সকালবেলা ফেসবুক খুলে আবারো একটা পুরানো কথা মনের মাঝে উঁকি দিয়ে যায়। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার !! ??
কারনটা হলো, ০২.০৩.২০১৩ তে আমার এক হিন্দু বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো ”কোন বসবাস করছি আমরা …আজ সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর … আমাদের গ্রামে হিন্দুদের পানের বরজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কিছু জামাত-শিবিরের কর্মীরা। আমাদের গ্রামে কখনো এমন ঘটনা আগে ঘটেনি” -তার বাড়ি খুলনায়। সে কিছুদিন আগে ইউরোপ থেকে দুটো মাষ্টার্স ডিগ্রী নিয়ে পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য কিছু করবে এই স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যায়।
আজ কোন স্ট্যাটাস দেয়নি সে। শুধু আমাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছে ,''আপু আমরা খুব বিপদ আর আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করছি। যে কোন মূহুর্তে প্রাণ যাবার ভয়। গতকাল রাতে আবারো আমাদের পানের বরজটা তছনছ করে দিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। কি করবো এ বিষয়ে? সবাই ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে আছি। বোঝাতে পারবো না, এই ভয়টা কিসের? শুধু জানি, সব হারানোর ভয়।''
উল্লেখ্য যে,তাদের এই পানের বরজ জোর করে দখল করে নিতে চাইছিলো কিছু বিএনপি সমর্থিত জামাতপন্থী লোকেরা। তাদের এই দখলপন্থায় বাঁধা দিয়ে সেই বন্ধুর বাবাকে পানের বরজ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, বর্তমানে উপজেলার চেয়ারম্যান এবং ঐ এলাকার স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
আমার বন্ধুটির বাবা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। বন্ধুটি তার বাবাকে সেই সময় পরামর্শ দিয়েছিলো, পানের বরজ বিক্রি করে ঢাকায় চলে আসতে। আর তার বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, ”জীবন থাকতে আমার ভিটে মাটি ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।” সেই স্কুল শিক্ষক আমার বন্ধুর বাবা কাঁদতে কাঁদতে তার ছেলেকে বলেছিলেন ,” তুই আর কোনদিন দেশে ফিরে আসবিনা, কোনদিনও না।” বাবার কথা শোনেনি আমার বন্ধু। ফিরে গিয়েছে অনিরাপদ মাতৃভূমিতে।
বাংলাদেশে ১৯৪৭ এর পর থেকে বারবার আঘাত করা হচ্ছে হিন্দু জনগোষ্ঠিকে। ঠিক যেমন ১৯৭১- এ এক পাকিস্তানী এক সেনার ভাষ্যে, “ আমাদেরকে বলা হয়েছিল হিন্দু আর কাফেরদের মারতে। জুনের কোন এক দিন আমরা এক গ্রামে অভিযান চালাতে গেলাম। আমাদেরকে বলা হলো এই গ্রামে হিন্দু আর কাফেরদের মারতে, আমরা গ্রামটি ঘিরে ফেললাম। গ্রামের মহিলারা কোরান পাঠ করছিলো আর পুরুষরা আল্লাহর দয়া চেয়ে নামায পড়ছিলো। কিন্তু তারা দুর্ভাগ্যবান। আমাদের কমান্ডিং অফিসার তাড়া দিচ্ছিলেন, হাতে সময় কম”।
যে পানের বরজ তারা দখল করতে পারছেনা, সেটার উপর অনেক রাগ এই দখলদারির খেলায় মত্ত্ব মৌলবাদিদের। তাই গতকাল রাতেও আবার তছনছ করে দিয়ে গেছে তাদের এই পারিবারিক আয়ের উৎসটুকুতে। তার এলাকার হিন্দু জনগোষ্ঠী দেশ ছেড়ে সীমান্তের দিকে পা বাড়াতে পারছেনা শেষ ভিটে মাটির মায়ায়। আবার জীবনটাও শত্রুর হাতে তুলে দিতে পারছেনা। কি করবে তারা জানে না। এই নিয়ে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৩ বার তাদের পানের বরজ ধ্বংস করা হয়েছে। ওরা যতবার অত্যাচার সহ্য করে আবার একটু জীবনের আশায় সামনের দিকে পা বাড়ায়, ঠিক তখনই আবার ওদেরকে ধ্বংসের দিকে পৌঁছে দেয় মৌলবাদির দল। এভাবে আর কত দিন আমাদেরকে এই মৌলবাদিদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে?
ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)