর্যটকদের এবং প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে একটি সুন্দর স্থান। বিশাল সিমেন্টের প্রশস্ত ঘাটলা, দিঘির মাঝে একটি সুন্দর দ্বিপ রয়েছে। পাশাপাশি যেখানে শিতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই পর্যটন কেন্দ্রটি আরও বিকশিত হবে।
(০৭) এদিকে নারী শিক্ষার বিকাশ ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বরিশালে গড়ে উঠছে "মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট"। নগরীর আলেকান্দা রোডে তিন একর জমির উপর স্থাপন করা হচ্ছে এই ইনস্টিটিউট। এখান থেকে ৯ বিভাগ শিক্ষার সুযোগ পাবে ৪০০ ছাত্রী। তাই তাদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ছাত্রী হোস্টেল।
একাডেমি ভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ পাঁচ গ্রুপের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। ২০২৩ খৃস্টাব্দের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের সহকারি প্রকল্প পরিচালক বেনজির আহম্মেদ।
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলি জাহাঙ্গির আলম বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের "নারীরাও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বি হবে"। এটি বরিশালের জন্য অন্যতম প্রকল্প।
বরিশাল গণপূর্ত ও গৃহায়ণ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলি জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, ক্যান্সার হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালসহ এই প্রকল্পগুলো খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
(চলবে - ০২)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৯