somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদিআরব কি মানুষ বাস করে !

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেটের দায়ে একটু ভালো থাকার আশায় কম খরচ দয়ে সৌদি আরব গিয়ে নিজের জীবনকে অসহায় করে তোলার আগে একটু ভেবে দেখবেন। প্রথমে একটা ঘটনা বলি। ঘটনাটা যে বলেছে তার ভাষা মতই তুলে ধরলাম।


হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো, বলল আমি বাংলাদেশী কিনা।জি বলতেই ঐ মহিলা আমাকে বললেন, উনি পাকিস্তানি। [কথা হচ্ছে ইংরেজিতে] উনি বললেন, এক বাংলাদেশী মহিলা বিপদে পড়ছে, এই মুহূর্তে উনার আশ্রয়ে আছে। কান্নার জন্য কিছু বুজতেছেনা, আর ঐ বাংলাদেশী মহিলা হিন্দি, উর্দু, আরবি, ইংরেজি কিচ্ছু জানেনা।

পাকিস্তানি মহিলা বলল যে, বাংলাদেশী মহিলার নিয়োগকর্তার চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন এই বাংলাদেশি উনার কাছে আছে। বেচারি পাকিস্তানি আমার সাথে কথা বলবে নাকি ডিউটি করবে নাকি এই বাংলাদেশী নির্যাতিত কে দেখবে। বাংলাদেশী মহিলার কাছে মোবাইল আছে, ব্যলেন্স নাই,আর নাম্বার ও জানা নাই।

এই মুহূর্তে এই দুইজন কোথায় আছে তাও জানেনা। পড়লাম আমি বিপদে। কিচ্ছু করতে পারতেছিনা। পরে বুদ্ধি এলো মোবাইল এ ব্যলেন্স দিয়ে বাংলাদেশী মেয়েটার সাথে কথা বলবো। কিন্তু উনি কান্নার জন্য কিছু বলতে পারতেছেনা, রক্ত বমি করতেছে।

কিছুক্ষন পর উনার মোবাইলে ব্যলেন্স দিয়ে কথা বলছি। বাংলাদেশী মহিলা যা বলল, তাতে আমার মত বীদেশ এ খেটে খাওয়া ছেলেরও চোখে পানি চলে এলো।

উনি সৌদিআরব আসছে কাজের মেয়ের ভিসাতে, ২ মাস আগে। তার মালিক তাকে বেতন দেয়না। সারাদিন কাজ করার পরও মার খায়। মারতে মারতে দুইটা পা ভেঙ্গে ফেলল। গরম সুই নিয়ে কি যেন করছে বুঝিনি। এতো অত্যাচার কর হয়েছে যে তিনবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে একমাসের মধ্যে।

এর মাঝে একদিন সে বাথরুমের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে ঘটনা বলল। কাজের কাজ হলনা। পুলিশ আবার নিয়োগকর্তার কাছে ফেরত দিলো। এর পর আরও নির্যাতন বেড়ে গেল। আজ তার নিয়োগকর্তা হাসপাতালে নিয়ে যাবে বলে মরুভুমিতে ফেলে চলে গেল।

মেয়েতার নাম সীমা, বাড়ি শিবচর, মাদারিপুর। দেশে মা, আর ছোট ছোট বাচ্ছা আছে।
আমি অনেক কষ্টে ওদের লোকেশান বের করছি ব্যলেন্স দিয়ে whatsapp সেট করিয়ে।এই মেয়েটা একটা পাকিস্তানি মেয়ের হেফাজতে আছে।

পাকিস্তানি মেয়েটাকে আমি বোন ডাকছি, আর বলেছি দেখে রাখতে। সেই পাকিস্তানি মেয়েটি বাংলাদেশী মেয়েটাকে অনেক যত্ন করতেছে।। নিজের টাকা দিয়ে মেডিসিন কিনে খাওয়াচ্ছে।

দেখি মেয়েটাকে সাহায্য করতে পারনি কিনা।



উদ্ধার অভিযান......
পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ এমব্যাসি এর নাম্বার নিয়ে বিস্তারিত জানালাম। মেয়ের বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য চাইলাম। নিজের চাকুরির ফাকে ফাকে খবর নিয়ে মেয়ে কে জানাচ্ছি, সাথে দেশে তার পরিবার কেও। অবশেষে এমব্যাসি এর স্টাফ বিকাল ৫টা নাগাদ রিয়াদ থেকে হোতাবনি তামিমি এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ২০০ কিমি দূর। এসার নামাযের সময় ওখানে পৌঁছালো । বাধল বিপত্তি, যে প্রতিষ্ঠানের আশ্রয়ে ছিল ওদের সৌদি মালিক বলল পুলিশ ডাকতে। ভয় পেলাম,কিন্তু হতাশ হলাম না। ওদের কে বুঝিয়ে বলে রাজি করাতে পারতেছি। পরে ওদের এক বিগ বস কে আমার নাম্বার দেয়া হল। সেই মহিলা আমাকে ফোন করে অনেক প্রশ্ন করলো। আমি সামনে না নিয়ে পিছনে শুদু ফোনে কাজ সারলাম। কারন আমি বাংলাদেশ এমব্যাসি তে জব করিনা, করি জার্মান এমব্যাসি তে। তাই এই অসহায় মহিলার আইনত অভিবাবক আমাদের বাংলাদেশ এমব্যাসি। আমাদের এম্বাসির লোকদের সামনে রেখে আমি পিছনে অনেকটা গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার দের মত অপারেশান এর নেতৃত্ব দিলাম। স্থানীয় সময় রাত ১০টায় আমাদের এমব্যাসি এর গাড়িতে মেয়েটিকে তুলে আনা হল। সারাদিন এটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। অফিসে একটুও কাজ করিনি। এরপরও শান্তি যে মেয়েতা উদ্ধার হল। এই অভিযানে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে ধন্য মনে হচ্ছে।
পরে সীমা এম্বাসির সেফ হোমে ছিল। আমি তার ব্যবহারের কিছু জিনিস কিনে দিয়ে এসেছি। পরে সৌদি স্পনসার এর থেকে রিলিজ নেয়া হলো। ভিসাটা ক্যান্সিল করা হলো । স্পনসার এর কাছ থেকে ওয়ান ওয়ে টিকেট নিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলো বাংলাদেশে।

টিভিতে প্রকাশিত খবর


কম খরচে মাসে বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের সৌদি আরব পাঠানো হচ্ছে । কিন্তু আরবের মানুষ তাদের ফ্রি পাচ্ছে না । মোটা অংকের টাকা দেয়া লাগছে দালালদের। মানে দালাল এসব বাংলাদেশিদের বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের কাছে । এই কারণেই এসব অত্যাচারের কোন বিচার হয় না । কি বর্বর , লোমহর্ষক অত্যাচার চালাচ্ছে মানুষ মানুষের ওপর। সৌদি কে মুসলমান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সহজ সরল মানুষের কাছে উপস্থাপন করা হয় । নবীর দেশে যেতে পারবে , হজ্ব করতে পারবে । তারা মানুষ হিসেবে খুবই ভালো, দয়ালু । তাদের পর্দায় রাখা হবে ।

কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন । ছেলে-বাবা সহ পরিবারের সবাই মিলে এক জন মেয়ের উপর শারীরিক , যৌন অত্যাচার চালায় । তারা আসলে মানুষ তো !

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩০
২৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×