somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারভার্ট – ১১

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দরজা খোলাই ছিল। হাল্কা ধাক্কাতেই অনেকটা খুলে যায়। মিশমিশে অন্ধকার করিডোরে সিঁড়ির বাল্বের আলো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে। আলো আঁধারির প্যাচপ্যাচে মিশেলে দৃষ্টিকে ধাতস্থ হওয়ার খানিকটা সময় দেয়ার জন্য দু’জনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। পুরো ঘরটা গিলে খেয়েছে নৈঃশব্দ। বেড়াল পায়ে প্রথমে প্রথমে পার্থ এগোয়, তারপর বাদল।

করিডোরের দু’পাশের খোলা দরজা দিয়ে রান্নাঘর, ড্রইংরুম এবং অন্যান্য রুমগুলোর নির্জন, নীরব অন্ধকারে গোরস্থ হয়ে থাকা দেখতে দেখতে ডাইনিং স্পেসটায় এসে দাঁড়ায় দু’জন। করিডোরের শেষ মাথায়, ডানদিকে অনন্যার বেডরুমের জেগে থাকা লাইট-ফ্যান মৃত্যুময় শূন্যতার সাথে যুঝে চলেছে। ওই ঘরের ডিম লাইটের মৃদু আলোর বিচ্ছুরণের কিছু ভগ্নাংশ এখানে এলিয়ে পড়েছে। ওই আবছা আলোয়, পায়ে কিছু ঠেকাতে, মেঝের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে বাদল। কিছু বিক্ষিপ্ত ভাঙা কাঁচের টুকরোর চাইতেও মনোযোগটা বেশী কেড়ে নেয় কয়েক ফোঁটা রক্তের দাগ!

“কায়সার ভাই!” আওয়াজ খোলে বাদল।

কোন সাড়া শব্দ নেই।

বাদলের ইশারা অনুসরণ করে পার্থর দৃষ্টি খুঁজে নেয় মেঝেতে রক্তের দাগ। একটা শীতল ঝাপটা অনুভব করে মুখে আর পিঠে, টের পায় ঘাড়ের লোমগুলোর দাঁড়িয়ে যাওয়া।

“কায়সার ভাই, আছেন?” পার্থর কম্পমান স্বরে তার ভেতরকার উদ্বেগ অস্থিরতা স্পষ্ট।

উত্তরে নৈঃশব্দ যেন নিজের বহাল তবিয়তেরই ঘোষণা দেয়।

এবার সাবধানী, এবং অজানা আশঙ্কায় কিছুটা চঞ্চল পায়ে অনন্যা-কায়সারের বেডরুমের দরজায় এসে দাঁড়ায় ওরা দুজন।

“ভয়াবহ!” টিউবলাইট জ্বালিয়ে, রুমের ভেতরকার চেহারা দেখে বাদলের যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া।

কায়সার এখানে নেই। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত রুমটির চেহারা আঁৎকে দেয়ার মত। মেঝেতে শতখন্ড হয়ে থাকা বর্ণিল কাঁচের টুকরো, বিক্ষিপ্ত বেশ কিছু রক্তের ছোপ, পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে থাকা বিছানার একপাশে একটা ভাঙা নীলাভ কাঁচের ফুলদানী। একটা বালিশ বিছানায় হেলান দিয়ে মেঝেতে দাঁড়িয়ে, আরেকটা ছেঁড়া-বালিশ-ওয়ার থেকে অর্ধেক বেরিয়ে দোমড়ানো চাদরের সাথে লুটিয়ে আছে বিছানার মাঝামাঝি। পাতলা তোষকের একটা কোণ খাটের সীমানা বাশ খানিকটা পেরিয়ে গ্রীষ্মক্লান্ত কুকুরের জিভের মত লকলক করছে অবিরাম ঘুরতে থাকা ফ্যানের বাতাসের ঝাপ্টায়। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে দু’জোড়া চোখ আটকে আছে বিছানার শেষ প্রান্তে, যেদিকটা, বিছানার গড়ন বলে দেয় পায়ের দিক, সেদিকে, কাঠের এবং তোষকের বেশ খানিকটা জুড়ে, কালচে লাল, জমাট বাঁধা রক্তের বেশ বড় একটা ছোপ!তার পাশে, বিছানার সীমানা দেয়া নকশা কাটা দেয়ালে লটকে আছে একটা আংশিক স্ট্র্যাপছেঁড়া ব্রা – নিঃসন্দেহে অনন্যার।

ওখান থেকে নজর ফেরাতেই চোখে পড়ে, বিছানার উল্টোদিকে ড্রেসিং-টেবিলের ওপরকার টেবিলক্লথ, সাজসজ্জার নৈমত্তিক উপকরণগুলো নিয়ে জড়পাটকি হয়ে ভূপতিত; টেবিলের নগ্ন কাঠের ওপর বিচ্ছিরিভাবে দৃশ্যমান ছেঁরা অন্তর্বাসটিও অনন্যারই হবে। বিছানার ওপাশে আলনার এলোমেলো কাপড়ের বেশ কটিই মেঝেতে। আলনার পাশে আলমিরার হাতলে অদ্ভুত ভঙ্গীতে ঝুলে আছে তার একটা পাজামা। ভাঙা টেবিল ঘড়িটা মেঝেতে চিৎ পড়ে থেকেও সচল। তার পাশেই কাৎ হয়ে আছে প্লাস্টিকের ছোট্ট, চ্যাপ্টা টুল, যেটার সম্ভবত ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা।

আলমিরা-আলনা আর বিছানার মাঝামাঝি প্রায় ফুট তিনেকের অনেকটা করিডোর পথের মত জায়গা, শেষ হয়েছে কায়সারের স্টাডি রুমের দরজায়। এই দরজাটাও খোলা, আর এর লাইট-ফ্যান দুটোই সজাগ।

“কায়সার ভাই!” আরেকবার গলা ছেড়ে স্টাডি রুমটায় পা রাখে বাদল। পার্থ পেছনে, তখনও পুরো বেডরুমটার ময়না তদন্ত করে চলেছে তার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা দৃষ্টি দিয়ে। বিছানার নীচে কিছু একটায় চোখ পড়তে হাঁটু মুড়ে বসে দেখে, একটা খোলা ট্রাভেল ব্যাগ, ওতে কিছু মেয়েলী পোষাক, মানে অনন্যার।

পার্থ এবার দাঁড়িয়ে তার সবটুকু অনুমানশক্তিকে নিয়োজিত করে ঘটনাপরষ্পরাগুলোকে সাজাতেঃ
যে কোন কারণেই হোক, অনন্যা বাসা থেকে বেরুবার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছিল। কায়সারের সাথে তার যে ভয়াবহ ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছে, সেটাতো স্পষ্ট। আর মৌসুমীর ফোন থেকে যতটা মনে হয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে কায়সারের আঘাত তার থেকে অনেক গুরুতর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কেন হল? আর কায়সারই বা কোথায় এখন?

বাদল এখন কায়সারের স্টাডি রুমে। এখানেও কেউ নেই। ছিমছাম রুমের দুটো বুক শেলফ, একটা বেশ চওড়া টেবিল, তাতে ছড়ানো বইপত্তর, কাগজ কলম। একটা পুরনো আমলের বিশাল আলমিরা। আর একটা ডেস্কটপ – তখনও সচল। খুউব নীচু আওয়াজে মনিটরে কিছু দৃশ্যের আনাগোনা। কৌতুহল চাপতে না পেরে বাদল কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারে মুভি বা ঐ জাতীয় কিছু চলছে বোধহয়। অনন্যা-কায়সারের মধ্যে এমন বিস্ফোরক কিছু ঘটে থাকবে, প্লেয়ার বন্ধ করারও সময়-সুযোগ হয়নি হয়তো। আর মিডিয়া প্লেয়ার সম্ভবত Auto repeat mode এ; নইলে এতক্ষণ চলবে কেন! চেয়ারের ওপর ঝুঁকে, মাউস চেপে ম্যাক্সিমাইজ করে। দৃশ্যপট চলতে থাকে, আর ক্রমাগত বাদলের চোখ কোটরের বাইরে ছিটকে আসতে থাকে।

“ক্র্যাপ!” প্রচন্ড বিস্ময়-ঘৃণামিশ্রিত উচ্চকন্ঠ উচ্চারণের সাথে বাদল সোজা হয়ে দাঁড়ায়, হতবাক চারপাশে বিহ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে, দু’হাতে মাথার চুল মুঠো করে ধরে দু’পা পিছিয়ে আসে। এবার চোখে পড়ে, চেয়ারের সামনে, ডেস্কটপ টেবিলের নীচে, দু’তিনটে দোমড়ানো টিস্যু পেপার। দু’য়ে দু’য়ে চার মেলাতেই তার পায়ের নীচের মেঝেটা যেন খানিকটা দুলে ওঠে। “পিস অফ শীট” বাদলের স্বগতোক্তির সময়ই পার্থ ভেতরে ঢোকে, “কি হইসে?” বাদলকে দেখে পার্থ বেশ অবাক। বাদলের দৃষ্টি অনুসরণ করে চোখ যায় মনিটরে। নিমেষেই ভ্রু কুঁচকে যায়, “এসব কি?”

বাদল পার্থর কাঁধে হাত রাখে, “হি ইজ সিক, পারভার্ট!”

“কোন সন্দেহ নাই, শালা বানচো... ... ...” চিবিয়ে চিবিয়ে বলছিল পার্থ, তাকে থামিয়ে দেয় দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়া বাদল, “না, তুই বুঝস নাই। ও অসুস্থ। এটা একধরণের Psycho sexual disorder, এর নাম Urophilia।”


মনিটরে তখনো চলমান অনন্যার মূত্রত্যাগের দৃশ্য!





(চলবে)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×