somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমিউনিটির সাথে টিউনিং........

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইমিউনিটির সাথে টিউনিং........

আপনি কি জানেন যে, আপনার চারপাশের পরিবেশে লক্ষ কোটি নিরব ঘাতক কিলবিল করছে ? যাদের আপনি খালি চোখে দেখছেন না ? আপনার ত্বকের উপরেই গিজগিজ করছে এক ট্রিলিয়ন ব্যকটেরিয়া । আপনার কানের ভেতর, নাকের ছিদ্রে , নাভীমূলে , চোখের পাতার ভেতরের দিকে কোনখানে এরা নেই ! আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে আছে ফাঙ্গাস । এরা যে সবাই-ই আপনার ক্ষতি করছে তা কিন্তু নয় । এরা অনেকেই যেমন নিপাট ভদ্রলোক তেমনি অনেক ত্যাদোরও আছে এদের মধ্যেই । নিপাট ভদ্রলোকরা আপনার উপকারই করে । এরা পেয়িং গেষ্ট এর মতো । আপনার শরীর থেকে খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকে সত্য আবার বিনিময়ে কিছু উপকারও করে দেয়। ত্যাদোরগুলো হলো নন-পেয়িং গেষ্টদের মতো । যারা আপনার ঘরেই বিনে পয়সায় শোয়-খায় আবার সুযোগ পেলেই আপনার মোবাইল, পায়ের জুতো কিম্বা প্যান্ট-লুঙির মতো কিছু একটা হাপিস করে দেয়, তাদের মতো । অর্থাৎ এই ত্যাদোরগুলো ফাঁকতালে আপনার ক্ষতি করে বসতে দ্বিধা করবেনা এতোটুকুও ।

অথচ আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন , আপনার শহরের বাতাসে, ঘরের ভেতরে এমন কি সর্বত্র যে পরিমানে অনুজীব (মাইক্রোবস) আছে যারা যে কোনও সময় হামলে পড়ে আপনার ক্ষতি করতে পারে অথচ সচারচর কেন তারা আপনার ক্ষতি করতে পারছেনা ?
এই যে আপনি হাযারো নোংরা পরিবেশের মধ্যেও এখনও বেঁচে আছেন কি কারনে , ভেবে দেখেছেন ?

আপনার ইমিউন সিষ্টেম হলো সেই কারন, যা হলো আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা । এই ইমিউন সিষ্টেমটাই সম্ভাব্য শত্রুর হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করে থাকে । এটা হলো আপনার শারীরিক ক্ষমতা যা ক্ষতিকর এই সব অনুজীব থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেয় । রোগ প্রতিরোধে এটাই আপনাকে “ইমিউনিটি” প্রদান করে থাকে । লক্ষ-কোটি অনুজীবের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে আপনাকে ।
জন্মগত ভাবেই আপনি এই প্রতিরক্ষা ( ইনেট ইমিউনিটি ) ব্যবস্থাটি পেয়ে থাকেন । আপনার ত্বক, মুখের লালা, চোখের জল, পাকস্থলীর এসিড, মুখ ও নাকের মিউকাস ( আঠালো পদার্থ) , রক্তের শ্বেত কনিকা ইত্যাদি মিলে গড়ে ওঠে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা । এরা আপনার “ফার্ষ্ট লাইন অব ডিফেন্স” ।

আপনি কিন্তু নিজের অজান্তেই, না বুঝে অনেক সময় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে ফেলেন । আপনার প্রতিদিনের কিছু কিছু কাজকর্ম, অভ্যেস থেকেই আপনার এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে । আসুন , দেখা যাক কি করে –

অত্যাধিক চর্বি জাতীয় খাবার ........


উচ্চ চর্বি বা ফ্যাট যুক্ত খাবার আপনার ইমিউন সিষ্টেমের কোষগুলোকে নিস্তেজ করে রাখে আর কমিয়ে দেয় তাদের কার্যক্ষমতা । টাফটস্‌ য়্যুনিভার্সিটির (Tufts University ) গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন , পশ্চিমাধাঁচের খাবার যাতে ৩৮% ফ্যাট থাকে তা আপনার ইমিউন সিষ্টেমের টি-সেল (T-cells,)কে অকেজো বানিয়ে ফেলে । অন্যদিকে লো-ফ্যাট খাবার এই কোষের কার্যকরীতা বাড়িয়ে দেয় ।
অতিরিক্ত স্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট যেমন –ক্রীম, চীজ, বাটার, ঘি , চকোলেট, পিজা, সসেজ, মাংস ইত্যাদির বদলে আপনি আনস্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট যেমন মাছ ( স্যালমন, টুনা, ম্যাকরিয়েল জাতীয় ) বিশেষ করে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ মাছ , আখরোট ও আখরোট জাতীয় বাদাম, চীনাবাদাম, সয়াবিন বা ক্যনোলা তেল খেতে পারেন যা স্বাস্থকর ।

কাজের বোঝা ....


এটা তো আপনার অজানা নয় যে, সারাক্ষন কাজ ...কাজ...আর কাজ এই দুঃশ্চিন্তা আপনার মন আর শরীরকে কাবু করে ফেলে । অথচ জানেন না যে , এটা আপনার ইমিউন সিষ্টেমকেও কাবু করে সমান ভাবে ।
সারাক্ষন চলতে থাকা এই কাজের চাপ আপনার রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা দিয়ে রক্তের ইমিউন কোষগুলোর চলাচল বাঁধাগ্রস্থ করছে আর তাতে আপনার স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উজ্জীবিত হতে পারছেনা । সাড়া (immune response) দিতে পারছেনা অনুপ্রবেশকারী ব্যাকটেরীয়া বা ভাইরাসের আক্রমনে । রকফেলার য়্যুনিভার্সিটির নিউরোএন্ডোক্রাইনোলোজীর অধ্যাপক ব্রুস ম্যাকওয়েন মনে করেন এমনটাই ।
সম্প্রতি তেল-আবিব য়্যুনিভার্সিটির এক গবেষনায় ও দেখা গেছে , চলতে থাকা কাজের চাপ আপনার ইমিউন কার্য্যক্রমকে উজ্জীবিত করতে যে যে ফার্মাকোলোজিক্যাল আর বিহেইভিওরাল চিকিৎসা দিতে হয়, তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে । তাই তারা আপনাকে কাজের চাপ থেকে দুরে থাকতে মেডিটেশান, যোগ-ব্যায়াম, লম্বা লম্বা শ্বাস নেয়ার কথা বলছেন । এতে আপনার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে , ইমিউন কোষগুলোর চলাচলে বাঁধা থাকবেনা আর তাতেই ইমিউন রেসপন্স চাঙ্গা হয়ে আপনাকে দেবে সুরক্ষা ।

নির্ঘুম রাত .......


আপনার ঘুম ঠিকঠাক না হলেও আপনার “ন্যাচারল কিলার” কোষ (natural killer cells) নামের শ্বেত রক্ত কনিকাগুলো কিন্তু ঘুমে অলস হয়ে যায় । অনিদ্রায় রাত কাটালে আপনার ঐ সব “ন্যাচারল কিলার” কোষগুলো ভাইরাল ইনফেকশান কিম্বা টিউমার এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনা, তারা ঝিমুতে থাকে । নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা দেখিয়েছেন এটা । জার্মানীতে একই রকম গবেষনায় দেখানো হয়েছে, পর্যাপ্ত ঘুম “ন্যাচারল কিলার” কোষ T-cell এর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । আর অপর্যাপ্ত ঘুম বা নিদ্রাহীনতা আপনার রক্তে কর্টিসোল (stress hormone ) নামের হরমোনটির এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে আপনার শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে খোঁচাতে থাকে যা আসলে আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে কম্প্রোমাইজ করতে বাধ্য করে । এই ইনফ্লামেটরী রেসপন্স হলো যে কোনও ক্ষতিকারক সংবেদনের বিপক্ষে আপনার শরীরকোষকলা বা টিস্যুর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা ইমিউন সিষ্টেমের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি পর্যায় । এবং তা আপনার ক্ষতিগ্রস্থ কোষকলাকে সারিয়ে তোলে । কিন্তু যদি এই ইনফ্লামেটরী রেসপন্সকে আপনি অযথা কাজে নামিয়ে দেন তবে তা আপনার কোষকলাকে রক্ষা তো করবেই না বরং ক্ষতি করে ছাড়বে ।
তাই আপনার উচিত হবেনা অনিদ্রাকে পুষে রাখা । ঘুমাতে হবে পর্যাপ্ত সময় ধরে । আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে ২৪ ঘন্টার ভেতর কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমাতে হবে আপনাকে । একটি রাত যদি আপনার অনিদ্রায় কাটে তবে তা পুষিয়ে নেবেন পরের দিনের কোনও সময় । যাতে আপনার ইমিউন সিষ্টেম সুরক্ষিত থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে ।

লেট ডাউন এফেক্ট ........


আপনার কি কখনও অবাক লাগেনি এটা দেখে যে , সারাদিনমান শ্বাস ঘন হয়ে যাওয়া কাজের ভেতর থেকেও আপনার শরীর কিন্তু ঠিকই ছিলো আর যেই না কাজ শেষ হলো অমনি শরীরের সব নাটবল্টু খুলে পড়তে চাইছে ; অসুস্থ অসুস্থ মনে হচ্ছে নিজেকে ?
এটাকে বলে “ লেট ডাউন এফেক্ট “ । এটা তখনই হয় যখন আপনি দ্রুত হাপ ছেড়ে বেঁচেছেন বলে মনে করেন । এই দ্রুত হাপ ছাড়ার সময়টুকুতে আপনার শরীরের ইমিউনিটি নীচের স্তরে নেমে আসে, বৃদ্ধি করে প্রদাহের প্রক্রিয়া । তাই যখনই আপনার কাজের বোঝা ঘাড় থেকে নেমে যায় বা স্ট্রেস কমে যায় তখন তার পর পরই আপনার শরীর অরক্ষিত হয়ে পড়ে । এটাই ক্লান্তি । এই সময় বাইরের শত্রুরা সুযোগ পেয়ে আপনাকে আক্রমন করে বসতে পারে । আপনি অসুস্থ বোধ করতে পারেন ।
উকলা (UCLA) স্কুল অব মেডিসিন এর সহকারী অধ্যাপক মার্ক শোয়েন এর পরামর্শ – আপনার শরীরের স্ট্রেস কে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন , ঝট করে নয়। এর জন্যে কয়েক মিনিট হালকাভাবে হাটুন বা ব্যায়াম করুন । আপনি স্ক্রাবলও খেলতে পারেন বা খেলতে পারেন কোনও বোর্ড গেমস । অর্থাৎ আপনার চাই, কোয়ালিটি রিফুয়েলিং । (এখানে দেখুন - Click This Link )
লেট ডাউন এফেক্ট কমাতে কোয়ালিটি রিফুয়েলিং চালিয়ে যান আর আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে চাঙা রাখুন ।

ঘনঘন ভ্রমন বাতিক........


যারা খুব ঘন ঘন ভ্রমন করেন তাদের ইমিউন সিষ্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে । যদিও এই জাতীয় ভ্রমনের সাথে অনিদ্রার সম্পর্ক নেই । তবে এর কারনে আপনার শরীরের বায়োলজিকাল ওয়াচ ( জৈব ঘড়ি) এর ছন্দপতন ঘটে থাকে । যেমন ভ্রমনকালে আপনার কোনও কাজেরই টাইম-টেবল থাকেনা । কোনদিন ব্রেকফাষ্ট সকাল ৭ টাতে তো কোনদিন বেলা দশটাতেও তা জোটেনা । প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম হয়তো দুদিন বন্ধই থাকে । এ জাতীয় ঘন ঘন উল্টোপাল্টা প্রাত্যহিক কাজ আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দূর্বল করে দেয় । যদিও গবেষকরা ঠিকঠাক জানেন না , এমনটা কেন হয় । হতে পারে , আপনার জৈব ঘড়ি যেহেতু ওলট-পালট হয়ে পড়ছে তাই আপনার ফিজিওলোজিকাল এক্টিভিটিজ এর শিডিউল ও ভেঙে পড়তে চাইবে । আর তা বিপদে ফেলে দেবে আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে । ইমিউন সিষ্টেম বুঝে উঠতে পারবেনা ঠিক কখন তাকে কোমড় বেঁধে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ।
তাই আপনার জন্যে ভালো হবে ; ঘন ঘন ভ্রমনকালে পরিপূর্ণ ভাবে ঘুমিয়ে নেয়া , ভালো করে খাওয়া, হালকা ব্যায়াম আর স্ট্রেস কমানো । এভাবেই আপনি শুরু করতে পারেন এক একটি শুভযাত্রা ।

অনুভুতিকে দমিয়ে রাখা .......


এটা তো মানেন , অনুভুতিহীন মানুষ মৃতবৎ ।
অনুভুতিকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখা যেমন আপনার পুরো শরীরটাকেই অস্থির করে তোলে তেমনি আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে করে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ । এতে করে আপনার রক্তসঞ্চালন, হরমোন নিঃসরন প্রক্রিয়ার উপরও দারুন সব নেতিবাচক প্রভাব ভর করে ।
অনুভুতিগুলোকে দমিয়ে রাখা আপনাকে করে তোলে হতাশাগ্রস্থ । আর এতেই আপনার শারীরবৃত্তিয় সকল সিষ্টেমের সাথে সাথে ইমিউন সিস্টেমটিও ওলট-পালট হয়ে যায় ।
অস্টিনের য়্যুনিভার্সিটি অব টেক্সাস এর সাইকোলোজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জেমস পুনেবেকার এমনটা বলে আপনার জন্য উপদেশ দিয়েছেন – মানসিক চাপ এড়াতে আপনার অনুভুতিকে প্রকাশ করুন ।
লন্ডনের কিংস কলেজ এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে , জীবনের ট্রমাটিক ঘটনাগুলো যদি লিখে ফেলা যায় তবে হপ্তা কয়েক এর ভেতর মানুষ তার শারীরিক আঘাতও সারিয়ে তুলতে পারেন ।
নিউজিল্যান্ডের য়্যুনিভার্সিটি অব অকল্যান্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষনায় দেখানো হয়েছে , মানুষ যারা এভাবে লিখে ভাব প্রকাশ করতে পারেন ; হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনের প্রতি তাদের ইমিউন রেসপন্স তীব্র হয় ।
অধ্যাপক জেমস পুনেবেকারের নিরীক্ষন এই যে, জীবনের কোনও অমীমাংসিত আঘাতের কাহিনী লিখে অথবা বলে দিতে পারলে ঘটনাপ্রবাহকে আপনি যথাযথ ভাবে বুঝতে পারেন, মনভাবকে সংগঠিত করতে পারেন আর শেষমেষ বেড়িয়ে আসতে পারেন আঘাতের ঘটনার স্মৃতি থেকে । এর ফল হলো, আপনি ঘুমাতে পারবেন নিশ্চিন্তে । ভালো লাগবে আপনার আর চিন্তা করতে পারবেন পরিষ্কার ভাবে । আপনার সামাজিক জীবনটিও সমৃদ্ধ হবে । সব মিলিয়ে যা আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে প্রস্তুত রাখবে রোগ প্রতিরোধে ।

ভিটামিন আর খনিজ লবনের ঘাটতি ........


যদিও আপনার শরীরে ভিটামিন আর খনিজ লবনের যোগান খুব কম পরিমানেই লাগে তথাপিও আপনার খাদ্য হজম থেকে শুরু করে শারীরবৃত্তিয় সব কাজে এরাই অপরিহার্য্য । এমন কি আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে তরতাজা রাখতে এদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।
সুষম খাবার যে শরীরকে সুস্থ রাখে, ছোটবেলা আপনি তা জেনেছেন । এই সুষম খাবারে প্রয়োজনীয় ও সুসামঞ্জস্য অনুপাতে ভিটামিন আর খনিজ লবন থাকতেই হবে ।
এ, ডি , ই , সি আর বি-৬ ও বি-১২ , ফলিক এসিড এই ভিটামিনগুলো আপনার ইমিউন সিষ্টেমের কোষ “লিম্ফোসাইট” এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে আর তাদের কার্যকরী করে গড়ে তোলে , বিশেষ কোষকলা নির্ভর নির্দিষ্ট লিম্ফোসাইটগুলোকে কোষকলায় উপস্থাপিত করে , টি-হেল্পার কোষগুলোর শ্রেনী বিভাজন করে , নির্দিষ্ট এন্টিবডি আইসোটাইপস (antibody isotypes) তৈরী করে আর তা আপনার সব ইমিউন রেসপন্সকে নিয়ন্ত্রন করে ।
খনিজ লবন যেমন জিঙ্ক আপনার অবসন্ন ইমিউনিটিকে চাঙা করে । সর্দি বা কমন কোল্ড থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেয় । লোহা বা আয়রনের ঘাটতি ইমিউন সিষ্টেমকে প্যারালাইজড করে তোলে । তাম্র বা কপার এর অভাব আপনার শরীরে অনুপ্রবেশকারী মাইক্রোবগুলিকে ঠেকাতে কিছু কিছু ইমিউন কোষের কার্যকরীতা নষ্ট করে । ম্যাঙ্গানিজ আপনার ইমিউন কোষ যেমন ন্যাচারল কিলার সেল ও ম্যাক্রফেজের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ।
আপনি শরীরকে ফিট রাখতে যখন ডায়েটিং করেন তখন আপনি এইসবের অপুষ্টিতে ভুগতে পারেন যদি না পুষ্টি সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারনা থাকে । আপনার প্রচলিত রান্নার প্রনালীও খাদ্যের ভিটামিনগুলো নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। খাদ্য তালিকায় জাঙ্কফুডের পরিবর্তে তাই আপনার উচিত হবে তাজা ফলমূল, কাঁচা বা সেদ্ধকরা শাক-সব্জী রাখা যাতে আপনার ইমিউন সিষ্টেম সব সময়ের জন্যে তরতাজা থাকে আর আপনাকে বাঁচায় অনাকাঙ্খিত রোগ-শোক থেকে ।
মুটিয়ে যাওয়া ........


মোটা হওয়ার খেসারত আপনাকে দিতেই হবে । আপনার ইমিউন সিষ্টেমের উপর আপনার শরীরের বাড়তি চর্বি আতঙ্ক সৃষ্টি করবে । এই চর্বি আপনার শরীরে কিছু হরমোন এর অতিরিক্ত নিঃসরন ঘটিয়ে ইমিউন সিষ্টেমকে উজ্জীবিত করে প্রদাহের জন্ম দেবে । এই মাত্রাতিরিক্ত প্রদাহজাত বস্তুগুলো (inflammatory substances) হার্ট ডিজিজ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে । কারন আপনার মুটিয়ে যাওয়া, ইমিউন সিষ্টেমের টি-সেলগুলিকে নিস্তেজ করে ফেলবে ।
তাই আপনার জন্যে উপদেশ রইলো – অধিক ক্যালোরী ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খান । শরীরের জমে থাকা ক্যালোরী পুড়িয়ে ফেলুন । “স্লীম” হোন আর আপনার ইমিউন সিষ্টেমকে রাখুন অটুট ।
শব্দদুষন .......


আপনার পরিবেশ এখন চতুর্দিক থেকে উচ্চকিত । ঘরের ভেতরে ষ্টেরিও, মহল্লায় বিয়ে বাড়ী আর ওয়াজ মাহফিলের মাইক , মোড়ের সিডি’র দোকানের হাই ভলিয়্যুম ব্যান্ডের বাজনা, বাজারের পথে পথে হরেক কিসিমের কান ঝালাপালা মাইকের চিল্লাচিল্লি, যানবাহনের হর্ণ, এ্যাম্বুলেন্সের অযথা চীৎকার ; সব মিলিয়ে নরক গুলজার । শব্দ দুষন । যার উপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রন নেই ।
আপনার ইমিউন সিস্টেমের কানও ঝালাপালা এতে । ভয়ে সে ও সিটকে থাকে । আপনাকে প্রতিরক্ষার কাজটিতে তাই তার আগ্রহের ঘাটতি পড়ে । প্রতিরক্ষার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে সে। এন্টিবডির রেসপন্স কমে যায় । যা আপনাকে অসুস্থ করে তোলে ।
জাপানীজ গবেষকরা তাই বলছেন – আপনার জীবনের এই ভলিয়্যুম কমিয়ে আনুন, থাকুন শান্ত আর নিরাপদ ।

বিষন্নতা আর দুঃখবোধ .......


বিষন্নতা বা ডিপ্রশান এর স্বাদ পাননি এমন লোক পাওয়া ভার । দুঃখবোধে কাতর হননি এমন কেউ কোথাও নেই । জীবনে এদের দেখা হর-হামেশাই মেলে । এ কষ্টকে মানুষ কাটিয়ে ওঠে নিজের গরজেই । এই প্রলম্বিত বিষন্নতাও আপনার ইমিউন সিস্টেমকে নিস্তেজ করে দেয় । বিশেষ করে “ কিলার সেল” গুলোকে আপনার মতোই বিষন্নতায় ডুবিয়ে রাখে । এটা বেলজিয়াম এর একটি গবেষনা রিপোর্ট ।
যুক্তরাজ্যের য়্যুনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম এর এক গবেষনায় ও এমনটাই প্রমানিত হয়েছে যে, যে সব নারী সম্প্রতি প্রয়াত স্বামীর শোকে কাতর তাদের ইমিউন সিস্টেমের কিলার সেলগুলি খুব দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে । কয়েক সপ্তাহের ভেতর এই ডিপ্রেশানকে কাটিয়ে উঠতে না পারলে মানসিক ভাবে তারা যেমন বিদ্ধস্ত হতে পারেন তেমনি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে পারে আশংকাজনক হারে ।
তাই বিষন্নতাকে কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করুন । প্রলম্বিত করবেন না কিছুতেই । জীবনের ধারাকে পাল্টে নিন । জীবনে দুঃখ আর হতাশা তো থাকেই ! তাকে জয় করে জীবনটাকে জিতে নিন । জীবন যখোন আপনাকে কান্নার শতেক কারন দেখায়, তখোন জীবনকে হাযারো কারন দেখান যে, আপনি হাসতেও জানেন ।

“লোনলি হার্ট ক্লাব” এর সদস্য .......


একাকী থাকা যে কি কষ্টকর , তা বোধহয় আপনি জানেন । “লোনলি হার্ট ক্লাব” এর সদস্য হলে আপনি তা আরো ভালো বুঝবেন । একাকিত্ব যেমন আপনাকে বিমর্ষ করে তুলবে তেমনি আপনার ইমিউন সিস্টেমকেও নিস্তেজ করে রাখবে ।
পিটসবার্গ এর কার্ণেগী মেলন য়্যুনিভার্সিটির গবেষনায় দেখা গেছে , একাকী থাকা কলেজ ছাত্রদের ভেতর ফ্লু, সর্দিজ্বরের প্রকোপ বেশী । কারন, একাকী থাকার জন্যে তাদের হরমোনাল সিষ্টেমে যে পরিবর্তন হয়ে যায় তা শরীরের এন্টিবডি রেসপন্সকে দূর্বল করে তোলে । একই রকম কথা বলেছেন নিউইয়র্কের রচেষ্টার মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা । তারা বলছেন, শুধু কম বয়েসী ছাত্ররাই নয় ; একাকী থাকা অধিক বয়স্ক ছাত্রদের মাঝেও “ফ্লু ভ্যাকসিন” এর কোনও কার্যকরীতা পাওয়া যাচ্ছেনা ।
এখন আপনার কি উচিত হবে “লোনলি হার্ট ক্লাব” এর সদস্য হওয়া ?

পরিশেষ
মানুষের সাথে মিশুন । বন্ধু বাড়ান । হাসিখুশি থাকুন সবার মাঝে । জীবনটাতো আপনার-ই, তাইনা ? এই জীবনটা বড় সুন্দর । এখানে বাঁচুন নিজের মতো করে , রি-ফুয়েলিং করুন কাজের চাপে ঝিমিয়ে পড়া মনটাকে । পরিমিতি আনুন খাওয়ার অভ্যেসে, নিজের পরিবেশটাকে রাখুন শান্ত –সুন্দর । দেখবেন , হাযারো মানুষের ভীড়ে আর ট্রিলিয়নস অব মাইক্রোবসের মাঝেও আপনি সুস্থ শরীরে আলাদা প্রানরসে ভর-ভরন্ত হয়ে উঠছেন । সাথে পরীক্ষিত বন্ধুর মতো সব সময় হাত বাড়িয়ে রাখবে আপনার একান্ত আপন ইমিউন সিষ্টেমটি ..............

ছবি : ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার বাকস্বাধীনতা সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯



ছোটকালে ক্লাশে অপ্র‌য়োজনীয় কথা বলে, অকারণ অভিযোগ করে, অন্যকে কটু কথা বলে শিক্ষকের মার খেয়েছিলেন নাকি? আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ক্লাশে কিংবা সহপাঠিদের বিরক্তির কারণ হইনি; ইহার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিডলাইফ ক্রাইসিস: বাঁচতে হলে জানতেই হবে

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০



"ধুর ছাই!
কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
বা**, কী করলাম এতোদিন।
সব ফালতু।"


ক্যালেন্ডার কী বলছে? চল্লিশ পেরিয়েছে?

তাহলে দশটা মিনিট দিন। কারণ ব্যাপক সম্ভাবনা ৯৯% যে এই মুহূর্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া যদি ব্লগে আসত ! :D

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৩

কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দীর্ঘদিন এক মহিলা কাজ করেছেন । তারপর তার ছেলেদের অবস্থা একটু ভাল হয়ে গেলে আর তাকে কাজ করতে দেয় নি। তবে অভ্যাসের কারণে বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি ১১ বছর ১ সপ্তাহ

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২


গত কয়েকমাস যাবত চাকরিগত ঝামেলায় ব্লগে তেমন সময় দিতে পারিনি। দেশের পরিস্থিতির মতো আমার পরিস্থিতিও ছিল টালমাটাল। আগের চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি টিকিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলেছি। অফিসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×