২৬ শে জুন, আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস গেল । একটি দিবস যায় আরো একাধিক দিবস আসে। নতুন কিছু নয় এটা । কোনও সময় চোখে পড়ে, তো কখোনও পড়েনা । আজ যে কেন চোখে পড়লো জানিনে ! হয়তো আমার মোবাইলে আসা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন সংস্থার মেসেজটি এর কারন ।
অন-লাইন ইত্তেফাকে চোখ বোলাচ্ছিলাম । বছরে দশহাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে শুধু অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানী বাবদ, এমোন একটি খবর চোখে পড়লো । তার সাথে শিউরে ওঠার মতো আরো কিছু । প্রশ্নটি বৈধ-অবৈধর নয় । আরো জটিল এবং পরিবার-হন্তারক বিষয়ক কোটি টাকা দামের একটা প্রশ্ন মাথায় ঢুকে গেল ।
আপনি কি জানেন, আপনার স্নেহধন্য পুত্র সন্তানটি কিম্বা অতি স্নেহের কন্যাটি কিম্বা আপনার প্রিয় ভাইটি অথবা আদরের বোনটি এই প্রশ্নটির সাথে জড়িয়ে নেই ? এর বিভীষিকাময় ফলাফলের স্বার্থে এই জটিল প্রশ্নটি (প্রশ্নটি করিনি এখোনও ) দাঁড় করাতে অনিচ্ছা সত্বেও এটা লিখতে বসেছি ।
হয়তো বলবেন, “আপনার এতো চুলকানী কিসের ?”
বলুন, ভয় নেই । সঙ্গত কারনেই চুলকানী একটু আছেই ।
এই ব্লগে অসংখ্য অকুতোভয় মানুষ আছেন । কোনও না কোনও ইস্যুতে তারা সব ভয়ের উর্দ্ধে থেকে গলা চড়িয়েছেন । তারা নমস্য অবশ্যই । ফল কি হয়েছে সেটা খুব একটা মূখ্য নয় । সবচে’ মূখ্যটা হলো, “বিবেক” নামের জিনিষটির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের । এটা ইতিবাচক, বলতেই হবে ।
আপনি কি জানেন, দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী মাদকসেবীর সংখ্যা যেখানে মাদকাসক্ত মেয়েদের শতকরা ৩ জন গৃহবধূ ? জানেন হয়তো । কিচ্ছু করার নেই, তাই হয়তো একটুও মাথা ঘামাননি বিষয়টি নিয়ে । কারন, আপনার পরিবারে কেউ মাদকেসবী নেই বলে আপনার ধারনা । নেশার টাকা যোগানোর সর্বনাশা থাবা আপনার পরিবারে এখোনও পড়েনি বলে নিশ্চিন্তি ।
তাহলে শুনুন , মাঝে মাঝে দেখতাম প্রানের উচ্ছল আবেগে ভরন্ত একদল তরুন-তরুনীর জটলা এখানে সেখানে , গাড়ীতে ফূর্তিবাজ আড্ডা, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে ধূমপান । নির্মল আনন্দ, সন্দেহ নেই । আগে এরা একটু সামলে-সুমলে থাকতো । এখোন এসবের বালাই নেই । এখোন প্রতিদিনই দেখছি রাস্তা –ঘাটে, গাড়ীর ভেতরে । ইদানীং এই সব ব্যাপারে মেয়েদের উৎসাহ-ই দৃষ্টিকটূ ভাবে ধরা পড়ছে । নতুন প্রজন্ম, নতুন চিন্তাধারা থাকতেই পারে, যা আমরা জানিনে বা বুঝিনে । আমরাও সানন্দে তাদের কে ছাড় দিয়েছি , “ওল্ড হ্যাগার্ড” বলে চিহ্নিত হয়ে যাই কিনা এই ভয়ে । তার ফল দেখছি এখানে হাতে নাতে –
“....সামপ্রতিক সময়ে দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী মাদকসেবীর সংখ্যা। মোট মাদকাসক্তের মধ্যে শতকরা পাঁচ জনই নারী। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই তরুণী। মাদকাসক্ত এসব নারীর বয়স ১৫ থকে ৩৫ বছরের মধ্যে। গত বছর দু’য়েক ধরে এই ব্যাধি তরুণ সমাজকে গিলে খেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী অর্থাত্ ১৮ বছরের কম ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাদকদ্রব্য গ্রহণের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে...........।
........বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় এক কোটি মানুষ। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে— মাদকদ্রব্য লিভার দ্রুত নষ্ট করে ফেলায় লিভারে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আছে ব্লাড ক্যান্সারও। যেভাবে এসব মরণব্যাধি ধেয়ে আসছে, তাতে আর কিছুদিন পর ঘরে ঘরে এসব রোগী থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যে ভেজাল আর মাদকের কারণেই এসব রোগ বেশি হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল বন্ধ আর মাদক মুক্ত করতে পারলেই স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় অনেক কমে আসবে।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশে বর্তমান ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৯১ জনই যুবক। মেয়েদের মধ্যে মাদক সেবনের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে জানানো হয়, বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন মহিলা কলেজে অন্তত ৫ হাজার মাদকাসক্ত নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। মাদকাসক্ত মেয়েদের মধ্যে শতকরা ৩ জন গৃহবধূ, ১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের ১৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য মোট মাদক সেবীর অর্ধেকই উচ্চ শিক্ষিত এবং ৪০ ভাগ অশিক্ষিত। এদের মধ্যে ৪৩ ভাগই বেকার.....”( ইত্তেফাক )
আপনি কি বুঝতে পারছেন , আপনি এ্যাদ্দিন কোন বোকার স্বর্গে বসবাস করে এসেছেন ?
না ; আমি “মাদককে না বলুন” জাতীয় আন্দোলনের ডাক দিচ্ছিনে । দেয়ার যোগ্যতাও আমি রাখিনে । আমি এক আম-জনতা , আমার সে ক্ষমতা নেই । মাদকের পেছনে থাকে ক্ষমতাধারী ব্যক্তিবর্গ আর প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ । তাই এটা একটা রাজনৈতিক সমস্যা । এটাকে অপসারনের ক্ষমতা আমার কেন সমগ্র জনগণেরও নেই ।
আমি শুধু অনুরোধ করতে পারি – নিজ নিজ অবস্থানে সতর্ক হোন । আপনার আদরের ধনটির দিকে নজর দিন । সে সুস্থ্য আছে কিনা, জানুন । আধুনিক হোক ক্ষতি নেই – অতি আধুনিক যেন না হয় , খেয়াল রাখুন ।
এতো বকবকানির পরেও প্রশ্নটি এখোনও করে উঠতে পারিনি ।
প্রশ্নটি আমার নিজেকেই – “ আমি কি জেনেশুনে একটা যুথবদ্ধ পারিবারিক বা সামাজিক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি ?”
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১২ সকাল ১১:০৪