somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিলিপাইনের ডায়েরী = পর্ব - ৭ জন্মদিন বিড়ম্বনা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু এই তিনটিতে মানুষের হাত নেই, ছোট বেলা থেকেই শুনে আসা প্রচলিত এই কথাটি অনেকটা সত্য হলেও কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। নিজের বিয়ে, মৃত্যুতে কিছু কিছু মানুষের কখনো কখনো ভূমিকা থাকতেই পারে। যেমন কাউকে আপনি পছন্দ করে রাখতেই পারেন, আবার কোন দিন বিয়ে করবেন তাও ঠিক করতে পারেন, আবার হিন্দুদের তো লগ্নের ও একটা ব্যাপার আছে। চট্রগ্রামে একবার এক বিয়েতে বর যাত্রী আসল রাত ২ টায়, এটাই নাকি ওখানকার রেওয়াজ। আবার আপনি যদি আত্নহত্যা করতে চান, তবে হেমলক সোসাইটি সিনেমার মত আত্নহত্যার পদ্ধতি বা সময় বেচে নিতে পারেন। কিন্তু আপনার জন্মদিন, এমন একটি ব্যাপার, যা নিয়ে কোন একটি ভুমিকা রাখতে সৃষ্টকর্তা আপনাকে কোন সুযোগ ই দেননি। তাই একদিকে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার সময় ঠিক কি হয়েছিল মানুষের এই স্মৃতি কারো সাথে শেয়ার করার সুযোগ ই নেই, তেমনি পৃথিবীর কোন মানুষের তার নিজের জন্ম সময়ের কোন স্মৃতি নাই। তাই হয়ত পালন করেন আর নাই করেন, কেক কাটেন আর নাই কাটেন জন্মদিন নিয়ে আপনার আমার আগ্রহ টা বেশী, আলাদা একটা অনুভুতি।

তবে এই জন্মদিন পালন করার আগ্রহ আমার মনে হয় বয়সের সাথে বিপরীত (ব্যস্ত) অনুপাতিক। ছোটদের কেক কাটা, অন্যান্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেলা করা, ওদের কাছে গল্প করা, নতুন জামা কাপড় ইত্যাদি কারনে তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। যুবক বয়সে ছোট বেলার এইসব কিছু মোটামুটি বাদ, তখন সকল চিন্তায় শুধু প্রেমিকার সাথে ডেটিং এবং অভিসার (বোটানিক্যল গার্ডেন !! ), কোথায় খাওয়ানো যায় (সস্তায় !!), কত দামি গিফট পাওয়া যায়..... নাকি ফুলেই শেষ:(( । বিয়ের পর আবার চেন্জ, বোটানিক্যল গার্ডেন আর দরকার নাই, সস্তায় খাওয়ানোর চিন্তা ভুলেও মাথায় আনা যাবে না, আর এতদিন যা পেয়েছেন, এবার বউ কে ২ গুন / ৩ গুন দেবার পালা। বাপ হলেন তো নিজের জন্মদিন নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না, আবার জিজ্ঞাসা করছেন, কেন ? আরে ভাই, বউ আর বাচ্চারা আছে কেন? মোটামোটি ১ মাস আগ থেকে লিস্টের আপডেট আসতে থাকবে। তবে যদি মানি ব্যাগের মানি নিয়ে চিন্তা একটু বেশীই করে ফেলেন, তবে স্টাটাস (ফেসবুকের না কিন্তু) অবনমনের দায়ে পারিবারিক জেলে বন্দি হতে পারেন। ও হ্যাঁ, নিজের জন্মদিন তো ভুলতে পারবেন না, বাচ্চার জন্মদিনও ভুলতে পারবেন না, বাচ্চাই যখন মনে করিয়ে দেবে তখন দায়িত্ব মনে হবে, কিন্তু রে ভাই উনার টা যদি ভুলে জান (এটা কিন্তু মনে করানো হবে না, আপনার পরীক্ষা ;)), মনে করবেন ম্যাচের কাঠিতে আগুন X( ধরতে আর সময় বেশি নাই। আর বুড়ো বয়সে মনে হবে আরেকটি জন্মদিন তো পেলাম, এটাই মনে হয় শেষ!

এই যে মশাই, এত যে ইনিয়ে বিনিয়ে আপনাদের জন্মদিনের পুথি পাঠ করলাম, কারনটা একটু ঝাইরা কাশেন তো। ও রে বাবা সামুর সব মামারা তো দেখি হেব্বি চাল্লু, কাশির আগেই ধইরা ফেলছে। মামাদের ৯৯% অনুমান ই সঠিক হয়, তবে মাঝে মধ্যে ..... হাজার হলেও এ যুগের ডিজিটাল পাঠক তো। জি জনাব ১২ ই জানুয়ারি ছিল জাহাজ মিস্ত্রীর জন্মদিন।পরিবার পরিজন ছেড়ে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে ফিলিপাইনের এক ছোট শহরের এক ছোট অ্যাপার্টমেন্টে (রবিবার, অফিস বন্ধ) জন্মদিন পালনের অভিজ্ঞতা বলে কিছু নেই, তবে খুব মিস করেছি আমার ৯ (প্রায়) বছরের মেয়ে ওয়াজিহা কে। বাবার জন্মদিন পালনের আগ্রহ তারই বেশী, যথারিতি ১ মাস আগ থেকেই প্রায় প্রতিদিন ই অভিনন্দন পেয়েছি স্কাইপির কল্যানে, দেখেছি মায়ের কাছে বায়না ধরে বাবার জন্মদিনের জন্য কেনা কেক। আমার লিটল মাম, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। ১১ ই জানুয়ারি রাতেই দেখি কেক রেডি। রাত ১১.৩০ টা। একদিকে বাংলাদেশে কেক সাজানো হচ্ছে। আর আমি স্কাইপিতে ভিডিও অন করে আছি। হঠাৎ আমার মেয়ের প্রশ্ন বাবা তুমি কখন হয়েছ? উত্তর দিলাম আমার মা বলেছে আমি রাত ৮.৩০ টায় হয়েছি। বাবা তুমি তো তাহলে এখনো হও নি, এখনো তুমি দাদুনির পেটের ভিতর, তাহলে তো এখন কেকে কাটা যাবে না। আমরা আগামি কাল রাত ৮.৩০ টায় কেকে কাটবো। আমার কেকটি তাই ১২ ই জানুয়ারি রাত ৮.৩০ টায় কাটা হলো। এটাই বাবা মেয়ের ভালোবাসা। এক পলকে কেকটা দেখাই আপনাদের।



এবারের জন্মদিনের একটু অন্যরকম গল্প শুনাই। হানজিন শীপইয়ার্ড এ আমাদের জি এল অফিস টি খুব ছোট। আমরা চারজন জাহাজের সার্ভেয়ার ও একজন সেক্রেটারি। ম্যানেজার আর সেক্রেটারি ফিলিপিনো, একজন কোরিয়ান, একজন বৃটিশ আর আমি। আমাদের অফিসে দেখলাম সবাই জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকীতে অফিসে কেক নিয়ে এসে নিজেরা নিজেরা পার্টি করে, আবার আমাদের ম্যানেজার কে তো দেখলাম ছেলের জন্মদিনেও কেক নিয়ে আসলো। রবিবার বন্ধ ছিল, তাই সোমবার একটা কেক নিয়ে হাজির হলাম অফিসে সবাই কে চমকে দিব বলে। ( কিন্তু জানা ছিল না আমার জন্য ও চমক অপেক্ষা করে আছে। ) অফিসে ঢুকতেই হাতে কেক দেখে সবাই উইশ করল, ঠিক হল, বিকালে সকল ইন্সপেকশনের পর ফ্রেশ হয়ে কেক কাটা হবে। কিন্তু আধাঘন্টা পর হাটে হাড়ি ভাঙ্গল সেক্রেটারি। তোমার জন্মদিন তো ১লা জুলাই ! আমি গত সপ্তায় ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিলাম, কনফিউশন কাটানোর জন্য তোমার পাসপোর্ট কপি আবার চেক করেছি। আমি লেপটপ থেকে মাথা তুলে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বলতে হল সব সত্যি ঘটনা। সমস্যাটা আসলে নবম শ্রেনীর রেজিস্ট্রশন, আমাদের না জানিয়ে স্কুল থেকেই জন্মদিন বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাপারটা প্রথম ধরা পড়ে এস এস সি পরীক্ষার আগে যখন প্রবেশপত্র আর রেজিস্ট্রশন হাতে পাই। কিন্তু অনেক গুরুজনের দেখানো নানা ভয়ে আর কখনো সংশোধন করানো হয় নি। ব্যাপারটা শুনে মনে হল কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না এটাও সম্ভব ? যদিও আপনার আমার অনেকের ই এরকম দুটি জন্মদিন আছে। শেষ পর্যন্ত ম্যানেজারের ঘোষনা, এখন থেকে সার্টিফাইড এবং আন-সার্টিফাইড বাট রিয়েল দুইটিতেই কেক আসতে হবে এরকম মুছলেকায় নিস্তার পেলাম, কিন্তু যে লজ্জা পেলাম তার স্মৃতি থেকে নিস্তার পাব কি?



এই গল্প থেকে কি শিখলাম, ছোট ভাই বোন বা ছেলে মেয়ে থাকলে তাদের যে কোন রেজিস্ট্রশনে সঠিক দিন তারিখ লিখুন, অন্তত দিন আর মাস ঠিক রাখুন, তাতে ভবিষ্যতে আমার মত এমন অনাকাঙ্খিত লজ্জার হাত থেকে বাচবে। ধন্যবাদ।


চলবে ................

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৯
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×