somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প- পরিচয়

০২ রা অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্রেনের লাগেজ কম্পার্টমেন্টে নিজের ব্যাগটা রাখতে রাখতে সহযাত্রীর দিকে তাকালেন শহীদুল হাসান।
মনে মনে খুশিই হলেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। টু সিটেড এই ফার্স্টক্লাস কামরায় পুরো পথ মুখ বন্ধ করে যেতে হলে দম আটকেই মরতে হতো। আর সাথে কোনো ছেলেছোকরা বসলেও ঝামেলা ছিল। এই বয়সে নিউ জেনারেশনের সাথে আর ঠিক সহজ হতে পারেন না। কী এদের চিন্তাধারা, কথাবার্তা...খোঁজখবরই রাখা হয় না ইদানিং। আলাপ জমাতে গেলে অপরপক্ষের চিন্তার ধাতটা বোঝা জরুরি।
শহীদুল হাসান সহযাত্রীর দিকে একটু কটাক্ষ হানলেন। মনের ভেতরে সুপ্ত একটা ইচ্ছা ছিল, ভদ্রলোক হয়ত তাকে চিনতে পারবে। দেশের রাজনীতির বিষয়ে সচেতন হলে তাকে চিনতে পারাটা অস্বাভাবিক না। এমপি ইলেকশনের সুবাদে পোস্টারেও তাকে দেখতে পাওয়ার কথা!
সহযাত্রী মুখ তুলে তাকাল, চোখাচোখি হতে অল্প একটু হাসিও বিনিময় হলো দুজনের মধ্যে। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। মনে মনে আশাহত হলেন শহীদুল হাসান। চিনতে পারল না? নাকি চিনতে পেরেও কিছু বলল না? মুখের সামনে কী একটা বই ঝুলিয়ে রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। ব্যাটা বেশি ভাব দেখাচ্ছে না তো?

নাও চিনতে পারে অবশ্য। ইতিমধ্যেই টিকিট চেকার এসে টিকিট নিয়ে গেছে। শহীদুল হাসান জানতে পেরেছেন এই ভদ্রলোকও একই জায়গায় যাচ্ছে। ঐ এলাকার স্থানীয় নয় নিশ্চয়ই, কিন্তু আসা যাওয়া থাকলেও তো তাকে চিনতে না পারার কারণ নেই।
শহীদুল হাসান তার এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি। এলাকার মানুষ এক নামেই তাকে চেনে। সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত আছেন আজ বেশ অনেক বছর ধরে। দু’বার এমপি নির্বাচনও করেছেন। তবে জিততে পারেননি। সেই প্রসঙ্গ আলাদা। দলের লোকরাই গাদ্দারী করেছে তার সাথে। এখনও হাল ছাড়েননি তিনি। লেগে আছেন যুতমত। প্রতিমাসে দুই তিনবার করে এলাকায় ঘুরে আসেন। মানুষজনের সাথে কথাবার্তা বলে নিজের ইমেজ ঠিক রাখার চেষ্টা করেন। তবে লোকজন বড় ধড়িবাজ। ভাব দেখায় যে তার সাথে সাথেই আছে। কিন্তু ভোট দেওয়ার বেলায় আরেকজনকে দিয়ে দেয়!

শহীদুল হাসান বার দুয়েক গলা খাঁকারি দিয়ে সহযাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তারপর শুরু করলেন, ‘জনাব কি এই প্রথমবার যাচ্ছেন স্বর্ণকুটির?’
ভদ্রলোক চোখ তুলে চাইলেন। শহীদুল হাসান এবারে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করলেন তাকে।
সাধারণ মানের একটা এ্যাশ রঙের শার্ট পরনে। শার্টটা খুব ভালোভাবে ইস্ত্রিও করা হয়নি। মনে হয় যেন তাড়াহুড়ো করে কোনোমতে একবার ডলা দেওয়া হয়েছে। গ্রে রঙের প্যান্টের সাথে বেশ মানিয়েছে লোকটাকে। মনে মনে অবশ্য একটা জিনিস মানতে হলো শহীদুল হাসানকে। ভদ্রলোক সুপুরুষ। পঞ্চাশের ওপারে বয়স। মাথাভর্তি সাদাপাকা ঘন চুলের বসত। সেগুলোকে খুব যত্ন করে আঁচড়ানো হয়নি। তবু বেশ একটা আলাদা সৌন্দর্য প্রকাশ পাচ্ছে। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। সেটাকে সুউচ্চ নাকের সাথে সেঁটে নিয়ে হাতে ধরা বইটার ওপরে অখণ্ড মনোনিবেশে লোকটার ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট পরিস্ফূট।

ভদ্রলোক বইয়ের ওপর থেকে চোখ সরালেন। মুখে স্মিত হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললেন, ‘জি, আমার এদিকটাতে আসা হয়নি তেমন একটা!’
‘হুম, সেটা বুঝতে পেরেছি। আপনি যে এই এলাকায় নতুন আসছেন, সেটা আমি না বুঝলে কে বুঝবে?’
সহযাত্রী ভদ্রলোক সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে তাকালেন। দৃষ্টিতে কৌতুহল আর আগ্রহ ঝিকিমিকি কিরণ ছড়াচ্ছে। এতক্ষণে খুশি হয়ে উঠলেন শহীদুল হাসান। যাক, এতক্ষণে ব্যাটা তার দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হয়েছে। এইবার নিজের পরিচয় দিয়ে বেশ একটা চকমা দেওয়া যাবে লোকটাকে!

শহীদুল হাসান আয়েশ করে নিজের সিটে বসলেন। ব্যাগ থেকে আরামদায়ক কুশন বের করে সিটের গায়ে লাগিয়ে বেশ সোফার মতো বানিয়ে নিয়েছেন। চায়ের ফ্লাস্কটা বের করলেন। আর বের করলেন দুটো পেয়ালা। ঢাকা থেকে দীর্ঘ এই ট্রেনজার্নি তাকে মাঝে মাঝেই করতে হয়। তাই সবরকম আরাম আয়েশের বন্দোবস্ত তাকে সাথে রাখতে হয়। প্লেনে যেতে পারলে এই হ্যাপা পোহাতে হতো না। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়!
স্বর্ণকুটির একেবারে অখ্যাত অজ্ঞাত প্রত্যন্ত এলাকা। এই এলাকায় বা এলাকার আশেপাশে এয়ারপোর্ট হওয়ার সুদূরতম সম্ভাবনাও নেই। তবে ভিন্ন একটা কারণে এই এলাকার নামডাক এখন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এই অঞ্চলে নাকি খুব ভালোমানের কয়লা আর চুনাপাথর আবিষ্কৃত হয়েছে। মানের দিক থেকে নাকি একেবারে অতি উচ্চমানের এই কয়লা আর চুনাপাথর। কিন্তু নানারকম জটিলতার কারণে খননকার্য শুরু করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই বড় বড় ব্যক্তিবর্গ এসে জায়গাটা পরিদর্শন করে গেছেন। ঘিরে টিরে রাখা আছে ঐ অংশটুকু। কিন্তু খননকার্য শুরু করতে গেলে নাকি নানারকম সার্ভে করতে হবে। এলাকার জিও টেকনিক্যাল অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হবে। স্যাম্পল কালেকশন করে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে এসব পরীক্ষা করতে হবে। বড়ই হ্যাপার কাজ!

এতকিছু করার পরে সিদ্ধান্তে আসা যাবে যে, কয়লা আর চুনাপাথর তুলে আনতে হলে মাটির কতদূর অব্দি খনন করার প্রয়োজন পড়বে। কী পরিমাণ সময় আর কতজন শ্রমিক এই কাজের জন্য লাগবে! ঢাকা থেকে নাকি বিশিষ্ট একজন স্পেশালিস্টকে নিয়ে এসে এই ব্যাপারে প্রাথমিক কাজ শুরু করা হবে। সেই স্পেশালিস্ট ভদ্রলোক নাকি সময় দিতে পারছেন না। নামিদামি লোক। দেশে বিদেশে নানারকম কনসালটিং কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। স্বর্ণকুটিরের মতো জায়গায় তাকে আনার জন্য ব্যাপক কাঠখড় পোড়ানো হচ্ছে। এমপি নাজিমউদ্দীন নিজে এই কাঠখড় পোড়াচ্ছে।
এছাড়া খরচাপাতির বিষয় তো আছেই! এসব খননকার্যে সরকারের প্রচুর খরচাপাতি হবে। কাজেই সেই ব্যাপারে সুনিশ্চিত নিশ্চয়তা না পাওয়া গেলে প্রাথমিক কাজে হাত দিয়ে লাভ নেই। তবে এমপি মহোদয় আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
এই সব খবরই শহীদুল হাসানের কানে ভাসা ভাসা এসেছে। বিরোধীদলীয় এমপির সাথে তার বেশি একটা মাখামাখি নাই। দুজনই দুজনকে এড়িয়ে চলে।

শহীদুল হাসান ফ্লাস্ক থেকে চা বের করে সহযাত্রীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘আরে ভাই অবাক হচ্ছেন কেন? আমি হলাম এই এলাকার একেবারে অস্থিমজ্জার খবর জানা মানুষ। আমি যেমন এলাকার সবকিছুর খবর জানি, এই এলাকা আর এলাকার মানুষও আমার সব খবর রাখে। কাজেই আপনি যদি এখানে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন, তাহলে কি আর আমাকে চিনতেন না হা হা হা ...’
ছোট করে ধন্যবাদ দিয়ে সহযাত্রী হাত বাড়িয়ে চা নিলেন। তারপর স্মিতমুখে বললেন, ‘ওহ আচ্ছা!’
শহীদুল হাসানের ভ্রু কুঁচকে গেল। এতগুলো কথা শুনে এই লোকের মুখ দিয়ে কেবল ‘ওহ আচ্ছা’ বের হলো! কথা কম বলে নাকি তার ভারটা এখনও বুঝতে পারছে না?

কিছুক্ষণ চুপচাপ চা খাওয়া চলল। শহীদুল হাসান একটু উশখুশ করে খুব ক্যাজুয়ালি বললেন, ‘কোনো কাজে যাচ্ছেন নাকি? বেড়াতে টেরাতেও যায় লোকে...সুন্দর জায়গা। প্রত্নতাত্তিক কিছু নিদর্শন আছে। তবে আপনি নিশ্চয়ই এত দূর থেকে বেড়াতে যাচ্ছেন না?’
ভদ্রলোক আবারও অল্প হাসি দিয়ে সংক্ষেপে বললেন, ‘জি ঐ আর কী! একটা ছোট কাজেই যাচ্ছি।’
‘তা গিয়ে উঠবেন কোথায়? চেনেন টেনেন কাউকে? আমার ডেরায় উঠতে পারেন। এই গরীবের ডেরা অপছন্দ হবে না আপনার। রাজপ্রাসাদ না হলেও কম কিছু না বুঝেছেন? মাঝে মাঝে এসে থাকি। সেটা বুঝেই পৈতৃক বাড়িটাকেই বাসোপযোগী করে নিয়েছি আর কী! চাকর বাকর আছে অনেক। বিশাল বড় বাড়ি, খালিই পড়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। এদের তো মজাই মজা! আশেপাশে গাছগাছালি প্রচুর। ফলমূল পুকুরের মাছ শাকশব্জি সব এরাই ভোগ করে। রাজার হালেই থাকে একেকজন। আমি আর গিয়ে ক’দিন থাকি?’

‘আচ্ছা! আপনার বাড়ি তাহলে এখানেই!’
‘এতক্ষণ ধরে তাই তো বলছি জনাব! আমাকে এই অঞ্চলের গাছপালাও চেনে। তাই আপনি যখন চিনেননি তখনই বুঝতে পেরেছি যে এলাকায় নতুন আসছেন। আপনি কোথায় থাকবেন ঠিক করেছেন কিছু?’
‘ন...না...সেভাবে তো কিছু ঠিক করিনি! ব্যবস্থা না হলে আজকেই রাতের ট্রেনে রওয়ানা দিয়ে দিব!’
‘আরে দূর! কী বলছেন এসব? আমার ঐ এলাহী বাড়ি থাকতে আপনে অন্য কোথাও কেন যাবেন? তা...কী কাজে এসেছেন? এখানে কোথায় থাকবেন কিছু ঠিকঠাক না করেই চলে এসেছেন! আমার সাথে যদি দেখা না হতো তাহলে তো মহাবিপদে পড়ে যেতেন!’

এই কথার উত্তরেও ভদ্রলোক অল্প হাসলেন।
শহীদুল হাসান বিরক্ত মনে ভাবলেন, ব্যাটা ভাবের দরিয়া! কথায় কথায় খালি পিচ করে হাসি দেয়! এদিকে কোথায় গিয়ে উঠবে সেই খবরই নাই! কাজের ধান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে হয়ত! পোষাকআশাক দেখে তো তেমন কিছু করে বলেও মনে হচ্ছে না। হয়ত টুকটাক ব্যবসাপাতির ধান্দা করছে! শহীদুল হাসান মনে মনে ঠিক করলেন, এই লোককে আজ বগলদাবা করে নিয়েই যাবেন তার বাড়িতে। আশেপাশের এলাহী হালহকিকত দেখিয়ে মানুষজনের পিলে চমকে দিতে খুব মজা লাগে তার।
তার বাড়ির আধুনিক ফিটিংস, আসবাবপত্র আর আশেপাশের জায়গাজমি দেখে কত জন যে চোখ কপালে তুলেছে এর আগে! বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে এসে প্রায় সময়েই মজা দেখেন। বাড়ির বারান্দায় এসে বসে থাকে দর্শনার্থীরা। শহীদুল হাসানের বাড়ি আসার খবর পেলেই সাহায্যের আশায় আশপাশ থেকে চলে আসে এরা। মানুষের চোখেমুখে ঈর্ষা আর সম্ভ্রমের মাখামাখি দেখতে অন্যরকম একটা তৃপ্তি বোধ হয়। এসবই তো জীবনের অর্জন! অন্যের চোখে নিজের পরিচয়ের ছায়া ফুটে উঠতে দেখেন। আত্মতৃপ্তিতে বুক ভরে যায় শহীদুল হাসানের।
এই স্বল্পভাষী ভাবুক কিসিমের লোকটিকেও তার খুব চমকে দিতে ইচ্ছে করছে। ঠিক করলেন, একে আজ নিজের বাড়িতেই থাকতে দিবেন। এক রাত থাকুক। তারপর নিজের কাজ বুঝে জায়গা খুঁজে নিবে। কাউকে চমকে দিতে একদিনই যথেষ্ট!

সুদীর্ঘ যাত্রাপথে প্রায় পুরো সময়েই শহীদুল হাসান একাই বকবক করে গেলেন। নানাভাবে সামনের জনকে নিজের পরিচয় বোঝানোতে সচেষ্ট রইলেন তিনি।
বিকেলের আগ দিয়ে ট্রেন এসে থামল তাদের বাড়ির স্টেশনে। স্টেশনের দিকে তাকিয়ে আজ একটু বিস্ময় লাগল শহীদুল হাসানের চোখে। এত ভিড় কেন স্টেশনে? এখানে তো এত লোক নামে না! এত লোক ওঠেও না এখান থেকে। আজ পুরো স্টেশনে কেমন একটা গমগম অবস্থা বিরাজ করছে।
ঘটনা কী জানার জন্য জানালার কাছে এগিয়ে গেলেন তিনি। প্রায় শ দেড়শ মানুষ দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনে। কারো কারো হাতে ফুলের মালা। চোখ কুঁচকে সামনে ভালোভাবে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। এমপি নাজিমউদ্দীনকেও দেখতে পেলেন তিনি। আজব ব্যাপার। আজ তার হাতেও মালা দেখা যাচ্ছে! নাজিমউদ্দীনের সাথে তার একরকম মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এই মালা কার গলায় পরিয়ে দিবে সে?

কিছু একটা বলার জন্য পেছন ফিরতে গিয়ে দেখেন, তার সহযাত্রী দ্রুত হাতে নিজের ছোট ব্যাগটা বের করে গলায় ঝুলিয়ে নিয়েছেন। একেবারে নামার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত তিনি। শহীদুল হাসানকে বেশিকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ‘চলি ভাই, আপনার পরিচয় পেয়ে ভালো লাগল’ বলেই সুড়ুত করে নেমে পড়লেন তিনি।
শহীদুল হাসান তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছেন, এই কথাটাও বলার সুযোগ পেলেন না! ভদ্রলোকের যেন কোনোদিকে কোনো হুঁশই নেই!
তড়িঘড়ি নিজের লাগেজটা নামিয়ে নিয়ে নিজেও ভদ্রলোকের পেছন পেছন চললেন শহীদুল হাসান। জোরে ডাকতে যাবেন এমন সময় শহীদুল হাসান দেখলেন আরেক অভাবনীয় দৃশ্য। নাজিমউদ্দীন একেবারে দৌড়ে এসে মালা পরিয়ে দিলো তার এই দীর্ঘ যাত্রাপথের সহযাত্রীকে।
তেল চুকচুকে মুখে বলল, ‘স্যার আমরা যে কী পরিমাণ কৃতজ্ঞ আপনার কাছে! আপনি যে সময় করে আসতে পেরেছেন এজন্য পুরো এলাকাবাসীর তরফ থেকে আমরা আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই! আশাকরি এবারে আমাদের কয়লা আর চুনাপাথর খনির খবর পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে!’

ইতিমধ্যেই টুকরো টুকরো ভেসে আসা কথা শুনে বাকিটাও জানতে পেরেছেন শহীদুল হাসান।
তার সহযাত্রী ভদ্রলোকের নাম শরাফত উল্লাহ। জিও টেকনিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক। ভদ্রলোক নাকি নিজের গবেষণা কাজের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গোল্ডমেডেল পেয়েছে। দেশে বিদেশে তার গবেষণার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। স্বর্ণকুটিরের কয়লা আর চুনাপাথর খনির স্পেশালিস্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তাকে দিন চারেকের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তার থাকাখাওয়া সবকিছুই এমপি মহোদয় নিজের তদারকিতে করবেন।
অধ্যাপক সাহেব চুপচাপ থাকতে সচ্ছন্দবোধ করেন। তাই নিজের ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কোনো সফরসঙ্গী নিতে চাননি। অবশ্য পথিমধ্যে শহীদুল হাসানের মতো একজন ‘বিশিষ্ট’ ব্যক্তিকে সফরসঙ্গী হিসেবে পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি!

শহীদুল হাসান ট্রেন থেকে নামতে নামতে ভাবছিলেন, তার সহযাত্রীর নামটাও জিজ্ঞেস করা হয়নি! চেঁচিয়ে বলতে যাচ্ছিলেন, ‘আরে! আপনার পরিচয়টাই তো জানা হলো না!’
স্টেশনভর্তি মানুষ আর তাদের উন্মুখ হয়ে থাকা চোখমুখের দিকে বিস্মিতমুখে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। ভদ্রলোকের পরিচয়টা তাদের চোখেমুখেই যেন ঝিকমিক করছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৪১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×