somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিয়া-সুন্নী যুদ্ধের দিকে মুসলিম বিশ্ব !

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিরিয়া জ্বলছে, ইরাকে যুদ্ধ চলমান, লিবিয়া ভাঙ্গনের পথে, ইয়েমেন কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। এমন পরিস্থিতিতে ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংকট চলছে’ এটা আর কোনো খবর নয়। খবর হচ্ছে, একই সুঁতোয় গাঁথা এই সংকট মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে।
আরব লীগ ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ন্যাটো’র আদলে একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে। প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য সমৃদ্ধ এই অত্যাধুনিক বাহিনী যে কোনো সময় এই অঞ্চলে উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।
আগামী কয়েক সপ্তাহ পরে অনুষ্ঠিতব্য আরব লীগের সম্মেলনেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। বিভিন্ন আরব দেশের সৈন্যদের সমন্বয়েই গঠিত হবে বাহিনীটি।
পেশাগত সক্ষমতায় ন্যাটোর মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও বিশ্বের সবচেয়ে সংকটাবর্তিত এলাকায় এমন একটি বাহিনীর উদ্ভব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবে মিশর, জর্দান, সৌদি আরব, মরক্কো এবং সুদান। এর বাইরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। একজন সৌদি জেনারেলের কমান্ডে পরিচালিত বাহিনীটির সদরদপ্তর হবে মিশরে। একই সাথে এটির নিজস্ব অবকাঠামো এবং স্থায়ী কমান্ডিং সিস্টেম চালু করা হবে।
বর্তমানে যেভাবে আরব জোট গঠন করে ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলা করা হচ্ছে ঠিক একইভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ অভিযান চালানো হবে। ৪০ হাজার সদস্যের বাহিনীটিতে ৫ হাজার নৌ, ৫০০ থেকে ১ হাজার বিমান এবং বাকি প্রায় ৩৪ হাজার স্থলসেনা থাকবে। বিমান, সমুদ্র এবং স্থল বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্সও।
বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের খরচ বহন করবে ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’ (জিসিসি) আর সৈন্যদের বেতন-ভাতা দেবে বাহিনীতে যোগ দেয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
বিগত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো যে পরিমাণ অস্ত্র এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম কিনেছে, বিশেষ করে সমুদ্র ও স্থলপথের জন্য, তার সাথে মিশরীয় সেনাবাহিনী যোগ দিলে ‘আরব ন্যাটো’ যে কোনো ধরনের দুর্দমনীয় সামরিক অভিযান চালাতে সক্ষম হবে।
কিন্তু এত আয়োজন কেন?
আপাতত দৃষ্টিতে শুধু ইয়েমেনের ঘটনা সামনে থাকলেও আরব দেশগুলোর এসব আয়োজন প্রকৃতঅর্থে ভবিষ্যতে ইরানকে মোকাবিলার জন্য। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, লিবিয়ার পর ইয়েমেনেও ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়-জাতির সাথে ইরানের পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতার পর শিয়া-শাসিত দেশটি আবার বিশ্বপরিমণ্ডলে ফিরেছে। ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ইরানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আবার দেশটিতে ঢোকার সুযোগ পাবে। ঠিকঠাক মতো চুক্তিটা হয়ে গেলে শেষপর্যন্ত পরমাণু বোমা তৈরি থেকে বিরত রাখা যাক বা না যাক, খুব শিগগিরই বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পেতে যাচ্ছে ইরান।
আর গত কয়েক দশকের মতোই নতুন এসব সুযোগ-সুবিধা শিয়াদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন, সেনাবাহিনীকে শক্তিশালীকরণ এবং সুন্নী মুসলমান, ইসরাইল ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস লেলিয়ে দেয়া ইত্যাদিতেই ব্যবহার করবে দেশটি।
ইরান এই মুহূর্তে কার্যত মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটি রাজধানী নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজধানীগুলো হচ্ছে- তেহরান, দামেস্ক, বৈরুত, বাগদাদ এবং অতি সম্প্রতি সানা। শিয়া ‘মোল্লা’দের লক্ষ্য হচ্ছে তাদের নিজস্ব ‘ইসলামি চিন্তাভাবনা’ ছড়িয়ে দিয়ে সুন্নীদেরটা ধ্বংস করা, বিশেষ করে সৌদি আরব, বাহরাইন এবং অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে।
মনে হচ্ছে, মধ্যযুগে খ্রিস্টানদের দুই পক্ষ- ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে যে যুদ্ধ ও রক্তক্ষয় হয়েছিল অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম বিশ্ব একই পরিণতির দিকে এগুচ্ছে, যদি না পরিস্থিতি শান্ত করতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়।
এই সুন্নী জোটকে শুধু গোয়েন্দা আর সরঞ্জামগত নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত স্পেশাল ফোর্সের প্রশিক্ষণ, সাইবার সহায়তা, নামবিহীন সাজোয়াযান ইত্যাদিসহ আরো যেসব আধুনিক পদ্ধতিতে সহায়তা করা যায় তা নিশ্চিত করা। এছাড়া মিশরকে সহায়তা হিসেবে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং সৌদি ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখতে হবে।
সুন্নী মিত্রদের এই সংকটে ন্যাটোর কী ভূমিকা পালন করা উচিত তা এখনো বলা কঠিন। এইসব দেশ (আরব) নিজে থেকে ন্যাটোর সহায়তা চাইবে না। পশ্চিমাদেরকে নিজেদেরই হাজির হতে হবে। তবে কোনো চাপ দেয়া নয়, শুধু পরামর্শ, যৌথমহড়া, গোয়েন্দা সহযোগিতা ইত্যাদি দেয়ার প্রস্তাব করতে পারে।
এখন ইসরাইল প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন বিবেচনার দাবি রাখে। সেটি হচ্ছে, এটা কি সম্ভব যে, ইরানের প্রভাব নিয়ে আরবদের মধ্যে যে ভয় এখন কাজ করছে সেটি সময়ের ব্যবধানে কাটিয়ে উঠে একই ভয় ইসরাইলের দিকে ঝুঁকবে?
উত্তর হচ্ছে, বর্তমানে শিয়া-সুন্নী যে বিভাজন দেখা দিয়েছে তা বিবেচনায় নিলে আপাতত এই আশঙ্কা নেই। এছাড়া ইসরাইলের সাথে মিশর ও জর্দানের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। এবং উপসাগরীয় দেশগুলোও ইসরাইলের মতো পারমাণবিক বোমাসমৃদ্ধ ইরানের ব্যাপারে সমানভাবে উদ্বিগ্ন।
বরং ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালের বাজে উদাহরণ (ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের) থাকা সত্ত্বেও এটা সম্ভব যে, শিয়াদের পক্ষ থেকে হুমকির কারণে তেহরানের মোকাবিলায় সুন্নীদের জোট গঠন ইসরাইলের সাথে সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারে।
তবে দুঃখজনক হচ্ছে, এই এলাকায় সুন্নী ও শিয়াদের মধ্যে বড় ধরনের একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের দিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, পরমাণূ সমঝোতার পর তাৎপর্যপূর্ণভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইরানকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো তাদের এই এলাকার মিত্রদের সাথে কিভাবে কাজ করে।
* Foreign Policy ম্যাগাজিনে ৯ এপ্রিল প্রকাশিত জেমস স্ট্যাভরিডিস এর ‘The Arab NATO’ নিবন্ধের ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ।
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×