somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী হওয়ার হ্যাপা বুঝতে ছোটনের একটি দিন.............

১১ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সবে শেষ হওয়া নারী দিবসকে উৎসর্গিত ।

প্রতিদিন কাজে যেতে যেতে হাঁপিয়ে গেছে আমাদের ছোটন । কাঁহাতক আর সকাল ৯টা ৫টা অফিস করা যায় দিনের পর দিন ? আর তার বউ ঘরে বসে বসে আরামসে তার বেতনের টাকা ইচ্ছেমতো উড়িয়ে উড়িয়ে আছে মহা সুখে । এমন ভাবনা ছোটন কে অসুস্হ্য বানিয়ে ছাড়ে । তার উপরে নারী দিবসে তার বউ শত শত “ উইমেন’স ডে উইশ “ পায় । বউয়ের এতো এতো সুখে যারপর নাই জেলাস হয়ে ওঠে ছোটন একদিন । এমনটা ছোটনের হওয়ারই কথা । তাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই , সব পুরুষেরই এমনটা হয় ! ঈর্ষায় , দুঃখে ছোটন সৃষ্টিকর্তার পায়ের কাছে সেজদায় পড়ে গেলো - “ হে ঈশ্বর ; আমি তোমার অধম বান্দা , সারাদিন ৮/৯ ঘন্টা গাধার খাটুনি খাটি আর আমার বউ ঘরেই থাকে মহা সুখে । সে জানেও না আমাকে কতো কষ্ট করতে হয় । হে শক্তিমান ; তুমি একদিনের জন্যে হলেও আমার বউয়ের শরীরটা আমার সাথে বদল করে দাও যাতে সে বোঝে পুরুষের কাজে কি কষ্ট ..... আমিন !”



ত্রিকাল সৃষ্টিকারী মহাজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা মুচকি হেসে ছোটনের এমন আবেদন কলমের এক খোঁচায় মঞ্জুর করে দিলেন । পরের দিন আমাদের ছোটন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে , সে তার বউয়ের শরীর পেয়ে গেছে । আর তার বউ ছোটন শরীর ।



ছোটন ছাড়তেই হলো বিছানা । ঘুম থেকে বাচ্চাদের তুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে ছোটনরূপী বউয়ের জন্যে নাস্তা রেডি করতে বসতে হলো তাকে ।


সব রেডি করে বাচ্চাদেরও নাস্তা খাইয়ে , তাদের স্কুল ড্রেস গুছিয়ে গাছিয়ে পরিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতে ছুটলো ছোটন ।



এর মাঝেই ঝটপট বাচ্চাদের টিফিনবক্স রেডী করে দিতেও ভুল হলোনা তার ।
ঘরে ফিরে তাকে ব্যস্ত থাকতে হলো খুঁজে খুঁজে ময়লা কাপড়-চোপড়গুলোকে একত্র করতে । এরপর স্ত্রীরূপী ছোটন বসলো কাপড় কাঁচতে ।



দড়িতে কাপড় ঝোলানো শেষ হলে রান্নাঘরে ঢুকলো সে । সবজী আর রান্নার কিছু জিনিষ ফুরিয়ে গেছে । আনতে হবে । ছোটন ছুটলো বাজারে । তার আগে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা তুলতে হবে ।



বাজার-টাজার শেষ হলে আবার রান্নাঘর । বাজারগুলো রান্নাঘরের তাকে উঠিয়ে তবে প্রথম পর্বের ঝামেলার পাট চুকলো ছোটনের ।


এখন বাসন-কোসনগুলো ধুঁতে হবে । এরপরে রান্না । ওহহো..ওওওও ..... ইলেকট্রিক বিল আর গ্যাসের বিলই তো দেয়া হয়নি ! ছোটন কে আবার ছুটতে হলো বিল পরিশোধ করতে ।



ঘরে ফিরতে ফিরতে ঘড়িতে বারোটা বেজে গেলো । কার বারোটা বাজলো সেই হুশ ছোটনের নেই । দম ফেলার সময় নেই তার । আরো কাজ পড়ে আছে । রান্না করতে হবে । পোষা কুকুর , বেড়ালটাকে সাফসুতেরো করে খাবার দিতে হবে ।



বিছানা ঠিক করতে হবে , ঘর ঝাঁট দিতে হবে । কাজ আর কাজ .....





পারলে সাহেবের খান কয়েক কাপড় ইস্ত্রি করে রাখতে হবে । তারপরে নিজের খাওয়া ।



বেলা ৩টে বেজে গেলো এসব করতে করতে । এবার বাচ্চাদের স্কুলে ছুটতে হবে ওদেরকে নিয়ে আসতে ।


আসার পথে বাচ্চাদের বায়নাক্কা সামলাও । তাদের এটা চাই , ওটা চাই । তাদের এ প্রশ্ন , সে প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে গলা শুকিয়ে গেলো ছোটনের ।
ঘরে এসে বাচ্চাদের কাপড় পাল্টে , তাদের জন্যে বৈকালিক কিছু একটা নাস্তা তৈরী করে দিলো সে । এরপর তাদের নিয়ে বসতে হলো হোমওয়র্ক করাতে ।



হোমওয়র্ক করানোর ফাঁকে ফাঁকে রাতের খাবারের প্রস্তুতি করতে আলু আর সবজি ছিলতে হলো তাকে । ফ্রিজ থেকে বের করে রাখলো একটা মুরগী । ডিফ্রস্টেড হলে কাঁটাকুটি করতে হবে ।



সাড়ে পাঁচটার দিকে কলিং বেল বাজলো । ছোটন (স্ত্রী ) সাহেব অফিস থেকে ফিরলেন ।
আমাদের আসল ছোটন ছুটলো তার চা -পানির ব্যবস্থা করতে । এর মধ্যেই ছোট বাচ্চাটা চীৎকার করে জানান দিলো , “মাম্মী, হোমওয়র্ক ডান” । ছোটনকে ছুটতে হলো সেখানে ও । হোমওয়র্ক চেক করে বইখাতা গুছিয়ে রাখলো । বড়টার তখনও হোমওয়র্ক শেষ হয়নি । ৩ নম্বর অনুশীলনের অংকগুলো পারছেনা সে ।
“কি করবি তাহলে ? তোর বাবার কাছে যা, দেখছিস না আমার কতো কাজ ! ” ছোটন একথা বলেই রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে এলো একবার ।
এর মধ্যেই বড়টার চীৎকার , “মাম্মী এদিক আসো ।"
ছোটনকে বসতে হলো ৩ নম্বর অনুশীলন নিয়ে । কারন বাচ্চার বাপ সারাদিন অফিস করে এসে এখন একটু টিভি খুলে টকশো দেখতে বসেছে , তাকে যেন কেউ ডিষ্টার্ব না করে ।
রান্নাঘর আর বাচ্চার পড়ার টেবিল করতে করতে রাত ৯টা । এর পর খাওয়ার পাট চুকিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে এটো বাসন-কোসন ধুঁয়ে মুছে গুছিয়ে রাখতে রাখতে ঘড়ির কাটা ১০ টা পার । হাবির সাথে বসে একটু আধটু রিলাক্স আর গল্প করবে বলে রিমোটটা হাতে নিয়ে চ্যানেল ঘুরিয়ে জিটিভি ধরতে না ধরতেই হাবির বাগড়া ----- উহুহুহুহু......... খেলা দেখছি , ডিষ্টার্ব করবেনা খবরদার একটুও ! আগে এককাপ চা করে দিয়ে ঘুমাতে যাও ।

উঠতে হলো ছোটনকে । চা বানিয়ে বেডরুমে গিয়ে বিছানায় বসতেই এতো ধকলের পরে গা ছেড়ে দিলো তার ।


মাঝরাতে হাবির আদরে ঘুম ভাঙলো ছোটনের । আধো ঘুম আধো জাগরণে হাবির আদর নামের অত্যাচারটাকে সারাদিনের ক্লান্তির পরে কোনও অভিযোগ ছাড়াই মেনে নিতে হলো তাকে ।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানার পাশে বসে সোজা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে মাথা ঠুকলো ছোটন , “হে ঈশ্বর ; আমার ৯টা ৫টাই ভালো । আমি বুঝিনি, মেয়েমানুষ হওয়ার কি হ্যাপা । একদিনে আমার আয়ু ৩ বচ্ছর কমে গেছে । আমাকে তুমি আগের মতো পুরুষ বানিয়ে দাও প্লিজ ..... প্লিজ ...... প্লিজ ............”



সর্বজান্তা , ভুত-ভবিষ্যতের মালিক ঈশ্বর হাসলেন , “ হে বৎস ; আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি । কিন্তু এখন তো আর তা সম্ভব নয় ছোটন মিয়া ! কাল রাতে যে তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েছো । আগামী ১০ মাসের আগে তোমাকে তো ছাড়া যাচ্ছেনা ...................... :P :) B:-)

স্বীকারোক্তি -
লেখাটি ব্লগে “সোহানী”র “পতিসেবার- একাল ও সেকাল.......... নারী দিবসের নারী ভাবনা “ পোস্টে আমার করা মন্তব্যের প্রতিউত্তরের জবাব । সোহানী লিখেছেন -
“ এরপর যখন সবাই উপলব্ধি করবে অধিকার নিয়ে ভাগাভাগির কিছু নেই, মেয়েরা শত্রু নয় বন্ধু..... ওদেরকে দমিয়ে রাখা মানে নিজের পায়েই কুড়াল মারা.............................. “
তাঁর এই কথাটির সূত্র ধরেই নারীদের দমিয়ে রাখা যে নিজের পায়েই কুড়াল মারা , নারী দিবসের গন্ধ শুকিয়ে যাবার আগেই পাবলিককে তা হাড়ে হাড়ে বোঝাতে এই পোস্টটির জন্ম ।

কৃতজ্ঞতা ----
সংকলিত , পরিমার্জিত এবং পরিবর্ধিত ।




সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭
৫৪টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×