somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চীনের এক সন্তান নীতি (জনসংখ্যা-৯)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় দুই দশক আগে চীন তার এক বিলিয়ন মানুষকে জানিয়েছিল, তারা যদি দুটি করে সন্তান নিতে থাকে তাহলে তাদের জনসংখ্যা বিশাল বোঝা হয়ে যাবে এবং তা এক সময় ১.৮ বিলিয়নে পৌছবে। শুধু চীনের জন্যই নয় এটা সমগ্র পৃথিবীর জন্যই ছিলো এক বিশাল বিপদ। এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই চীন এক পরিবার এক সন্তান নীতি গ্রহণ করে। সে সময় চীনের জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কমিটি সরকারের এই নীতির যৌক্তিকতা তুলে ধরে জানায়, কঠোর আইনের মাধ্যমেই একমাত্র জনসংখ্যাকে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব।

তিয়ানজিন স্ট্যাচু, চীনের এক সন্তান নীতির প্রতিক

এক সন্তান নীতির ভালো দিকের পাশাপাশি বহু খারাপ দিকও আছে। এখানে উভয় বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, নানা সমস্যা আর খারাপ দিক সত্ত্বেও কঠোর নীতির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে চীনের জনসংখ্যার পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা গেছে।
এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সন্তান কোটা নির্ধারণ করে দেয়। সাধারণত চীনের শহর অঞ্চলে একটার বেশী সন্তান নেয়া অনেক কঠিন হলেও গ্রাম অঞ্চলে সহজ। তরুণদের নিজস্ব এলাকা থেকে বিয়ের এবং সন্তান গ্রহণের অনুমতি নিতে হয়। যেসব মহিলা এ নিয়মের বাইরে গর্ভবতী হয়ে পড়ে তাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণকর্মী এবং স্থানীয় পার্টি অফিশিয়ালরা গর্ভপাত করার জন্য প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করে। আর যেসব পরিবার একটি মাত্র সন্তান গ্রহণ করে সরকার তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়।
ফলে চীনের শহরগুলোতে এক সন্তান এখন সাধারণ বিষয় কিন্তু গ্রামাঞ্চলে অনেক পরিবারে দুটি বা তিনটি সন্তান দেখা যায়। কারণ যেসব পরিবারের (সাধারণত কৃষক পরিবার) প্রথম একটি বা দুটি সন্তান মেয়ে হয় তাদের প্রায়ই আরো সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়াও চীনের মূল জাতিগোষ্ঠীর (Han) বাইরের প্রায় প্রত্যেকের জন্যই আলাদা নিয়ম রয়েছে। সাধারণত শহর অঞ্চলে এদের দুটি পর্যন্ত সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া হয় তবে গ্রাম অঞ্চলে তিনটি বা চারটিরও অনুমতি দেয়া হয়।
বেইজিং রিভিউ পত্রিকা জানায়, এক সন্তান নীতির কারণে চায়নায় মাতৃগর্ভেই অনেক কন্যাসন্তানের ভ্রণ হত্যা করা হয়। অনেকেই এ জন্য দায়ী করে হাজার বছরের পুরনো কনফুসিয়াজমকে। চায়নার অধিকাংশ লোকই কনফুসিয়াজমে বিশ্বাসী আর এই নীতিতে পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করা হয়। বহু শতাব্দী ধরে মানুষের অন্তরে শেকড় গেড়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস, "নারীর তুলনায় পুরুষ শ্রেষ্ঠ" এটি দূর করা খুব সহজ নয়।

চীনের যমজ শিশু
পরপর দুটি সন্তান নিলে বাবা-মায়ের শ্বাস্তি হয়। কিন্তু প্রথম সন্তান যমজ শিশু হলে পিতা-মাতার কোনো জরিমানা হয় না। এ কারণে বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে যমজ শিশু জন্মানোর ঘটনা এখন অনেক বেড়েছে।

ছেলে বেশি মেয়ে কম
২০০০ সালে চীনে ছেলেমেয়ের জন্ম অনুপাত ছিল ১১৭:১০০। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে এটি ১০৩:১০০ থেকে ১০৭:১০০-এর মধ্যে থাকা উচিত। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে চীনের মেয়ে শিশুদের মৃত্যুর হার বেশি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। অনেকে মেয়ে শিশুর জন্ম গোপন করে রাখে। অযত্ন-অবহেলায় তাদের অনেকেরই মৃত্যু হয়।
সরকার নতুন পরিকল্পনায় ২০১০ সালের মধ্যে এই বৈষম্য কমানোর পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলেমেয়ে নির্ণয় করার পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা এবং মেয়ে শিশুদের পিতা-মাতার জন্য বিশেষ ভাতা উল্লেখযোগ্য। যেসব দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাদের বয়স ৬০ পেরিয়ে গেলে তারা বছরে ১২০০ ইউয়ান (১৫৪ ইউএস ডলার) করে পাবে।
(চলবে)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×