somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্নীতি ও ঘুষ অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার (নমুনা ইশতেহার)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে দুর্নীতির নানা প্রকারভেদ আছে । তবে দুর্নীতিকে প্রধানত, দুটিভাগে ভাগ করা হয় । একটি হচ্ছে, প্রতিনিয়ত যারা সরকারী সেবা নিতে যান তাদের অনেকেই বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে নানাভাবে ঘুষ দিতে বাধ্য হন । অন্যটি হচ্ছে, বিভিন্ন প্রকল্পে রাজনৈতিক দুর্নীতি । গবেষণা মতে, দুর্নীতি বাংলাদেশ থেকে যদি অর্ধেক কমানো যেত, তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার আরও দুই থেকে আড়াই শতাংশ বেশি হতো । দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । সাধারণভাবে যার চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের উপর ।
আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চায় যেখানে সরকার, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ জীবন হবে দুর্নীতির প্রভাব থেকে মুক্ত অনাবিল আনন্দের বাংলাদেশ ।
অঙ্গীকার
ব্যক্তির পরিচয় বা অবস্থান নির্বিশেষে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক ও দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করা হবে ।
এই মর্মে নিম্নোক্ত আইনি বিধিবিধান প্রণয়ন এবং কাঠমোগত সংস্কার করা হবে :
১:১-দুর্নীতির মামলার দ্রুত নিস্পত্তি: দুর্নীতির মামলার কার্যকর ও সময়ানুগ তদন্ত ও নিস্পত্তি নিশ্চিত কল্পে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন করা হবে । আপীল বিভিাগে জনস্বার্থে দুর্নীতির মামলাসমুহ দ্রুত নিস্পত্তির জন্য একটি আলাদা বেঞ্চ গঠন করা হবে ।
১:২-সংসদ সদস্য ও নির্বাহী বিভাগের সদস্যদের বার্ষিক আর্থিক তথ্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা এবং কতজন সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করেন নি তাঁদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা এবং জনগণের জন্য সহজলভ্য করা হবে মর্মে আইন প্রনয়ণ এবং তা কার্যকর করা হবে ।
১:৩-জনস্বার্থ সুরক্ষা কমিশন গঠন: সরকারি কর্মচারী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করা, তাঁদের সম্পদের বিবরণী যাচাই করা, তথ্য প্রদানকারীদের নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য জনস্বার্থ সুরক্ষা কমিশন নামে একটি প্রতিস্ঠান গঠন এবং প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রনয়ণ করা হবে ।

১:৪-স্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া : আইন করে সব সরকারি প্রতিস্ঠানের সব ক্রয়ের জন্য ই-প্রকিউরমেন্ট চালু করা বাধ্যতামূলক করা হবে ।
১:৫-একক উৎস থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় ও চুক্তি আইনে সুস্পষ্টভাবে সবোর্চ্চ সীমার উল্লেখ করে এবং দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বেনামী মালিকানার তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা করে আইন করা হবে ।
১:৬-সরকারি ক্রয়ে গোপন আঁতাত বন্ধ করার জন্য বিধানাবলী এবং লবিইং’ সংক্রান্ত নীতিমালা করা হবে ।
১:৭গোপন তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য আইন ও নীতিমালায় একটি আদর্শ মানদন্ড সুনির্দিস্ট করা হবে ।
দুদক পূর্নগঠন:বাংলাদেশে উন্নয়ন, সুশাসন, দারিদ্র দূরীকরণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে দুর্নীতি প্রধানতম অন্তরায় । রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে একটি স্বাধীন সংস্থা যাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে সেজন্য দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার চাপ ছিল । কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে নানা সমালোচনার মুখে পড়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি ।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারের পছন্দ অনুযায়ী দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় কিংবা দায় মুক্তি দেয়া হয় । বিশষে করে ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেগুলো কমই আমলে নেয়া হয় ।
দুদকের দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ, শনাক্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম পরিচালনা করা । দুদক চেয়ারম্যান নিয়োগে বিশুদ্ধতা আনয়নে নিম্নলিখিত আইন প্রনয়ণ করা হবে ।
১:৮-চেয়ারম্যান নিয়োগে স্বচ্ছতা দান এবং আস্থার সংকটের অবসানের জন্য সার্চকমিটি গঠনের বিধান সন্নিবেশিত হবে । সার্চকমিটি গঠিত হবে যাদের ভাবমূর্তি ভালো ছিল এমন অবসরপ্রাপ্ত কর্মজীবী এবং শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং নির্বাচনে শরিক বলে পরিগনিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে । সার্চকমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত তিন (৩) জন থেকে রাষ্ট্রপতি মহানুভবতা এবং বিতর্ক এড়ানোর জন্য প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিবেন।
১:৯-সার্চকমিটির যাবতীয় কর্মকান্ডের লিখিত ডকুমেন্ট জণগনের জন্য সহজলভ্য করার জন্য প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে তা প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন প্রনয়ণ করা হবে ।
১:৯- চেয়ারম্যান নির্ধারণকল্পে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের পাশাপাশি সাবেক জেষ্ঠ সামরিক-বেসামরিক অফিসার, টেকনোক্রাট, শিক্ষাবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের থেকে অর্ন্তভূক্ত করার সুযোগ রেখে আইন প্রনয়ণ করা হবে ।
স্বাধীন এবং শক্তিশালী, কার্যকর ও নিরপেক্ষ দুদক প্রতিস্ঠার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিধিবিধান সংযোজন-বিয়োজন করা হবে ।
২:১-দুদক (সংশোধনী) আইন, ২০১৩-এর ১১ধারার ৩২ক ধারাটি বাতিল করা হবে । আইনটিতে দুদককে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের কাছ হতে আবশ্যিকভাবে পূর্বানুমোদনের বিধান রেখে সরকারী কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে । দুদককে পঙ্গু বানানো হয়েছে । এই ধারাটি শুধু দুদক আইনের ধারা ৩২ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলীরও পরিপন্থী ।
২:২-কমিশনকে আরও গতিশীল ও নিরপেক্ষ করার জন্য বিধি প্রনয়ণে কমিশনকে পরিপূর্ণ স্বধীনতা দেওয়া হবে ।
২:৩-কমিশনের অভ্যন্তরীন জবাবদিহিতা সম্পর্কিত কমিটিতে এবং প্রচারণামূলক কর্মকান্ডে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি প্রাতিস্ঠানিকভাবে অন্তর্ভূক্তকরণের জন্য আইন প্রনয়ণ করা হবে ।
২:৪-প্রাতিস্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিস্ঠার জন্য সহায়ক সংস্থাগুলোর জনবল কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল বাড়ানোর জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে ।
২:৫-প্রেষণে নিয়োগের পরিবর্তে নিজস্ব কর্মীদের পদায়ন নিশ্চিত করা হবে এবং কর্মীদের দক্ষতা ও অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে ।
২:৬-আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য লজিস্টিক সহায়তা, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, দক্ষ ও যোগ্য আইনজীবী নিয়োগ, কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ, জনস্বার্থ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে ।
২:৭-দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গণশুনানি’কে প্রাতিস্ঠানিক রুপ দেওয়ার পাশাপাশি এর কার্যকরতা বৃদ্ধিতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ সমুহ গ্রহণ করা হবে ।
** প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগের সমাধান নিশ্চিতকল্পে দুদকের ফলো-আপসহ অভিযোগ নিস্পত্তি নিশ্চিত করা ।
** গণশুনানির জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা
**অধিকতর প্রচারণা নিশ্চিত করা
** অভিযোগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া
**প্রতিস্ঠান/খাতভিত্তিক আলাদা গণশুনানির আযোজন করার ব্যবস্থা নেওয়া
** গণশুনানিতে সংশ্লিস্ট প্রতিস্ঠানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করণ এবং সময় মতো গণশুনানি শুরু করা
**দুদকের পক্ষে সারা দেশের সমস্ত প্রতিস্ঠান সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয় । তাই সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহীতাদের মধ্যকার আস্থার সংকট আরো কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ সংশ্লিস্ট প্রতিস্ঠান ও কেন্দ্রগুলোতে প্রতিস্ঠান কর্তৃক অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ ও পরীবিক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে ।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×