somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বাবার অনুভুতি ......!!

১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ২০১৪ সালের মার্চের শেষ দিক।
সকাল আনুমানিক ১১টা।
আজ একটা কঠিন দিন।
আজকে আমার ইন্সপেকশন, লুব ওয়েল সাম্প ট্যাংক।

জাহাজের ইন্জিন ফাউন্ডেশনের নিচে থাকা একটি ছোট ট্যাংক। আমার জাহাজে এই ট্যাংক টি লম্বায় ৩০ ফুট, প্রস্থে ৬ ফুট আর উচ্চতা মাত্র দেড় ফুট মানে মাত্র ১ হাত। প্রতি ২ফুট দুরে দুরে আড়াআড়ি ফ্রেম এবং মাঝে একটি পার্টিশন আছে। ইন্সপেকশনের জন্য প্রতি ফ্রেমে ২ফুট পাশ্বে আর দেড় ফুট উচ্চতার পথে আমাকে ৩০ ফুট ক্রলিং (শুয়ে কনুই দিয়ে চলতে হবে) করে গিয়ে আবার ফিরে আসতে হবে। স্পটে গিয়ে প্রথমে ভয় পেয়ে গেলাম, ফিরে আসতে পারবো তো ?

যাই হোক এটাই আমাদের প্রফেশন, মাল্টি গ্যাস মিটারটা চেক করে বুকে আটকিয়ে নিয়ে বুকে ফু দিয়ে ডুকে পড়লাম। আমার কাজ লাইট দিয়ে ওয়েল্ডিং ও স্ট্রাকচার ইন্সপেকশন সহ ভিতরের সঠিক অবস্থা জানা।

চলতে শুরু করার পর মনে হলো কবর বুঝি এমনই হবে? চলতে চলতে বার বার মনে হচ্চিল এখন কোন কিছু হয়ে গেলে আসলেই কি বের হতে পারব? কয়েক ফ্রেম যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো আমি প্রচন্ড ঘামতে শুরু করেছি এবং আমার হাত পা আর চলছে না, আমার নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এই চরম অবস্থায় আমার প্রথমেই মনে হলো আমার অনাগত সন্তানের কথা (যদিও ডাক্তারের কল্যানে জানতাম, ছেলে !!)। পৃথিবীর সকল বাবার ই কি প্রথম সন্তানের কথা মনে পড়ে ? মনের অজান্তেই বলে ফেল্লাম, আল্লাহ এক ছেলেকে তো তুমি দুনিয়াতে আসার আগের দিনই নিয়ে গেলে, আমাকে শুধু দেখালে তার নিথর দেহ খানি, আজ কি তাহলে এমন কিছু ঘটছে যে কিছু দিন পর আমার আরেক ছেলে জন্ম নিয়ে তার মৃত বাবার ছবিই দেখবে ? আমি মনে হয় অনেক পাপী, তাই আমার সাথেই এই চক্র শুরু হলো। কিন্তু আমার ছেলেরা তো নিস্পাপ, আমি মারা যাওয়ার আগে কি আমার ছেলের সাথে মুখোমুখি দেখা হবে না? আমাদের রক্ষা করুন আল্লাহ।

কতক্ষন ছিলাম জানি না, হঠাৎ ই মনে হলো আমার মাল্টি গ্যাস মিটার তো কোন এলার্ম দেয়নি এবং এখনো দিচ্ছে না, তার মানে অক্সিজেনের অভাবে নয়, আমি কাবু হয়েছি আসলে ভয়ে। তারপর আবার আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলাম এবং আল্লাহর ইচ্চায় একসময় কাজ শেষ করে বের হলাম।

আমার ছেলের জন্ম হয়েছে ২৮ এপ্রিল সকালে চট্রগ্রামে, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ছেলেকে কোলে নেওয়ার মুহুর্তে বার বার আমার সেদিনের কথা মনে হচ্ছিল। তাই ছেলের নাম রেখেছি মাহরুস (অর্থ, আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন)।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×