somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কেমন পৃথিবী?

১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতে শুরু করল বিমান ক্রাশের পর সোসিয়াল মিডিয়ার অবস্থা দেখে। আমরা কতটা অমানুষ হয়ে গেছি তা জানলে আপনি নিজেও শিহরিত হবেন যদি ক্ষানিকটা অনুধাবন করেন।

মনে করুন আপনি একজন পিতা বা মাতা। আপনার সন্তান মাত্র ২০টা মিনিট আগে আপনার সাথে ফোনে কথা বলেছে। একটুখানি কল্পনা করুন হুট করে সে আর এই পৃথিবীতে নেই। কেমন ফিল হবে আপনার?

এত এত পরিমাণ ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ফটো দিতে দিতে উড়িয়ে দিচ্ছি। আসলেই কি আমরা সমবেদনা পাচ্ছি? সমবেদনার মানে বুঝেন আপনারা? যে হারায় তার সমান পরিমাণ বেদনা পাওয়াকে সমবেদনা বলে। ইউ হ্যাভ টু বি জেনুয়েনলি সরি ফর দিস ইন্সিডেন্স। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষজনকে জানিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করাটা অবশ্যই একটা শয়তানের কাজ।

কতটা খারাপ আপনি ভাবুন, স্ট্যাটাস দেয়ার পাচ মিনিট পর আবার আপনি গুনছেন কয়টা লাইক পড়ল, কয়টা স্যাড রিঅ্যাক্ট পড়ল। আপনি প্রোফাইল পিকচার কালো করে খুব সুন্দর করে লেখে দিলে আপনি খুবই সরি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্যে। ওহ বিলিভ মি, ইউ আর নট। ইউ আর অ্যা ফেইক। আপনি যখন দুঃখ অনুভব করবেন তখন যার হারায় তার অবস্থানে নিজেকে বসিয়েই দুঃখ অনুভব করবেন। অন্যথায় এটাকে দুঃখ ফিল করা হয়না।

আমার প্রিয় একজন শিক্ষক বলেছেন, মনে করো হুট করে তোমার চাকরীটা শেষ হয়ে গেল বা তুমি ফকির হয়ে গেলে। ৫০% মানুষ যারা তোমার একান্ত কাছের, তারা এ সম্পর্কে সামান্য কেয়ারও করবেনা। শুধু ফরমালিটি মেনশন করতে গিয়ে মুখ ফুটে বের করবে, 'এখন কি অবস্থা ভাইসাহেব?' 'আহারে, কি হয়ে গেল'। এ ধরনের কথাগুলো ছাড়া মন থেকে তারা সামান্যতম দুঃখও অনুভব করেনা। আপনার সামনে থেকে তারা চলে যাবে, ওখানেই এই দুঃখ পাওয়া কাহিনীর খতম। এই হল ৫০% এর অবস্থা, তাহলে বাকী ৫০%? বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, বাকী ৫০% খুশি হবে যে আপনি জবটা হারিয়েছেন বা ফকির হয়ে গেছেন।

হ্যা ভাই। এটাই আমাদের এখনকার পৃথিবী। এটাই আমাদের পৃথিবীতে চলছে। ৫০টা প্রাণ ঝরে গেছে আর আপনি প্রোফাইল পিক কালো করে ঝুলিয়ে রাখছেন, ট্রাষ্ট মি এটা শো অফ ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি এই মানুষগুলোর প্রাণকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটাচ্ছেন, মানুষ দেখাচ্ছেন বৈ আর কিছুই নয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে দেখেছি তারা প্রোফাইলে ফ্রেম বানিয়েছে বিমান দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত, অমুক গ্রুপ। কতটা নির্বোধ এবং একই সাথে অমানুষ হলে এমন শোকাহতের মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালাতে পারে আমার জানা নেই।

ঘটনা একটু অন্যদিকে ঘুরাই কিছুক্ষণের জন্যে। বর্তমান সমাজে আমাদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হল কমিউনিকেশন। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের কমিউনিকেশন। পিতার সাথে পুত্রের কিংবা হাজবেন্ডের সাথে ওয়াইফ। সবার সাথেই যে কমিউনিকেশন গ্যাপটা এটাই আমাদের মানুষ থেকে অমানুষ বানিয়ে দিচ্ছে। আসল জরিপ দিতে পারছিনা কিন্তু একটু ঘাটাঘাটি করলেই বুঝতে পারবেন বাংলাদেশে ৭০-৮৫% ফৌজদারী মামলাই হল জমিজমা সংক্রান্ত। মজার ব্যাপার হল এই মামলার মধ্যে অধিকাংশ বাদি-বিবাদীই হল আপন রক্তের। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন? না করলে করার কিছু নেই, কারন এটাই সত্য। ভাই-ভাইয়ের সাথে জমি নিয়ে মামলা করছে। আপনি কি ভাবতে পারেন ভাই? ৫০টা মানুষ হুট করে চলে গেল, যে পৃথিবীতে এক মুহুর্ত বেচে থাকার নিশ্চয়তা নেই সেই পৃথিবীতে আপন রক্তের ভাই-বোনরা জমি নিয়ে মামলা করছে। এটা হল আমাদের পৃথিবী। আর বাকি ১৫% মামলা হাজবেন্ড-ওয়াইফ ছাড়াছাড়ি সংক্রান্ত। এই হল আমাদের যোগাযোগ এবং সম্পর্কের ধরন।

এটা এমন একটা নকল পৃথিবী যেখানে রিয়েলিষ্টিক বলে কিছুই নেই। যেখানে মানবতার নামে মানুষ টিভিতে মুখ দেখায়, ফেসবুকে বুলি শুনায়। এটা এই পৃথিবী। সত্যিই মাঝেমধ্যে চরম অবাক হই, এ কেমন পৃথিবী?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×