somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিলিপাইনের ডায়েরী - পর্ব - ৬ (MBA = ম্যারীড বাট এভেইলেবল)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে ব্লগে কিছু লিখবো বলে শুরুতেই কিন্তু শিরোনামটি লিখি তবে ধর্ম শব্দটি বারবার মাথায় টোকা মারছে, হয়ত এটি এখন বাংলাদেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় বলে। এর সাথে প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ গুলো সেকুলারিজম, ৭২ এর সংবিধান, হিন্দু নির্যাতন ইত্যাদি। আমরা এই অঞ্চলের মানুষরা ধার্মিক ও অসামপ্রদায়িক। এই যে কিছু দিন আগে হিন্দু নির্যাতন হলো, তার আগে কি হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার কোন পরিবেশ তেরী হয়েছিল? অবশ্যই না, তার মানে এটা রাজনৈতীক হতে পারে। কোন হিন্দু পরিবার কি বলেছে, আমার পাশের বাড়ির অমুকের ছেলেকে আগুন দিতে দেখেছি? এখনো উত্তর টা না। তার মানে এরা বহিরাগত, তার মানে এটা রাজনৈতীক হতে পারে। তাহলে ব্যপারটা হিন্দু মুসলমান সংঘাত নয়। জোর করে কেউ আমাদের ঐ দিকে টেনে নিচ্ছে কোন অসৎ উদ্দেশ্যে। সমস্যার তাই স্থায়ী সমাধান রাজনৈতিক সমাধান, এটি অতীব জরুরী।

সেকুলারিজম, ৭২ এর সংবিধান একথাগুলো ও রাজনৈতিক মনে হয়। যেমন, ৭২ এর সংবিধান না বলে কেন বলি না ২০১৪ এর সংবিধান। কেন ৪২ বছর আগে ফিরে যাওয়া? এই ৪২ বছরে কি বাংলাদেশ এগিয়ে যায় নি? কেন বলি না ২০১৪ সালে আমরা এমন একটি সংবিধান চাই যেটা হবে উন্নয়ন নির্ভর, মানুষের সকল মৌলিক অধিকার নির্ভর, এমনকি সামনের ৪২ বছরের চিন্তা চেতনার প্রতিফলন থাকবে। শুধু সেকুলারিজম শব্দের জন্য ৪২ বছর আগে ফিরে যাওয়ার কোন মানে হয় না, এটি তো যে কোন সময়ই অন্তর্ভূক্ত করা যায়। সেকুলারিজম মানে যেমন ধর্মহীনতা নয়, আবার সেকুলারিজম অন্তর্ভূক্ত করা হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? ভারতে তো ৭২ এর পর সেকুলারিজম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তবু ও কি বিজেপি এর মত ধর্মীয় দল নেই? শিব সেনার মত উগ্রবাদী সংগঠন নেই? আসলে সমস্যা সমাধানে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সমস্যা সমাধানের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও মানসিকতা, যেটা আমাদের সাধারন মানুষের ইচ্ছা থাকলেও আমাদের রাজনীতিক দের নেই, কারনটা খুবই সহজ, এটাই তাদের পুঁজি।

ফিলিপাইনের সংবিধান ও সেকুলার। ফিলিপাইনের কথা যখন আসলো তখন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাক, কারন বাংলাদেশ এখন মোটামুটি দুইভাগ, কিছু বল্লে আবার কে তেড়ে আসে? ফিলিপাইনে রাস্ট্রীয় সকল রীতিনীতি এবং আইন কানুন প্রনয়নে খ্রীষ্টান ক্যথলিক গির্জা সমুহের অত্যন্ত প্রভাব। একটু ইতিহাস টেনে বলি, ফিলিপাইনের আদি অধিবাসীরা প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপ থেকে এখানে এসেছিল। এরপর দক্ষিণ থেকে মালয় জাতির লোকেরাও এখানে আসা শুরু করে। ৯ম শতকে চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে আসে ও বসতি স্থাপন করে। তবে ১৬শ শতকে স্পেনীয়দের আগমনের আগে মালয়রাই ছিল ফিলিপাইনের প্রধান জাতি। পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফের্দিনান্দ মাগেলান ১৫২১ সালে ফিলিপাইনে পৌঁছান এবং স্পেনের হয়ে দ্বীপটি দাবী করেন। পরবর্তীতে স্পেনীয় শক্তি এখানে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এবং খ্রিস্টধর্মের পত্তন ঘটায়। বর্তমানে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম খ্রীষ্টান। প্রায় ১০ কোটি মানুষের ৯০% ই খ্রীষ্টান (৮০% ক্যথলিক খ্রীষ্টান, ১০% প্রোটেস্ট্যন্ট খ্রীষ্টান)। বিশ্বব্যাপী যেমন ক্যথলিক খ্রীষ্টানরা রক্ষনশীল এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়।

আগেই বলেছি, রাস্ট্রীয় সকল রীতিনীতি এবং আইন কানুন প্রনয়নে খ্রীষ্টান ক্যথলিক গির্জা সমুহের অত্যন্ত প্রভাব। তাই বেশ কিছু ক্যথলিক আইন, ফিলিপাইনের রাস্ট্রীয় আইন হিসাবে স্বীকৃত, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য হল ডিভোর্স। হ্যাঁ, ফিলিপাইনের রাস্ট্রীয় আইনে ডিভোর্স নিসিদ্ধ। কারন, ক্যথলিকরা মনে করে বিবাহের জন্য নারী পুরুষের যুগল গড কর্তৃক নির্ধারিত হয়, তাই মানুষের তা ভাঙ্গার অধিকার নেই। এটুকু পড়ে যাদের কপালে চিন্তার বলিরেখা দেখা দিয়েছে ( X( ) তাদের জন্য আশার আলো কিংবা যারা ভাবছেন ফিলিপাইনে জন্ম না নিয়ে তো বেচে গেলাম, তাদের জন্য দু:ক্ষের ( :(() সংবাদ হলো ফিলিপাইনে লিভং টুগেদার (:P) বৈধ। আবার এখানকার বেরেতো বা এনজেল সিটি আমাদের দেশের বানিয়া সান্তা, টান বাজারের মত বস্তি নয়, এগুলো পাব, বার, নাইট ক্লাব, চোখ ধাঁধাঁলো আলোর ঝলকানি আর ইউরোপিয়ানদের আনাগোনা আমাদের পরিবেশের মানুষের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। আবার ফিলিপাইনের রাস্ট্রীয় আইনে জন্মনিয়ন্ত্রনের কথা বলা ছিলো না, কিন্তু সরকার এখন যখন জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য আইন প্রনয়নের উদ্যোগ নিল, তখন ই ক্যথলিক গির্জা সমুহের প্রচন্ড বিরোধের মুখে পড়ল, কারন, ক্যথলিক ধর্মমতে জন্মনিয়ন্ত্রনের বিধান নেই।

এবার একটা ডিনারের গল্প বলি। গত ৭ ই ডিসেম্বর আমাদের কম্পানির ফিলিপাইনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা জন্য আয়োজন ছিল বাৎসরিক ডিনার, ম্যানিলার একটি সুন্দর হোটেলের রেস্টুরেন্ট এ। সর্বমোট ৫০ জনের মত। অধিকাংশই ফিলিফিনো, আমরা ১০/১২ জন বিদেশী, জার্মান, ইংরেজ, কোরিয়ান, গ্রীক আর একমাত্র বাংলাদেশী আমি। বাংলাদেশ এ প্রচলিত একটা প্রবাদ ,,খাওনের আগে আর দরবারের শেষে,, আমরা খুব একটা না মানলেও ফিলিপাইনে এটাই সত্যি। খাবারের পর কারাওকি গান ফিলিপিনো দের কালচার, অনেক বছর ধরে ফিলিপাইনে থাকা আমার জার্মান কলিগ বল্ল ফিলিপিনো দের স্বাভাবিক ক্রোমোজম থেকে ও একটি ক্রোমোজম বেশী, তা হল সিংগিং (গান গাওয়ার) ক্রোমোজম। কারাওকি গানের সাথে চলে ড্রিংকিং। দেখে মনে হবে প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই। এ সময়টা আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর, কারন আমার হাতে সফট ড্রিংকস বা ফ্রুট জুস কেন প্রায় প্রতিজনকে এর উত্তর দিতে দিতে হয়রান হতে হয়। তো সে দিন আমি একটা কোনার টেবিলে চলে যাই আলাদা হওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পরে আমার জার্মান ও ইংরেজ কলিগ ও আমার টেবিলে আসে, তারপর আমাদের ম্যনিলা অফিসের মেয়ে কলিগরাও (এডমিন / একাউন্টস) আমাদের টেবিলে চলে এসে আমার টেবিল আবার ভরপুর হয়েগেল। ইংরেজ কলিগ এবার সব মেয়েদের হিস্ট্রি নেয়া শুরু করল, বিয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই একটা মেয়ে বলে উঠল সে এম,বি,এ সাথে সাথে আরো ২/৩ জন বলে উঠল তারাও এম,বি,এ। এবার জার্মান কলিগ বল্ল এম,বি,এ করলে কি বিয়ে করতে নেই? তোমরা এম,বি,এ করে এত ছোট পোস্টে জব কর কেন? তখন সিনিয়র এক মেয়ে কলিগ বল্ল এদের এম,বি,এ ডিগ্রী নেই, এরা আসলে ম্যারিড বাট এভেইলেবল, ইফ ইউ নিড। তখন পুরো টেবিল জুড়ে হাসির রোল উঠে। তারপর অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা চলে যায়। অনেক পরে জানলাম, ফিলিপাইনে ডিভোর্সের কোন আইন নেই, তাই বিয়ের পর বনিবনা না হলে তারা নিজেদের এম,বি,এ ডিগ্রীর পরিচয় দেয়, লিভ টুগেদার এর জন্য।


চলবে.........................
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×