somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধতম পরকীয়া ( উপন্যাসিকা )

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুদ্ধতম পরকীয়া
আহমেদ জী এস
এক / (প্রথম অংশ )
“ …. আমারে যে জাগতে হবে
কি জানি সে আসবে কবে
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে ।”
সেখানে না ছিলো আকাশ, না মাটি । শুধু বৃষ্টি ছিলো । সে আমাকে ধূঁয়ে দিচ্ছিলো । ফুঁড়ছিলো তীরের মতো । আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো । আমার সারাটা জীবন জুড়ে যেন আমি শুধু ভিজে যাচ্ছিলাম । এবং তখনি ধীরে ধীরে শিখছিলাম কি করে ঘৃনা করতে হয় ।
ঘৃনা শব্দটাকে আমার বড় ভয়, বড় অপরিচিত । অথচ তাকে নিয়েই আমাকে এখন চলতে হবে, ফিরতে হবে । আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে যে সে, সিন্দবাদের দৈত্যের মতো ঠিক ঘাড়টাতে চেপে বসে আছে । আমি কি সেখান থেকে আবারো পুরোনো ভালোবাসার ঘরে ফিরে যেতে পারবো ! স্বাভাবিক কোথাও ! যেখানে আমি ছিলাম এতোদিন, নিজের মনে নিজেই ?
বাসের জানালার ধারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে অন্যমনষ্ক ভাবেই আমার মনে হচ্ছিলো, এধরনের গাল্পিক চিন্তাভাবনা আমাকে মানাচ্ছে কিনা। আমার যা বয়স তাতে সেই বয়সের ঘরে রোমান্টিসিজম এর জন্যে কোনও জায়গা ফাঁকা আছে কিনা ।
বিচিত্র মানুষের মন, নৌকার মতো , বয়েই চলে । কোনও নৌকাই একই ঘাটে নোঙ্গর ফেলে চিরদিন বসে থাকেনা । না নদীতে, না জীবনে ।

শীলা তো আমাকে একটা সুন্দর শায়র পাঠিয়েছিলো এসএমএস করে । লিখেছিলো, “ তোরনা হোতা তো, রিসতে হম্ না বনাতে / ভরসা না হোতা তো, আপনে দিল কা হিসসা না বনাতে।” শীলা বোধহয় এখন তা ভুলে গেছে যে, এরকম একটি আবেগময় এসএমএস পাঠিয়ে সে তার ঐ মূহুর্তের মনটাকে আমার হাতে কি নির্বিধায় তুলে দিয়েছিলো । সে কি তখন জানতো, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটিই সে করে ফেলেছে ! হয়তো জানবে ও না কোনদিন । আরো অনেক অনেক সুন্দর শায়র সে আমাকে পাঠিয়েছিলো ।
আমি তাকে আমার বয়সের কথা তুলে মুঠোফোনে বলেছিলাম, এভাবে আবেগে ভেসে যেওনা ।
সে হয়তো ভাসতেই চাইছিলো । আমার বয়সের তোয়াক্কা করেনি । কে জানে কেন !
বলেছিলো, “মানুষ ভালোবাসে বয়স দেখে নয় । বারবার আমাকে বয়সের কথা বলবেনা ” ।
সে কি তার রাগ ! আমি মেইলে লিখেছিলাম, “ তোমার মতোন এই এতোটুকু এক মেয়ে এতো শক্তি কোথায় পেলে ?”
উত্তরে লিখেছিলো, “ সে আমার প্রেম ” ।

হ্যা, সেই প্রেম । যে প্রেমে তাজমহলের বীজ লুকানো ছিলো । যে প্রেমে ধংশ হয়েছিলো সুন্দরী ট্রয়নগরী । হ্যা, এই সেই প্রেম, যে প্রেমে পেত্রার্ক তার অদেখা লরাকে কালজয়ী করে গেছে ইতিহাসের পাতায় ।

শীলাও আমার অদেখা । আমি শীলাকে কখনো দেখিনি । এ জীবনে তার দেখা পাবো, এমনটাও মনে হয়না ।

আজকের ইলেক্ট্রনিক জমানায় এই এক সুবিধে, হাতের কাছেই মোবাইল, ডেস্কটপ্-ল্যাপটপ্ আছে, যতো খুশি কথা বলো । এসএমএস করো, অনলাইনে মেইল করে তুলে ধরো নিজেকে । সত্য-মিথ্যে বলে যাও, জানার উপায় নেই । এ যেন এক আলাদা জগৎ । বসন্ত বাতাসের মতো । গিরগিটির মতো রঙ বদলানো শুধু , ক্যামেলিয়ন । আনন্দ যতো তারো চেয়ে বেশী ব্যথা, হৃদয় ভাঙ্গার গল্প । এ আমার অনুমান । কোনও ষ্ট্যাটিষ্টিকস্ নেই ।

ইন্টারনেটের এক সাইটে আমাকে খুঁজে বের করেছিলো শীলা । বন্ধুত্বের জন্যে আমার সাইটে ক্লিক করেছিলো তিন তিনবার । আমার চোখ এড়িয়ে গেছিলো তা । আসলে এড়িয়ে গেছিলো কি ! কিন্তু প্রেমের দেবী ভেনাস যদি কারো দিকে একবার তার তীরটি ছোঁড়েন, তার যে ধরা না পরে উপায় নেই । তাকে যে রক্তাক্ত হতেই হবে ! আমার ভাগ্যদেবতা সেদিন কি হেসেছিলেন ভেনাসের এই পাগলামী কিম্বা তার সেন্স অব প্রোপরশান এর অভাব দেখে ?

মানুষ একটা অদ্ভুত জীব । কতো রঙের মানুষই তো দেখলাম জীবনে । জীবনের ঘাটে ঘাটে হরেক মুখ, হরেক কিসিম । যাকে মনে হয়েছিলো নেহাত গোবেচারা, নিতান্তই হদ্দ, সে ই হয়তো দেখা গেল এক তুখোর পান্ডিত্যের ভারে নুয়ে আছে । আবার যাকে মনে হয় তুখোর কিছু, ওজনদার, দেখা গেল তার ভেতরটা নর্দমায় ভরা – আবর্জনাময় পানা পুকুর । ফাঁকা, ভেতরটা শুধু ফাঁকা । হাযারো কিসিমের মুখের ভেতরে নিজের মুখখানিই বা আলাদা করি কি করে ! কি এক অদৃষ্টের ইঙ্গিতে ক্লিক করে বললাম, হ্যা, ওকে, বন্ধুত্ব হ’তে পারে । শীলা সেদিন ই আমাকে তার মেইল এ্যাড্রেস দিয়েছিলো । দিয়েছিলো তার মুঠোফোনের নম্বর । জোর তাগিদ ছিলো এক্ষনি যেন আমি তার দেয়া নম্বরে কথা বলি । এই সন্ধ্যাশেষের যৌবনে একটা নিষিদ্ধ স্পর্শের ছোঁয়ায় শিহরিত হচ্ছিলাম । একটা তীব্র নেশার ঘোরলাগা দিন যেন গেল আমার । কাম, নাচায়নি এমন মানুষ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা ।




( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন )
প্রথম অধ্যায় / ( সম্পূর্ন একত্রে )
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×