somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন কবিতার প্রস্তুতি / এহসান হাবীব

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন কবিতা আসলে কি? নতুন কবিতা হচ্ছে কবিতা এবং শেষ পর্যন্ত কবিতা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রতিদিন অসংখ্য কবি অসংখ্য কবিতার জন্ম দিচ্ছে, এই যে নবজাতক কবিতা একি নতুন কবিতা নয়? তারা কি পুরাতন কবিতা জন্ম দিচ্ছে? প্রশ্নটি একটু মোহমুক্ত হয়ে ভাবলে উত্তর নিজের কাছেই পাওয়া যায়। সমগ্র বাংলা সাহিত্যের কবিতা চর্যাপদ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত পাশাপাশি রেখে কবিদের নাম মুছে দিয়ে পড়লে আপনি কতটুকু নুতুনত্ব খুঁজে পাবেন? হতাশ হতে হবে নিঃসন্দেহে। গোটা দশেক কবির কবিতা ছাড়া আর কারও কবিতা আপনার কাছে নতুন মনে হবেনা। তাহলে আমরা এই গোটা দশেক কবিকে কিসের ভিত্তিতে চিহ্নিত করছি? চিহ্নিত করছি তাদের কাব্যিক আবেদন, বোধ এবং জীবনকে ধারণ করার মতা দিয়ে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি একজন কবি নতুন হয়ে ওঠেন তখনই যখন তার ভিতরে কাব্যিক আবেদনটা এত প্রকটভাবে প্রকাশিত হয় যা তাকে পূর্ববর্তীদের থেকে আলাদা করে একজন নতুন কবি হিসেবে চিহ্নিত করে। এবং সেই আবেদনে এমন বোধ ক্রিয়া করে যে বোধ তার আগে ছিলো অনাবিস্কৃত এবং এই বোধ তার ভেতরে জন্ম নেয় জীবনের জটিল বেদনা অথবা সুন্দরতম আনন্দকে তীব্রভাবে ধারণ করার ফলে। অর্থাৎ এখানে সবকিছু ছাপিয়ে বোধটাই মুখ্য। মোট কথা একজন কবিকে অবশ্যই একজন দার্শনিক হতে হবে। যিনি জীবনের আনন্দ বেদনাকে ধারণ করে একটি সুস্পষ্ট দর্শন দিয়ে যান- জগতের প্রত্যেক মহৎ কবিরই একটি সুস্পষ্ট দর্শন ছিলো। আর নতুন কবির েেত্র সেই দর্শনটি হবে পূর্ববর্তীদের চেয়ে আলাদা এবং যোগ্যতর এবং কবিকে মনে রাখতে হবে যে, তিনি দর্শন রচনা করতে বসেন নি তিনি একটি নিরেট শিল্পগুণ সম্পন্ন কবিতা লিখতে বসেছেন।

নতুন কবিতা সম্পর্কে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন তা হলো কবিতা কখোনই পুরাতন নয়। যখন জীবনানন্দ দাশ নতুন কবিতা লিলেন তখন কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পুরাতন হয়ে পড়েনি। মানুষ র্দীঘদিন যাবৎ রাবীন্দ্রিক কবিতা পড়তে পড়তে কান্ত হয়ে পড়ছিল, ফলে যখন জীবননান্দ দাশ কবিতা লিখলেন তখন মানুষ রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি জীক্ষনান্দকে পড়তে আগ্রহী হয়েছে। আর এটাই হচ্ছে নতুন কবিতার খেলা।

এই নতুন কবিতা আমরা কিভাবে পাব? নতুন কবিতা সাধারণত একটি জাতির কাছে দুইভাবে আসে-
এক.
একটি জাতির কবিতার ইতিহাসের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় অর্থাৎ মানব সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজের যে অসংগতি, আচার, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে কবিতাও তা ধীরে ধীরে ধারণ করতে থাকে এবং এইভাবে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একসময় কবিতা নতুনত্ব পায়। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি আমাদের প্রাচীন যুগের কবিতা র্চযাপদ যা বৌদ্ধ সাধন সঙ্গীত হিসাবে পরিচিত। এই সাধন সঙ্গীতগুলো ছয়শ বছরে লিখিত। এই দোহাগুলোতে কিন্তু একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ল্য করা যায় অর্থাৎ প্রথম দিকের দোহাগুলো নিরেট র্ধম সঙ্গীত এর পরের গোহাগুলোতে কিছুটা মানুষের কথা ফুটে উঠেছে। ঠিক সেই সময়ের সামাজিক অবস্থাটা পর্যবেন করলে বিষয়টা আরো পরিস্কার হবে। রাজরোষে পড়ে বৌদ্ধরা যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিল তখন সমাজে ধর্মবোধটাই মূখ্য ছিলো ফলে কবিতায় ব্যক্তি মানুষকে ছাপিয়ে ধর্ম ফুটে উঠেছে। ফলে দোহাতে লেখা হয়েছে-
কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল
অন্যত্র
তে তীনি তে তীনি তীনি হো ভিন্না

এই ধরনের গূঢ় ধর্ম কথা, কিন্তু তারপর সমাজের মানুষ ধীরে ধীরে মানুষকে নিয়ে ভাবতে লাগল র্ধম মানুষের জন্যই এই বোধ যখন কাজ করলো, সমাজে এলো তখন নতুন কবিতাবোধ এবং ছয়শ বছর পরে মধ্য যুগে আরেক ধরনের কবিতা মুখোমুখি হই আমরা, এখানেও র্ধম মুখ্য কিন্তু এই ধর্ম মানুষের জন্য, এই যুগে দেবদেবীর কাহিনী লেখা হয়েছে কিন্তু এই দেবদেবীকে চিত্রিত করা হয়েছে মাটির মানুষ হিসাবে। এই যে ধর্মীয় সাধন সংগীত থেকে কবিতাকে নিয়ে আসা হয়েছে মানুষের উপযেগী করে এটা কবিতার নতুনত্বের প্রথম ধাপ। এটা আমরা পেয়েছি ধারাবহিকতার মধ্য দিয়ে। এবং এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি চন্ডীদাসের অমর কবিতা-
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।
দুই.
কবিতায় নতুনত্ব আসে আরেকভাবে তা হলো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠি বিশেষের মেধা ও চেষ্টার ফলে। অর্থাৎ কোন কোন কবি এই র্দীঘ সময়ের ধারাবহিকতায় সন্তুষ্ট না থেকে নতুন কবিতা লিখতে চান। আর তা তিনি করেন নিজের মেধার তাগিদে বিস্তর পঠনপাঠনের মধ্য দিয়ে। এই তালিকায় আমরা প্রথমেই পাই মাইকেল মধুসূদন দত্তকে। মাইকেল আমাদের ধারাবাহিকতার ফসল নয়। বরং তিনি তার প্রতিভা ও মেধা দিয়ে বাংলা কবিতাকে একলাফে ছয়শ বছর পার করে দিয়ে গেছেন। মাইকেল যদি ধারাবাহিক ফসল হতেন তবে ভারত চন্দ্র অন্নদামঙ্গল কাব্যে আধুনিকতার ইংগিত দিতে গিয়ে মাটির মানুষকে যতটুকু প্রকাশ করেছেন তাতে করে আমরা মেঘনাদবধ কাব্যে এক মাটির মানুষের বীরত্বের কাহিনীই শুধু পেতাম। কিন্তু আমরা দেখেছি মাইকেল এই কাব্যে ধারণ করেছেন ব্যক্তি মানুষের বীরত্ব, মানবিক প্রেম, নারী স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতার মতো আধুনিক থেকে আধুনিকতম অনুষঙ্গগুলো যা মাইকেল অর্জন করেছিলেন ব্যক্তিগত প্রাপ্তি থেকে। মাইকেলের পর দীর্ঘদিন ধারাবাহিকতার চর্চ্চা হয়েছে এবং সেই ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল পুরুষ আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর আবার একজন ব্যক্তি মেধা মননের ধারা এক অন্যরকম বোধ নিয়ে ধারাবাহিকতার ইতিহাস পাল্টে দিয়ে সৃষ্টি করলেন নতুন কবিতা। তিনি জীবনানন্দ দাশ। আশা করি তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়বে না। জীবনানন্দের পরে ব্যক্তিগত এবং গোষ্টিগতভাবে নতুন কবিতা সৃষ্টির আয়োজন চলছে দু’এক সময় কিন্তু তা সফল হয়নি, এখনো জীবনানন্দের ভূত আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তারপরও যারা একটি নতুন কবিতার আশায় ছুটছি তাদের প্রস্তুতিটি কেমন হওয়া উচিৎ তা একবার দেখে নেওয়া যাক, একটি নতুন কবিতা সৃষ্টির জন্য একজন কবি বা কোন গোষ্ঠী যে সমস্ত বিষয়গুলো নিজের ভেতরে ধারণ করতে চান সেগুলো হলো-
নিজের সময়- একজন কবিকে অবশ্যই নিজের আর্বিভাবকালকে চিহ্নিত করতে হবে। জানতে হবে নিজের সময়ের চাহিদা ও যন্ত্রণাকে। সেই সঙ্গে জানতে হবে পূর্ববর্তী সময়ের অর্জন ও ব্যর্থতা। পূর্ববর্তী সময়ের অর্জনগুলো ধারণ করে ব্যর্থতা থেকে নিজের পথচলা শুরু করতে হবে। পাশাপাশি তাকে নিজের সময়কে চিহ্নিত করে তাকে বিশিষ্টতা দেওয়া আকাক্সাও থাকতে হবে। এখানেই চলে আসে দশক ভাবনার কথাটি নিজের দশককে যদি কেউ প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে তার ভিতরে নতুন কবিতা সৃষ্টির ভাবনাটি ক্রিয়া করবে। দশক ভাবনাটিকে কেবল একটি দশকের মধ্যেই বিবেচনা করলে চলবে না। তিরিশের দশকের যে কাব্য স্টাইল, কাব্যবোধ তা কিন্তু তিরিশেই পরিপূর্ণ বিকশিত হয়নি বরং তিরিশের বোধ, স্টাইল কিন্তু তিরিশের পরেই স্বয়ংসম্পুর্ণ হয়েছে। এখন শূন্য দশকের যদি কেউ নতুন কাব্য স্টাইল নিয়ে আসতে চান তাহলে তিনি যে দশকেই তা করে ফেলবেন এমনটি ভাবা ঠিক নয়। এই দশকেÍ পরে আরো দুই দশক হয়তো লেগে যেতে পারে এই নতুন কবিতা নির্মাণ করতে। সেেেত্র তাদের কাব্যবোধ, স্টাইল নির্মাণের ঘোষণা এখনি দেয়া প্রয়োজন এবং পরীা নিরীায় তা প্রস্ফুটিত হতে হবে। যদি এই নতুন ধারা বিশ বা তিরিশের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তা শূন্য দশকেরই প্রপ্তি শূন্যের পরবর্তীরা এই ধারাবাহিকতার অনুগামী হবেন মাত্র।

গোষ্ঠী - বিশ্বায়নের প্রভাব, প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্য মানুষের গড়পরতা আই. কিউ. বৃদ্ধি জীবনকে আগের তুলনায় অনেক জটিল এবং চাতুর্যর্পূণ করে তুলেছে ফলে এখন আমরা আবার সমাজবদ্ধ হয়ে পড়েছি। আর এই জন্য এখন একক থেকে আমরা সমষ্টির দিকে এগুচ্ছি ফলে একটি নতুন কবিতা সৃষ্টির জন্য গোষ্ঠীগত চর্চ্চাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কবিতা সম্পুর্ণ একার সৃষ্টি। কিন্তু সৃষ্টির মনন তৈরী করে দিতে পারে গোষ্ঠীগত চর্চ্চা। ফলে যারা নতুন কবিতা সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছি তাদের একটি গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এই গোষ্ঠীর ভেতরে থাকতে হবে মেধা বিনিময়ের আস্থা, মানসিক বয়সের পূর্ণতা এবং দীর্ঘদিন চর্চার মানসিকতা। এখন শূন্য দশকের গোষ্ঠী যদি শূন্য দশকেই শেষ হয়ে যায় তাহলে এ গোষ্ঠীর কোন দরকার নেই। বরং এই গোষ্ঠীর একটি সুনির্দিষ্ট দর্শন নিয়ে বহুদিন বহুদূর যাওয়ার ল্য থাকতে হবে।

ছোটকাগজ - গত দশকের তুমুল ছোটকাগজ আন্দোলনের পরেও আজকে যারা নতুন কবিতা নিয়ে ভাবছেন তাদেরকে আরেকবার ছোটকাগজ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। গোষ্ঠী এবং ছোটকাগজ অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। কিন্তু ছোটকাগজ কি গোষ্ঠীর মুখপত্র হবে? তাহলেই নতুন কবিতার বারোটা বেজে যাবে? গোষ্ঠী এবং ছোটকাগজের মাঝে আরেকটা জিনিস থেকে যাচ্ছে যা হলো মূল জিনিস আর তা হলো দর্শন, নতুন কবিতা, কাব্যবোধ। লিটলম্যাগ হবে সেই দর্শনের মুখপত্র। যে গোষ্ঠী যে দর্শন বা কাব্যবোধের চর্চ্চা করছে কবিতাটা সেই গোষ্ঠী থেকে নাও আসতে পারে। বরং গোষ্ঠীর বাইরে কোন নিভৃতচারী কবির কলম থেকেও আসতে পারে সেই েেত্র ছোটকাগজ সেই কবিতাটা ছাপতে দায়ংবদ্ধ। আর এই জন্যই ছোটকাগজ কোন গোষ্ঠীর মুখপত্র হতে পারে না, হবে দর্শনের, নতুন কবিতার মুখপত্র। ছোটকাগজ নিয়ে এই সময়ে যে জিনিসটি শংকার তাহলো ছোটকাগজ সম্পাদক ভুলে যাচ্ছেন তিনি একটি কাগজ সম্পাদনা করতে বসেছেন, এবং তিনি তার কাগজের আয়তন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন আর এই প্রলোভনেই তিনি ঢাউস সংখ্যা বের করছেন আর সেখানে না থাকছে পরিচর্যা, না থাকছে লেখার মানের প্রতি নজর দেয়ার ফুরসৎ। সা¤প্রতিক সময়ের ছোটকাগজ গুলির দিকে নজর দিলে তা স্পষ্ট হয়, অনেক ঢাউস সাইজের ছোটকাগজের যাঁতাকলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ছোটকাগজ আন্দোলনের প্রাণ ছোট ছোট অবয়বের কাগজগুলি। নব্বুইদশকের তুমুল কবিতা আন্দোলনকে উসকে দিয়েছিলো ুদ্র আকারের অনুশীলন কাগজটি, পরবর্তিতে অনুশীলনকে ঘিরে আরও কয়েকটি কাগজ সৃস্টি হয়েছিল। একদিন তারা সকল কাগজকে হত্যা করে মিলিত প্রচেষ্টায় বের করে ঢাউস সাইজের কাগজ ময়মনসিংহ জং। যে অনুশীলন বের হয়েছিলো ১৭সংখ্যা সেখানে ময়মনসিংহ জং ৩ সংংখ্যা বের হয়েই মুখ থুবড়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় ঢাউস সাইজের কাগজগুলি দেখে ুদ্র অবয়বের কাগজগুলি কি একটু ভয় পেয়ে কি থেমে যাচ্ছে? সিলেট থেকে কাজী জিননূর বের করতো জারুল, সুণৃতর বিশাল অবয়ব দেখে কি সে লজ্জা পেয়ে জারুল প্রকাশ করছে না? তেমনি গুহাচিত্র?

উন্মাদনা - নতুন কবিতা সৃষ্টির জন্য জরুরী হচ্ছে উন্মাদনা। দশক, গোষ্ঠী, ছোটকাগজ এই তিনটি জিনিসের মধ্যে দিয়ে নির্মিত দর্শন কে নিয়ে কবির ভেতরে যদি প্রচণ্ড উন্মাদনা তৈরি হয় তাহলে নতুন কবিতা সৃষ্টির পথটি সুগম হয়। আমাদের দেশে উন্মাদনা আছে তো দর্শন নেই, দর্শন আছে তো উন্মাদনা নেই। এই যে অবস্থা তার উত্তরণ দরকার। ষাটের দশকের দর্শন এবং উন্মাদনা একই সঙ্গে শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু কেন জানি এখন মনে হয় এটি ছিলো ব্যক্তিস্বার্থলোভী মানুষের সামাজিক সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নেওয়ার ফন্দি। এ থেকেও আমাদের সর্তক তাকতে হবে। একটি দর্শন প্রথমে নিজের ভেতরে ধারণ করে পরে তা কবিতায় প্রতিস্থাপন করে সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং সেই ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য থাকতে হবে উন্মাদনা। এবং নিজের কবিতার দর্শনকে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে যা থেকে সমাজ, কাব্য সমাজ প্রচণ্ড রকম ধাক্কা খায় আর এটি করতে গিয়ে নিজেকে হবে হবে মোহমুক্ত।

মোহমুক্তি - মোহমুক্তি ছাড়া নতুন কবিতা কখনোই সম্ভব নয়। একজন কবি যখন নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে চান তাকে অগ্রজ কবি, সমসাময়িক কবি, অনুজ কবি,সামাজিক বিশ্বাস, মূল্যবোধ থেকে অবশ্যই মোহমুক্ত হতে হবে। অগ্রজ কবিদের থেকে আমাদের মোহমুক্তি ঘটেছে ঠিক কিন্তু তা কবিতার জন্য নয় ব্যাক্তিগত কারণে। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন? কবিতার জন্য অগ্রজ সম্বন্ধে আপনার মোহমুক্তি ঘটেছে? সমসাময়িকদের সম্পর্কে মোহমুক্তি আমাদের এখনোও ঘটেনি কারণ এখানে আরাব give & take এর একটি অলিখিত চুক্তি রয়েছে। একজন নতুন কবিতা কর্মীকে অবশ্যই এই মোহমুক্তি ঘটাতে হবে। সামাজিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ থেকে মোহমুক্তি আমাদের ঘটেনি আমারা ভিতরে ভিতরে মৌলবাদী কিন্তু ভান করি প্রগতিশীলতার। আমাদের সময়েই আমাদের নিজেদের শহরেই এমন প্রগতিশীলদের খুঁজে পাওয়া যাবে যিনি নিজেকে এবং নিজের কাগজটিকে প্রগতিশীল বলে দাবী করে অথচ তার কাগজটির প্রথম পেইজেই দেখা যায় তিনি তার কাগজটিকে লালন করছেন প্রতিক্রিয়াশীল এক এমপি’র টাকায়, (পড়ুন শালিক জংশন, সম্পাদক সিদ্ধার্থ টিপু। কাগজটির প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে ঐ এমপিকে যার টাকায় কাগজটি বের করা হয়েছে) আর তখনি বলতে ইচ্ছে করে এমন প্রগতি চাই না। আমরাতো নিজের ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড রকম ঈর্ষাকাতরতা পরশ্রীকাতরতা ধারণ করে সাধু সাজার ভান করি। যে দর্শন আমরা কবিতায় প্রকাশ করতে চাই সামাজিকতার ভায়ে আমরা তা জীবনে ধারণ করতে চাই না। সমাজ থেকে অগ্রজ থেকে সমসাময়িক এমনকি অনুজ থেকেও আমাদের মোহমুক্ত হতে হবে। মনে রাখতে হবে এ পৃথিবীর কোন কিছুই কিছু নয় যতই গোষ্ঠীগত ব্যপার থাকুক সে মূলত একা। এ পৃথিবীর সে হচ্ছে আদিমতম এবং শেষ পুরুষ। তার আগে আর কেউ কিছু বলে নি।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০৮
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×