দশম শ্রেণীতে থাকাকালীন অবস্থায় বাংলা প্রথম পত্র বইয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের "দুরন্ত পথিক" নামে একটি প্রবন্ধগল্প পড়েছিলাম। তার মূল বক্তব্য ছিলো এমন, যতই দুরন্ত পথিক সামনে এগোতে চাইবে, কন্টকাকীর্ণ পথ তার ধারালো কাঁটায় তাদের পথ রুখে দাঁড়াবে। শেকলে পা জোড়া বেঁধে আটকে রাখতে চাইবে। পেছনে জড়োসড়ো হয়ে থাকা বুড়োরা সামনের ভয়ংকর কষ্টের বিবরণ দিয়ে থমকে দিতে চাইবে। শেষমেষ মৃত্যু নামক দানব তার তলোয়ার বের করে শেষ সুযোগ দিবে যেন পথিক ফিরে যায়। কোনো কিছুই দুরন্ত পথিক পরোয়া না করে সামনে এগোয় আর বলে, আমাকে অনুসরণ করে আসছে সহস্র পথিক। সেই সহস্রের প্রত্যেকের পেছনে আছে আরো সহস্র। তারা সহস্রের পেছনে সহস্র। তাদের কি করে রুখবে?
ব্লগার রাজীব খুন হয়েছেন। অভিজিৎ সরকার খুন হয়েছেন। ফয়সাল আরেফিন দীপন খুন হয়েছেন। আহমেদুর রশীদ টুটুল খুন হয়েছেন। কাল আমি খুন হবো। পরশু আপনি খুন হবেন। ক্ষতি আমাদের হচ্ছে,কিন্তু তাদের লাভ হচ্ছে না। যারা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তারা হয়তো "একটি গাছ কাটলে দশটি গাছ লাগান" এই নীতিতে বিশ্বাসী। একজন করে পথিক মারছে আর দশজন করে জীবিত করছে!
সাবাশ! মারতে থাকো। আমরা মরতে জানি। কত মারবে? রক্ত আমাদেরই, ডিএনএ হলো বাংলাদেশ প্রেমিকের ডিএনএ। আবার "বাঘ"ই জন্ম দেবো। ভয়কে কবর দিয়েছি এ মাটির বুকে জন্মেই। সে এখন কঙ্কাল। তোমরা তোমাদের মত চলো। আমরা ভীত নই। কারো পথ রুখে দাঁড়াই না। পথটাই চিরতরেবিলীন করে দিই।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে যেন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে বা অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদান করা হয়। বেশি দেরী হয়নি বিদেশী নাগরিক খুনের। তার উপর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল শুধুমাত্র নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার অলরেডি নাক সিঁটকে ফেলেছে মুক্তমনাদের চেতনা সংরক্ষণে বাংলাদেশের অবহেলা এবং ধ্বংসের তাগিদ দেখে। তাছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশে বড় ধরনের জঙ্গী হামলা হতে পারে। হচ্ছেও বর্তমানে। একজন দুজন করে মারছে,তাই গায়ে লাগছে না। এগুলোই এক সময় মহামারী আকার ধারণ করবে। আর আন্তর্জাতিকভাবে যখন এ ধরনের কিছু ধারণা করা হয়,তখন তা একেবারে ফেলনা হয় না। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যদিও বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা পজিটিভ হয়েছিল,খেয়াল করলে দেখা যাবে, শুধুমাত্র নিরীপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশ নেগেটিভিটি অর্জন করছে। মনে রাখতে হবে, এক গামলা দুধ নষ্ট করতে এক ফোঁটা লেবুর রসই যথেষ্ট! বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কথা কিছুটা সন্তোষজনক এক্ষেত্রে। তিনি বলেছেন, "সমস্যা এখন আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান করতে হবে।" যত যাই বলি, আমাদের ঘরের ভুল যদি আমরা না শুধরাই তাহলে পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর ঠ্যাকা নেই তা শুধরানোর। তারা আমাদের ভুল নিয়ে কানাঘুষো করতে পারলেই বেশি সন্তুষ্ট। গৃহযুদ্ধ একটি দেশভঙ্গের কারণ হয়, এ কথা আমাদের মাথায় রাখা উচিত। তবে বাংলার দামাল বাহিনীগুলোর প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমার বিশ্বাস আছে। আশা আছে। তারা একবার গর্জে ওঠার দেরী! আসুন আমরা সবাই মিলে শুধু আর একটিবার "বাংলাদেশকে ভালোবাসি" ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৫