somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি ছুটির বিজয়!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৫ ডিসেম্বর রাতের কথা! বাচ্চা ছেলেটা বেশ খুশি! আগামীকাল স্কুল বন্ধ।আজ রাতে অনেক ক্ষণ জেগে থেকে কার্টুন দেখতে পারবে।
তার একটা বড় বোন আছে। সে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে। লাল আর সবুজ কালারের শাড়ি পড়বে। ভোর বেলা বের হবে। সাথে বন্ধু বান্ধবি আসবে। ছবি তোলা হবে, মজা হবে।
তাদের বাবা সরকারী চাকরিজীবি। অফিস বন্ধ তাই সকাল সকাল ওঠা লাগবেনা। ঘুম থেকে উঠে গ্রামের বাড়ির পুকুরটা দেখে আসতে পারবে। আর তাদের মা তো কনফিউসড কাল যেন কী! স্বাধীনতা দিবস না বিজয় দিবস!

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১! চারদিক শোকের ছায়া।পাকবাহিনী শেষ কামড় দিয়েছে।প্রায় ২০০ জনের মত বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা হতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর , মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া , রাজারবাগসহ অন্যান্য আরো অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের উপর বিভৎস নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।

১৯৩৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার খয়েরপুর
গ্রামে ডা. আলীম চৌধুরীর জন্ম। তিন ভাই এক
বোনের মধ্যে ডা. আলীম ছিলেন দ্বিতীয়।
নিজের জীবন তুচ্ছ করে তিনি মুক্তিযেদ্ধাদের
সাহায্য করেছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর হানাদারদের
সহযোগী সংগঠন আলবদররা তাঁকে ধরে নিয়ে
নির্মমভাবে হত্যা করে। চক্ষু চিকিৎসক আলীম
চৌধুরীর দুই চোখ তারা উপরে ফেলে। তাঁর
বাড়িতে আশ্রিত মাওলানা মান্নান তাঁকে
ধরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন
করেছিল।

এই দিনে চারদিক থেকে পাক বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে।দলে দলে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। এদিন ঢাকার বাসাবোতে ‘এস ফোর্সে’র মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। জয়দেবপুরেও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় তারা। টঙ্গী, ডেমরা, গোদনাইল ও নারায়ণগঞ্জে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় দখলদার বাহিনী। এছাড়া এদিন সাভার পেরিয়ে
গাবতলীর কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট। ভারতীয় ফৌজের একটি প্যারাট্রুপার দল পাঠিয়ে ঢাকার মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানী ডিফেন্স লাইন পরখ করে নেয়া হয় ।

রাতে যৌথ বাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বেকাদিরীয়া বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। রাত দুইটার দিকে যৌথ বাহিনী পাক সৈন্যের মুখোমুখি হয়। যৌথ বাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাকবাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় যৌথ বাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারারাত তুমুল যুদ্ধ চলে।

এদিকে রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী কুমিরার দক্ষিণে আরো কয়েকটি স্থান হানাদার মুক্ত করে। সন্ধ্যায়
মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরের প্রথম রক্ষাব্যুহ
ভাটিয়ারীতে আক্রমণ চালায়। সারারাত মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলে। ভাটিয়ারি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এদিন বগুড়া জেলা ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি শত্রুমুক্ত হয় ।

১৬ ডিসেম্বর পুরো দেশ শত্রুমুক্ত হয়। কিন্তু আমাদের কাছে কত টুকো গুরুত্ব পাচ্ছে এই বিজয়য়ের দিন।কত টুকো মন থেকে তাদের কে স্মরণ করছি।ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কত টুকো জানাতে পারছি।তারা কি আদৌ বুঝতে পারছে এই বিজয়ের গুরুত্ব।কত লাশের উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি তারা কি বুঝতে পারছে।১৬ ডিসেম্বর যারা লাল সবুজ পড়ে ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকবে তারা কি জানে একটি প্রাণ যাওয়ার ব্যাথা। চোখ তুলে ফেলার কষ্ট, আংগুল কেটে ফেলার যন্ত্রণা। তারা জানে না, জানবেনা। তারা তো স্বাধীন দেশে বাস করছে। আর স্বাধীনতা যারা এনে দিয়েছে তাদের ভুলে আমরা আজ এই পবিত্র দেশে ধর্ষণ করি,ঘু্ষ খায়।দেশের টাকা বীদেশে প্রাচার করি। যদি সত্যি মৃত মানুষের অভিশাপ বলে কিছু থাকে তবে এদের অভিশাপে আমরা একদিন জাতিগত ভাবে ধ্বংস হয়ে যাবো। তারা দেশকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দিয়েছে অথচ আমরা পারিনা একদিন রঙ্গতামাশা বন্ধ রাখতে। দেশের জন্য হলেও নিজেদের সৎ রাখতে। ১৬ ডিসেম্বর রাতেই হয়তো কত মানুষ বোতল খুলবে অবৈধ টাকা দিয়ে। এ কথা কেউ বলতে পারবেনা। বলা মানা।বলতে নেই। লাল সবুজ গায়ে জড়িয়ে নিলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। যারা মারা গেছে তারা তো দেশের জন্য জীবন দিয়েছে আর আমরা সেই দেশেরই জীবন নিতে ব্যাস্ত। বিজয়ের দিন কিন্তু ভুলিনি, সরকারি ছুটি বলে কথা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×